শিরোনাম

যিনি কর্মকর্তা তিনিই ঠিকাদার

যিনি কর্মকর্তা তিনিই ঠিকাদার

নিউজ ডেস্ক: বাতিল করা স্লিপার হার্ডিঞ্জ সেতুতে লাগানোর কাজ দ্রুতগতিতে চলছে। এ নিয়ে কালের কণ্ঠে সচিত্র সংবাদ প্রকাশের পরও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কারণ এর সঙ্গে জড়িত পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী (এইএন) মো. আশরাফ উদ্দিন। তিনিই আবার এই কাজের ঠিকাদার।

উল্লেখ্য, গত ২৮ জানুয়ারি কালের কণ্ঠে ‘বাতিল স্লিপারই লাগছে হার্ডিঞ্জ ব্রিজে’ শিরোনামে একটি খবর প্রকাশিত হয়। যাতে উল্লেখ করা হয়—সেতুর ওপরে রেললাইনের জন্য চার হাজার ৮০০ পিস স্লিপারের প্রয়োজন। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় পাঁচ থেকে ছয় কোটি টাকা। অথচ বসানোর জন্য আনা স্লিপারগুলো ঘুণে খাওয়া। সংবাদ প্রকাশের পর স্লিপারগুলো দেখতে আসেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা। তাঁরা প্রকাশিত সংবাদের সত্যতা পান। তাঁরা নিম্নমানের স্লিপার না লাগানোর জন্য নির্দেশ দিয়ে যান। এরপর বেশ কিছুদিন স্লিপার না লাগিয়ে ফেলে রাখা হয়। গত সোমবার হার্ডিঞ্জ সেতুর ওপর গিয়ে রেললাইনে স্লিপার লাগানোর কাজ চলতে দেখা যায়।

রেলওয়ে পাকশী বিভাগের একাধিক সূত্র মতে, এশিয়া মহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রেল সেতু হার্ডিঞ্জ। রেললাইনে নষ্ট হয়ে ক্ষয়ে যাওয়া স্লিপার বদল করে নতুন স্লিপার লাগানোর জন্য রেলওয়ের চাহিদা ও ইজিপি দরপত্র ডাকা হয়। চট্টগ্রামের আর আর সিন্ডিকেট নামের একটি কম্পানির কাছ থেকে মেসার্স আর্টস বাংলাদেশের মাধ্যমে পাকশিতে স্লিপারগুলো আনা হয়। প্রকৌশলী আশরাফের ভাই নুর উদ্দিনের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান মেসার্স আর্টস বাংলাদেশ। এই কম্পানির মাধ্যমে সিলেটের বিভিন্ন এলাকা থেকে বেতনভুক্তিতে শ্রমিক এনে স্লিপার বসানো হচ্ছে। প্রকৌশলীর তত্ত্বাবধানেই এ কাজ হচ্ছে।

সূত্রগুলো আরো জানায়, রেলওয়ের চাহিদা ও ইজিবি দরপত্র মতে স্লিপারগুলো গর্জন কাঠের হতে হবে। কিন্তু যে স্লিপারগুলো বর্তমানে রেললাইনে লাগানো হচ্ছে সেগুলো হলো আফ্রিকার জঙ্গল থেকে আনা আজবি এবং এ দেশীয় আম, কদম, শিমুল, বনকাঁঠাল, ভিটুলি ও বটপাকুড়।

কয়েকজন ট্রেনচালক ও নিরাপত্তাকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, হার্ডিঞ্জ সেতুর ওপরের রেললাইনে ঘুণে ধরা নিম্নমানের স্লিপার লাগানোর জন্য তাঁরা আতঙ্কিত। কারণ এই লাইন দিয়ে ভারত থেকে ৩০ থেকে ৩৫টি বগিসংবলিত (বিএসসি) ভারতীয় মালগাড়ি পাথর, কয়লা, চাল, ভুট্টা এবং বিটিও (তেলবাহী) মালগাড়ি চলাচল করে। যার ওজন হয় কোটি কোটি টন। কিন্তু নিম্নমানের ও ঘুণে ধরা স্লিপার লাগানোর কারণে ওজন নিতে না পেরে সেগুলো ভেঙে গেলে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে।

সেতুর ওপরের রেললাইনে স্লিপার লাগানোর কাজে নিয়োজিত মিস্ত্রি রাসেল জানান, তাঁরা ২৬ জনের একটি দল সিলেট থেকে এসেছেন। তাঁদের সবাইকে আশরাফ উদ্দিন নিয়ে এসেছেন। তাঁরা আর্টস বাংলাদেশ কম্পানির মাসিক বেতনভুক্ত কর্মচারী। তবে স্লিপারগুলোর মান কেমন—তা তিনি জানাতে অপরাগতা প্রকাশ করেন।

এ বিষয়ে জানতে কয়েক দিন আগে পাকশী রেলওয়ে বিভাগীয় সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী (এইএন) মো. আশরাফ উদ্দিনের সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, স্লিপারগুলো নিম্নমানের নয়। তিনি স্লিপারগুলো লাগানোর জন্য জনবল আনার কথা স্বীকার করেন। তবে তিনি ঠিকাদার নন বলে দাবি করেন। আর রেলওয়ের বিভাগীয় প্রকৌশলী-২ (ডিইএন ২) এবং রেলওয়ের অন্য কর্মকর্তাদের দ্বারা বাতিল করা স্লিপারগুলো কেন আবার লাগানো হচ্ছে—তা জানাতে অপরাগতা প্রকাশ করেন।

রেলওয়ে পাকশী বিভাগীয় প্রকৌশলী ২ (ডিইএন-২) আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘কাঠ সম্পর্কে আমার তেমন কোনো ধারণা নেই। ঘুণে পোকা লাগায় কিছু স্লিপার বাতিল করা হয়েছে।’

সুত্র:কালের কন্ঠ, ১০ মার্চ, ২০১৯


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.