শিরোনাম

নামসর্বস্ব ডিপি রেলের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করছে রেলওয়ে

নামসর্বস্ব ডিপি রেলের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করছে রেলওয়ে

ইসমাইল আলী: ঢাকা থেকে পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করা হয় যুক্তরাজ্যের কোম্পানি ডিপি রেল (ঢাকা-পায়রা রেল লিমিটেড)। প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান জনবল মাত্র তিনজন, দুই বছর আগে যা ছিল ১১ জন। আর ডিপি রেলের পরিশোধিত মূলধন ১০০ পাউন্ড, দেশীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ১০ হাজার টাকা।

রেলপথ নির্মাণের কোনো অভিজ্ঞতা না থাকলেও ঢাকা-পায়রা বন্দর রেলপথ নির্মাণে ২০১৬ সালের ২০ ডিসেম্বর সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই করে ডিপি রেল। এর পর প্রায় দুই বছরে আর যোগাযোগ করেনি কোম্পানিটি। এর পরিপ্রেক্ষিতে নামসর্বস্ব ডিপি রেলের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করতে যাচ্ছে রেলওয়ে।

এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে গত ১৭ জানুয়ারি বাংলাদেশ রেলওয়েকে চিঠি দেয় রেলপথ মন্ত্রণালয়। এতে বলা হয়, ‘দ্য ডেভেলপমেন্ট অব এ ব্রডগেজ রেলওয়ে ট্র্যাক ফ্রম পায়রা পোর্ট টু দ্য ক্যাপিটাল সিটি ঢাকা’ শীর্ষক প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ে ও যুক্তরাজ্যের ডিপি রেল লিমিটেডের মধ্যে স্বাক্ষরিত এমওইউ’টি বাতিল করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
এর আগে গত ২৩ ডিসেম্বর এ বিষয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন চায় রেলওয়ে। তাতে বলা হয়, ২০১৬ সালের ২০ ডিসেম্বর ডিপি রেলের সঙ্গে এমওইউ’টি সই করা হয়। গত ১৯ জুন এমওইউ’টির মেয়াদ শেষ হয়েছে ও ১৮ মাস অতিক্রম করেছে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে এ সময়ের মধ্যে যোগাযোগ করা হয়নি।

রেলপথ মন্ত্রণালয়ের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে ডিপি রেল লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী বরাবর চিঠি ইস্যু করেছে রেলওয়ে। এতে বলা হয়েছে, এমওইউ’র মেয়াদ পেরিয়ে যাওয়ায় তার ভিত্তিতে আর কোনো পদক্ষেপ গৃহীত হবে না।
তথ্যমতে, ৭৫০ কোটি ডলার বা ৬০ হাজার কোটি টাকায় ঢাকা-পায়রা রেলপথ নির্মাণে আগ্রহী ছিল ডিপি রেল। এজন্য বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) আনার প্রস্তাব দিয়েছিল কোম্পানিটি। দেড় বছরের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বিস্তারিত প্রস্তাব জমা দেওয়ার কথা ছিল।
এমওইউ অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যের ডিপি রেল ঢাকা-পায়রা বন্দর রেলপথের নকশা প্রণয়ন, অর্থায়ন, নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্ব পালন করবে। আর এ কাজে সহযোগিতা করবে চায়না রেলওয়ে কন্সট্রাকশন করপোরেশন (সিআরসি)। ২০২৪ সাল নাগাদ প্রকল্পটির নির্মাণকাজ শেষ করা হবে। এতে ঢাকা-পায়রা বন্দর রেলপথের মাধ্যমে বছরে প্রায় ২০ লাখ ইউনিট কনটেইনার পরিবহন করা সম্ভব হবে। ৬০ বছরে বিনিয়োগ করা অর্থ তুলে নিয়ে যাবে কোম্পানিটি। এর পর রেলপথটি বাংলাদেশ রেলওয়ের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, এমওইউ সইয়ের সময় ঘটা করে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর বাণিজ্যবিষয়ক দূত রুশনারা আলীকে নিয়ে আসে কোম্পানিটি। এছাড়া বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার এলিসন ব্লেইকও অনুুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন। এমওইউ সইয়ের পরে দুই-একবার যোগাযোগ করেছিল কোম্পানিটি। তবে নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও বিস্তারিত প্রস্তাব জমা দেয়নি ডিপি রেল। আর গত দেড় বছরে বাংলাদেশ রেলওয়ের সঙ্গে কেউ যোগাযোগও করেনি।

যদিও ২০১৬ সালে ডিপি রেলের সঙ্গে এমওইউ স্বাক্ষরের পর ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে রেলওয়ে। সে সময় অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০১৩ সালের ১৯ ডিসেম্বর লন্ডনে কোম্পানিজ হাউজে লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধিত হয় ঢাকা-পায়রা রেল লিমিটেড (ডিপি রেল), যার নিবন্ধন নম্বর ০৮৮২০৯৭৩। কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের মূল্য দশমিক শূন্য এক পাউন্ড বা বাংলাদেশি মুদ্রায় এক টাকার সমান।
সূত্রমতে, ডিপি রেলের কোনো কর্মকাণ্ড নেই। এজন্য প্রতিষ্ঠানটিকে কার্যক্রমহীন বা ডরম্যান্ট কোম্পানি হিসেবে কয়েক দফা মূল্যায়ন করেছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক ক্রেডিট রেটিং প্রতিষ্ঠান এনডোলে।

এতে দেখা যায়, ২০১৫ সালে কোম্পানিটিতে মোট জনবল ছিল ১১ জনের। এর মধ্যে একজন ছিলেন কোম্পানি সচিব, বাকিরা সবাই পরিচালক। তাদের বেশিরভাগেরই নিয়োগ ২০১৬ সালের ২ এপ্রিল ও তার পরে। তবে ২০১৭ সালে সাত পরিচালক ও কোম্পানি সচিব পদত্যাগ করেন। বর্তমানে সক্রিয় পরিচালকদের মধ্যে আছেন টিম মিডোস স্মিথ, ইয়ান স্টুয়ার্ট ডার্বিশায়ার ও অ্যান্থনি জন গ্রুম। তবে তাদের কারোরই উল্লেখযোগ্য কোনো ব্যবসায়িক বা পেশাদারিত্বের প্রোফাইল নেই।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০১৬ সালের ডিসেম্বর শেষে কোম্পানিটির কোনো সম্পদ ছিল না। বরং দায়ের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩০ লাখ ৩১ হাজার পাউন্ড। আর সম্পদের পরিমাণ ১০০ পাউন্ড। এতে সম্পদ-দায় অনুপাত দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৩১ শতাংশ ঋণাত্মক। ২০১৭ সালে সাতবার ঠিকানা পরিবর্তনের পর বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির কোনো অফিস নেই। যোগাযোগের ঠিকানায় একটি পোস্টবক্স নম্বর দেওয়া আছে। এছাড়া কোনো ওয়েবসাইট, টেলিফোন নম্বর বা ইমেইল ঠিকানাও নেই। ২০১৬ সালের পর ক্রেডিট রেটিংয়ের জন্য কোনো তথ্য জমা দেয়নি ডিপি রেল।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে শেয়ার বিজকে বলেন, ডিপি রেলের সঙ্গে নন-বাইডিং এমওইউ করা হয়েছিল। তাই এটি বাস্তবায়নের জন্য কোনো ধরনের বাধ্যবাধকতা ছিল না। তারা আগ্রহ দেখানোয় এমওইউ করা হয়েছিল। দুই বছর পেরিয়ে গেলেও কোম্পানিটির পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয়নি। এজন্য এমওইউটি বাতিল করা হচ্ছে। তবে রেলওয়ে নিজস্ব উদ্যোগে ঢাকা থেকে পায়রা বন্দর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই করছে। শিগগিরই তা সম্পন্ন হবে। এর পর রেলপথটি নির্মাণে বিকল্প অর্থায়ন খোঁজা হবে।

সুত্র:শেয়ার বিজ, জানুয়ারি ২৫, ২০১৯


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.