শিরোনাম

চাহিদা না থাকলেও মিটারগেজ ওয়াগন কিনছে রেলওয়ে!

চাহিদা না থাকলেও মিটারগেজ ওয়াগন কিনছে রেলওয়ে!

ইসমাইল আলী: বর্তমানে পণ্যবাহী ট্রেনের বেশিরভাগই চলে পশ্চিমাঞ্চলে। এসব ট্রেনের প্রায় সবই ব্রডগেজ। এছাড়া করোনায় ভারত থেকে রেলপথে পণ্য আমদানি বেড়েছে। এজন্য দরকার হয় ব্রডগেজ ওয়াগন। আর রেলপথে পণ্য পরিবহনে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে পূর্বাঞ্চল। এর পরও পূর্বাঞ্চলে পণ্যবাহী ট্রেন চালাতে কেনা হচ্ছে ৫৮০টি মিটারগেজ ওয়াগন।

পণ্যবাহী এ মিটারগেজ ওয়াগনগুলো কেনায় ব্যয় করা হচ্ছে প্রায় ৩২০ কোটি টাকা। চীনের সিআরআরসি শ্যাংডং কোম্পানি লিমিটেড থেকে ওয়াগনগুলো কেনায় গত মঙ্গলবার চুক্তি সই করেছে রেলওয়ে। তবে চাহিদা না থাকায় এসব ওয়াগন বসিয়ে রাখতে হবে বলে মনে করছেন রেলওয়ে পরিবহন বিভাগ সংশ্লিষ্টরা। ফলে প্রকল্পের নামে অপচয় হবে বড় অঙ্কের অর্থ।

তথ্যমতে, বাংলাদেশ রেলওয়ের রোলিং স্টক অপারেশনস ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্টের (রোলিং স্টক প্রকিউরমেন্ট) আওতায় এসব ওয়াগন কেনা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে ৩৮৬টি কভারড ওয়াগন, ১৭৪টি খোলা ওয়াগন ও ২০টি বগি ব্রেক ভ্যান। নতুন মিটারগেজ ওয়াগনগুলো স্টেনলেস স্টিলের। এগুলো সর্বোচ্চ ৮০ কিলোমিটার গতিতে চলতে পারবে এবং সর্বোচ্চ ১৫ মেট্রিক টন পণ্য পরিবহন করতে পারবে।

ওয়াগনগুলোয় থাকছে এয়ার ব্রেক সিস্টেম। এগুলো কিনতে রেলের ব্যয় হবে শুল্ককর ব্যতীত তিন কোটি ৭৪ লাখ ডলার, বা প্রায় ৩২০ কোটি টাকা। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণে ওয়াগনগুলো কেনা হচ্ছে।

রেলের রোলিং স্টক বিভাগের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, নতুন ওয়াগন রেলের বহরে যুক্ত হলে পুরোনো মালবাহী ওয়াগনগুলো বাদ দেয়া হবে। এতে ট্রেনে মালবাহী পরিসেবা আরও উন্নত হবে। দেশের মিটারগেজ সেকশনে নতুন পণ্য ট্রেনে পরিচালনা করা যাবে।

যদিও রেলের পরিবহন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন ভিন্ন কথা। তাদের ভাষ্য, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর গত ছয় বছরে দেশে আর নতুন কোনো মিটারগেজ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়নি। এছাড়া পুরোনো মিটারগেজ রেলপথগুলোও পর্যায়ক্রমে ব্রডগেজ বা ডুয়েলগেজে রূপান্তর করা হবে। তাই ২০ বছর পর দেশে মিটারগেজ রেলপথ আর থাকবে না। এছাড়া পূর্বাঞ্চলে পণ্যবাহী ট্রেন খুবই কম চলাচল করে। মূলত কনটেইনারবাহী ট্রেন ও তেলবাহী ট্রেনই চলে ওই অঞ্চলে। সেজন্য পৃথক ধরনের ওয়াগন ও ট্যাংকার রয়েছে। তাই নতুন কেনা পণ্যবাহী ওয়াগন বেশিরভাগ সময়ই বসিয়ে রাখতে হবে। ফলে আদৌ প্রকল্পটি প্রয়োজন আছে কি নাÑতা খতিয়ে দেখা দরকার ছিল।

তথ্যমতে, চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) ৮০৮টি পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল করে। এগুলোয় ১৮ লাখ ৮৩ হাজার ৩৪৫ মেট্রিক টন পণ্য পরিবহন করা হয়, যার প্রায় পুরোটাই পশ্চিমাঞ্চলে। এছাড়া ম্যাংগো স্পেশাল ট্রেন, অক্সিজেন এক্সপ্রেস ট্রেন ও ভারত থেকে আমদানি পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল করে, যার সবই পশ্চিমাঞ্চলে। পূর্বাঞ্চলে কিছু পার্শ্বেল ট্রেন চলাচল করে, যার পরিমাণ খুবই কম। আর ঈদুল আজহার আগে কোরবানির পশু পরিবহনে একটি ক্যাটেল স্পেশাল ট্রেন পূর্বাঞ্চলে ও একটি পশ্চিমাঞ্চলে চলাচল করে। অর্থাৎ পূর্বাঞ্চলে পণ্যবাহী ট্রেনের কার্যক্রম খুবই সীমিত।

এদিকে বর্তমানে রেলের বহরে পণ্যবাহী ওয়াগন রয়েছে তিন হাজার ৮৩১টি। এর মধ্যে মিটারগেজ ওয়াগন রয়েছে দুই হাজার ৮৩৭টি। এছাড়া চার চাকার মিটারগেজ ওয়াগন রয়েছে পাঁচ হাজার ২৬০টি। চাহিদা না থাকায় এসব ওয়াগনই বেশিরভাগ সময় বসে থাকে। এর মধ্যে নতুন ওয়াগন কেনা হচ্ছে।

জানতে চাইলে মিটারগেজ ওয়াগন কেনা প্রকল্পের পরিচালক মো. মিজানুর রহমান বলেন, আগামী ২০২৩ সালের মার্চ-এপ্রিল থেকে এসব মিটারগেজ ওয়াগন আসা শুরু হবে। চুক্তি অনুযায়ী ১৮ মাসের মধ্যে ডেলিভারি দেয়ার কথা ওয়াগনগুলো। রেলওয়েতে এসব ওয়াগন যুক্ত হলে পণ্য পরিবহনের সক্ষমতা বাড়বে। একই সঙ্গে রেলপথে পণ্য পরিবহনের উন্নতি হলে ব্যবসায়ীরা সরাসরি উপকৃত হবেন। এটি সারাদেশে খাদ্যশস্য, সার, সিমেন্ট ও পাথর ইত্যাদি পরিবহনের সুবিধার্থে সহায়তা করবে।

যদিও রেলের একজন অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, এক দশক আগেও দেশের মোট আমদানি-রপ্তানি পণ্যের ১০ ভাগ রেলের মাধ্যমে পরিবহন করা হত। এখন তা পাঁচ শতাংশের নিচে নেমে গেছে। এর মূল কারণ বর্তমানে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত সড়কপথে পণ্য পরিবহনে সময় রেলপথের তুলনায় কম লাগে। এছাড়া যাত্রীবাহী ট্রেনকে অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে অনেক সময় পণ্যবাহী ট্রেন বসিয়ে রাখা হয়। তাই নতুন মিটারগেজ ওয়াগন কেনার প্রকল্প অর্থের অপচয় ছাড়া কিছুই নয়।

সূত্র:শেয়ার বিজ, ৩০ ডিসেম্বর ২০২১

About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.