শিরোনাম

খুলনা-কলকাতা রেল চালু হচ্ছে ৮ এপ্রিল

খুলনা-কলকাতা রেল চালু হচ্ছে ৮ এপ্রিল

আব্দুল্লাহ রায়হান:
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ ট্রেনে চড়ে কলকাতা বা ভারতের যেকোনো প্রান্তে ভ্রমণে যেতে পারবেন। যে ব্যবস্থাটি ছিল ৫২ বছর আগে। এজন্য আর মাত্র কয়েকটা দিন অপেক্ষা করতে হবে। খুলনা-কলকাতা রুটে দ্বিতীয় মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন চালু হচ্ছে আগামী ৮ এপ্রিল। আগামী ৭ থেকে ১০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় দ্বিতীয় মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন সার্ভিসটি আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী। রেলভবন সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।

সূত্রে জানা যায়, এ লক্ষ্যে বেনাপোল রেলস্টেশনে ইতিমধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ করা হয়েছে ইমিগ্রেশন, কাস্টমস ও নিরাপত্তা ব্যারাক। ছাউনি নির্মাণ ও যশোর থেকে বেনাপোল পর্যন্ত রেলপথ সংস্কারের কাজও প্রায় শেষের পথে।
যদিও জানুয়ারি মাসেই খুলনা-কলকাতা যাত্রীবাহী মৈত্রী-২ ট্রেন চলাচলের কথা ছিল। কিন্তু ভারত চাইছে, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় এটি চালু করতে। শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি যৌথভাবে নতুন এ রেলরুটটির উদ্বোধন করবেন- এমনটিই প্রত্যাশা প্রতিবেশী দেশটির। যেমনটি হয়েছিল গত বছরের জুনে নরেন্দ্র মোদি ঢাকা সফরে এলে। দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী কলকাতা-ঢাকা-আসাম এবং কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা সরাসরি বাস সার্ভিস চালু করে পিপল টু পিপল কানেকটিভিটি বাড়িয়েছেন।

সূত্র জানায়, ব্রিটিশ শাসন আমলে ১৮৮৪ সালে ঢাকাস্ট্রেট রেলওয়ে নামক কোম্পানির হাত ধরে খুলনা থেকে কলকাতার দমদম জংশন পর্যন্ত ট্রেন সার্ভিস শুরু হয়। ভারত বিভাগের জন্য ১৯৬৫ সালের পর এ সার্ভিস বন্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ ৫২ বছর পর ফের সচল হতে যাচ্ছে এই রুটটি। বহু কাক্সিক্ষত এই ট্রেন সার্ভিসটি চালু হলে যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ভারতে যাওয়া আসা নিয়ে যে দুর্ভোগ অনেকাংশে কমবে। সেই সঙ্গে স্বল্প সময়ে আরামদায়ক ভ্রমণ নিশ্চিত হবে বলে মনে করছেন পাসপোর্ট যাত্রীরা।

রেলওয়ে সূত্র জানায়, বর্তমানে খুলনা থেকে যশোর হয়ে বেনাপোল পর্যন্ত কমিউটার ট্রেন সার্ভিস চালু আছে। আর পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁ থেকে কলকাতা পর্যন্ত লোকাল ট্রেন কমিউটার চলাচল করে। বেনাপোল রেলস্টেশন থেকে বনগাঁ রেলস্টেশনের দূরত্ব মাত্র ৮ কিলোমিটার। কিন্তু ভারতীয় রেল কর্তৃপক্ষ জানায়, বনগাঁ-কলকাতা রুটে ভারতীয় ট্রেন চলাচলের সংখ্যা অনেক বেশি। এ ছাড়া এই রুটে নতুন করে ইমিগ্রেশন ও অন্যান্য পয়েন্ট স্থাপন করতে হবে। তাই এ রুটে নতুন ট্রেন চালুর বিষয়ে তাদের আগ্রহ কম ছিল। তবে দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর এই সমস্যার সমাধান হয়েছে বলে আশা প্রকাশ করেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা।

এ বিষয়ে রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক বলেন, খুলনা তথা দেশের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের সুবিধার্থে দ্বিতীয় মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আমাদের আহ্বানে ভারত রাজি হয়েছে। ট্রেনটি আপাতত সপ্তাহে ১ দিন চলাচল করবে। যেদিন আসবে তার পরের দিন ফিরে যাবে। প্রধানমন্ত্রীর ৭-১০ এপ্রিল ভারত সফরকালে এটির উদ্বোধন করা হবে। ট্রেনটি খুলনা-যশোর-বেনাপোল-পেট্রাপোল-বনগাঁ হয়ে কলকাতা গিয়ে পৌঁছবে। এর জন্য ভারত ভ্রমণার্থীদের অনেক সুবিধা হবে। এ ছাড়া আগামী ১ বৈশাখ থেকে মৈত্রী এক্সপ্রেস ট্রেন সম্পূর্ণ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে বলেও জানান রেলমন্ত্রী।
বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক-এডিজি (অপারেশন) মো. হাবিবুর রহমান বলেন, দুই দেশই দ্রুততার সঙ্গে সব প্রস্তুতি সেরে নিয়েছে। খুলনা-কলকাতা মৈত্রী-২ এক্সপ্রেসটি হবে সাত থেকে ১০ বগির। আমাদের বগি স্বল্পতার কারণে পুরো রেকটিই ভারতীয় রেলওয়ে সরবরাহ করবে।
হাবিবুর রহমান জানান, ভারত নিরাপত্তা বাড়াতে তাদের প্রান্তিক সীমান্ত হরিদাসপুর রেলস্টেশনের পুরো অংশটি কাঁটাতার দিয়ে ঘেরার কাজ করেছে। যেমনটি রয়েছে দর্শনার বিপরীতে গেদে রেলস্টেশনে।

কলকাতা স্টেশন থেকে উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বনগাঁওয়ের পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে খুলনা পর্যন্ত যাতায়াত করবে মৈত্রী-২ এক্সপ্রেস। যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের উপযুক্ত করে তুলতে যাবতীয় গ্রাউন্ড পর্যায়ের কাজও শেষ হয়েছে। এ রুট দিয়ে ১৮ বছর আগে থেকে দুই দেশের মধ্যে পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল করছে।

গত বছরের জুনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের যৌথ ঘোষণাপত্রেও এ নতুন মৈত্রী এক্সপ্রেসের বিষয়ে অন্তর্ভুক্ত ছিল। কলকাতা-খুলনা ১৫০ কিলোমিটার পাড়ি দিতে তিন ঘণ্টা সময় লাগবে। কিন্তু উভয় দেশের সীমান্তে ইমিগ্রেশন-কাস্টমস সারতে দু’ঘণ্টা সময় ব্যয় হবে।
তবে ৫২ বছর আগে কলকাতা-খুলনা রেল যাত্রীদের ইমিগ্রেশন-কাস্টমস সম্পন্ন করা হতো রেলের মধ্যেই। এটি অনুপস্থিত ঢাকা-কলকাতা মৈত্রী এক্সপ্রেসে। তখন বৃহত্তর ফরিদপুর ও বরিশাল বিভাগের মানুষ স্টিমারের টিকিটের সঙ্গে রেলেরও টিকিট কিনে খুলনা এসে ট্রেনে চড়ে কলকাতায় যেতেন। এ রেল যোগাযোগের পরিকাঠামো প্রায় ১০০ বছর আগের। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের কারণে কলকাতা-খুলনা রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়।

১৯৯৯ সালের শেষার্ধ্বে খুলনা ও কলকাতার মধ্যে রেলে পণ্য পরিবহন চুক্তি হয়। ওই বছর রেলে ট্রায়াল পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা দেখতে বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্তে উপস্থিত ছিলেন ত?ৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু এবং ভারতের রেলমন্ত্রী (বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী) মমতা ব্যানার্জি।

গত বছরের ২৫ থেকে ২৭ মে পর্যন্ত দুই দেশের রেলওয়ের কর্মকর্তারা দিল্লিতে খুলনা-কলকাতা মৈত্রী ট্রেন চালু নিয়ে আলোচনা করেন। অবশ্য ঢাকা-কলকাতা মৈত্রী আশাতীত লাভের মুখ দেখায় দু’পক্ষকে পুরনো রুটটি চালু করতে উদ্বুদ্ধ করে।

যানজট ও বাসের অত্যাধিক ভাড়ার কারণে ইদানিং ফরিদপুর, বরিশাল অঞ্চল, খুলনা এমনকি যশোরের মানুষও ট্রেনে চড়ে বেনাপোলে নেমে কলকাতাসহ ভারতের অন্যান্য স্থানে যাচ্ছেন। হরিদাসপুর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে বনগাঁও রেলস্টেশন। দুই দেশের অধিকাংশ যাত্রী কলকাতা যেতে বনগাঁও থেকে ট্রেনে চাপেন। ট্রেনের ভাড়া ২০ রুপি। খুলনা থেকে বাসে যেখানে ৪-৫ ঘণ্টার আগে কলকাতা পৌঁছানো যায় না। সেখানে ট্রেনে তিন ঘণ্টারও কম সময়ে কলকাতা যাওয়া যায়।

সুত্র:১ এপ্রিল২০১৭,মানব কন্ঠ


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.