এনামুল হক:
খুলনার পুরোনো রেল স্টেশনে রেলওয়ের একটি নতুন ডিভিশন চালুর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। অনুমোদন ও প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেলে আগামী অর্থবছরের শুরুতেই নতুন এই ডিভিশন চালুর কাজ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। রেল কর্তৃপক্ষ বলছেন, খুলনা-মোংলা রেললাইন নির্মাণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বেশ কয়েকটি নতুন রেললাইন চালুসহ রেলপথের গুরুত্ব বৃদ্ধি পাওয়ায় এই নতুন ডিভিশন নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ১৪ মাস আগে নতুন রেল স্টেশন চালু হলে খুলনার পৌঁনে দুশো বছরের প্রাচীন পুরাতন রেল স্টেশনটি পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৮৩৫ সালে খুলনায় রেল স্টেশন নির্মাণ করা হয়। সেই থেকে শুরু খুলনা রেল স্টেশনের কার্যক্রম। তখন খুলনা থেকে কলকাতার শিয়ালদহ পর্যন্ত রেল চলাচল করত। প্রথম থেকেই ট্রেনে জনসাধারণের যাতায়াতের সঙ্গে ব্যবসায়িক পণ্য ও অন্যান্য মালপত্র পরিবহন করা হতো। মূলত মানুষের যাতায়াত ও মালপত্র আনা-নেওয়ার সুবিধা বিবেচনা করে খুলনার বড়োবাজার, ভৈরব নদীর স্টিমার ও লঞ্চঘাট এবং ফেরিঘাটের বাস টার্মিনালের কিছুটা দূরে খুলনা রেল স্টেশন নির্মাণ করা হয়। এ স্টেশনে প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা প্রায় সবই ছিল। তবে বড়ো অসুবিধা ছিল নিচু প্ল্যাটফরম নিয়ে। যাত্রীদের ওঠা-নামায় সেটা ছিল বিপদের কারণ। তাছাড়া প্ল্যাটফরমের সংখ্যাও ছিল কম; মাত্র তিনটি। খুলনা স্টেশন থেকে প্রতিদিন যাত্রীবাহী ৬টি আন্তঃনগর ট্রেন, একটি লোকাল ট্রেন, দুইটি মেইল ট্রেন ও দুইটি কমিউটার ট্রেন এবং সপ্তাহে একদিন একটি ভারতীয় ট্রেন চলাচল করত। ফলে তিনটি প্ল্যাটফরম নিয়ে অসুবিধা লেগেই ছিল। প্রায়ই প্ল্যাটফরমের সংকটে এমনকি আন্তঃনগর ট্রেনকে স্টেশনের বাইরে অনেকক্ষণ দাঁড় করিয়ে রাখতে হতো। এজন্য আধুনিকমানের নতুন স্টেশন নির্মাণের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। খুলনা রেলস্টেশনের জমির পরিমাণ ২২৭ একর। এর বাইরে আরো ১৩০ একর জমি রয়েছে রেলওয়ের। ফলে পুরানো স্টেশনের দক্ষিণ পাশে আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সংবলিত নতুন রেল স্টেশন নির্মাণ করা হয়। ২০১৮ সালের ২৫ নভেম্বর থেকে সেখানেই কাজকর্ম চলছে। নতুন রেল স্টেশন চালু হওয়ার পর পুরাতন স্টেশনটি বিরাণ হয়ে পড়েছে। এখানে মানুষের চলাফেরা নেই বললেই চলে। পুরাতন স্টেশনের মূল ভবন, টিকিট ইস্যুর ভবন এবং জিআরপি থানার ভবন মিলিয়ে ছিল পুরাতন স্টেশন। সেখানে স্টেশন মাস্টারের কক্ষটিসহ সকল কক্ষ এবং টিকিট ইস্যুর ভবন পর্যন্ত তালাবদ্ধ অবস্থায় পড়ে আছে। শুধু জিআরপি থানায় এখনো লোকজনের চলাচল নজরে পড়ে। দিনের বেলা জায়গাটি গোচারণ এবং কুকুরদের বিশ্রামের জায়গা হয়ে পড়েছে। আর রাতের বেলা এটি নিশাচরদের নিরাপদ বিচরণক্ষেত্র। তবে গুডস স্টোর নামের বড়ো কক্ষটি দিনে খোলা থাকে। সেখানে লোকজনের আনাগোনা নেই বললেই চলে। দুই-একজন কুলি সেখানে বিশ্রামের জন্য আসেন।
খুলনা স্টেশনের সূত্রানুযায়ী, খুলনা রেল স্টেশন থেকে চলাচলকারী আন্তঃনগর ট্রেন সীমান্ত, রূপসা, কপোতাক্ষ, সাগরদাঁড়ি, সুন্দরবন ও চিত্রা এবং খুলনা ও বেনাপোল কমিউটার ট্রেনে মাসে গড়ে ৯২ সহস্রাধিক মানুষ যাতায়াত করেন। লিজে দেওয়া লোকাল মহানন্দা এবং রকেট ও নকশিকাঁথা মেইল ট্রেনে প্রতি মাসে আরো গড়ে ৩০ হাজারের মতো মানুষ যাতায়াত করেন। ট্রেনগুলো রেলওয়ের ২৪ ঘণ্টার সময় ধরে চলাচল করে। ফলে খুলনা রেল স্টেশন ২৪ ঘণ্টাই জেগে থাকে। বিপুল পরিমাণ মানুষের সমাগম হয় শুধুই নতুন স্টেশনে। এখন যাত্রীদের আনাগোনা আর কুলিদের হাঁক-ডাক নেই পুরাতন স্টেশনটিতে। তবে নতুন স্টেশনে মালামাল পরিবহনের ব্যবস্থা নেই। ফলে মাঝে-মধ্যে মালবাহী গাড়ি দুই-একটা আসলে রেল কর্তৃপক্ষকে পুরানো স্টেশন ব্যবহার করতে হয়।
এদিকে, পরিত্যক্ত রেলস্টেশনে রেলওয়ের একটি নতুন ডিভিশন চালুর পরিকল্পনা নিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। অনুমোদন ও প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেলে আগামী অর্থবছরের শুরুতেই নতুন এই ডিভিশন চালুর কাজ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
খুলনা রেল স্টেশনের মাস্টার মাণিকচন্দ্র সরকার বলেন, পুরাতন রেল স্টেশনটি একেবারে পরিত্যক্ত হয়নি। এখনো অনেক কাজ সেখানে করতে হয়। তাছাড়া রেলের সিকিউরিটির লোকজন সেখানে সবসময় থাকে।
তিনি বলেন, পুরানো স্টেশনে রেলওয়ের ডিভিশনাল অফিস স্থাপনের পরিকল্পনা রয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের। আগামী বাজেটে প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেলে অর্থবছরের শুরুতেই নতুন ডিভিশন চালুর কাজ শুরু হতে পারে।
এ ব্যাপারে পাকশী পশ্চিম বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার (ডি আর এম) আসাদুল হক বলেন, খুলনা-মোংলা রেললাইন নির্মাণ কার্যক্রম ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বেশ কয়েকটি নতুন রেললাইন চালুসহ রেলপথের গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে খুলনা রেলওয়ের নতুন একটি ডিভিশন করার পরিকল্পনা রয়েছে। ইতিমধ্যে খুলনায় নতুন ডিভিশন চালুর ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সদিচ্ছাও ব্যক্ত করেছেন। বর্তমানে এই ডিভিশন নির্মাণের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তবে, এখনো এটি চূড়ান্ত হয়নি।
সুত্র:ইত্তেফাক, ০৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২০