শিরোনাম

ট্রেনের ছাদে ভ্রমণের আত্মঘাতী প্রবণতা

ট্রেনের ছাদে ভ্রমণের আত্মঘাতী প্রবণতা

ভোর ৪টা ৫৭ মিনিট, শুক্রবার। ঢাকা হইতে ছাড়িয়া আসা খুলনাগামী চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেনটি হার্ডিঞ্জ ব্রিজ পার হইল। পাঁচটা ২০ মিনিটে ট্রেনটি ভেড়ামারা স্টেশনে পৌঁছাইলে ‘জ’ বগির একযাত্রী দেখিতে পান ভয়ঙ্কর একটি দৃশ্য—ট্রেনের ছাদ হইতে রক্ত চুঁয়াইয়া নীচে পড়িতেছে!

টানা ৩ দিনের ছুটি থাকিবার কারণে রাজধানী হইতে বাড়ি যাইতেছিলেন অসংখ্য মানুষ। খুলনাগামী চিত্রা এক্সপ্রেসের ভেতরেও তিল ধারণের ঠাঁই ছিল না এইদিন। টিকিট না মেলায় এবং বগিতে জায়গা না থাকিবার দরুন মধ্য-ডিসেম্বরের শীতের মধ্যেও অনেকে ট্রেনের ছাদে ওঠেন। শেষরাতে ট্রেনটি হার্ডিঞ্জ ব্রিজে উঠিলে ছাদে থাকা যাত্রীদের সঙ্গে ধাক্কা লাগে ব্রিজের শেডের। একে-একে নিচে পড়িতে থাকেন তাহারা। কেহ পদ্মা নদীতে, কেহ পদ্মার চরে পড়িয়া যান। কেহ ঝুলিতে থাকেন ব্রিজের ওপরে। ভেড়ামারা স্টেশনে ট্রেনটি পৌঁছাইলে দেখা যায়, ছাদে পাঁচজন যাত্রী রক্তাক্ত অবস্থায় গড়াগড়ি করিতেছে। তাহাদের উদ্ধার করিয়া নিকটস্থ হাসপাতালে নেওয়া হয়। নদীর চর হইতে উদ্ধার করা হয় তিনজন যাত্রীকে, হাসপাতালে নেওয়ার পর তাহাদের দুইজনকে মৃত ঘোষণা করেন চিকিত্সক। হতাহত যাত্রীদের সবারই ব্রিজের শেডের সঙ্গে তাহাদের মাথায় আঘাত লাগিয়াছে। এই দুর্ঘটনার কারণ তদন্তে ৫ সদস্যের কমিটি গঠন করা হইয়াছে বটে। তবে কে না জানেন যে, ছাদে চড়িয়া রেলভ্রমণের নিয়ম নাই? রেলওয়ে আইনের ১১৩ ধারা অনুযায়ী ট্রেনের ইঞ্জিন ও ছাদে ভ্রমণ দণ্ডনীয় অপরাধ। কিছুদিন পূর্বে নওগাঁর রাণীনগর রেলওয়ে স্টেশনের নিচু ওভারব্রিজের সহিত ধাক্কা লাগিয়া চারজনের মৃত্যু হয়। জানা যায় যে, ট্রেনের ছাদ হইতে যাহারা পড়িয়া গিয়া কিংবা আঘাত পাইয়া মারা যান, সেই মৃত্যুগুলি ট্রেন দুর্ঘটনার তালিকায় থাকে না। এইসব ঘটনা অপমৃত্যু হিসাবে রেকর্ড করা হয়। ফলে সারাদেশে ট্রেনের ছাদে ভ্রমণের সময় প্রতি বত্সর কত সংখ্যক যাত্রী প্রাণ হারান, তাহার সঠিক তথ্য জানা কঠিন। ঢাকা হইতে ছাড়িয়া যাওয়া লোকাল ট্রেনের ছাদে চড়িয়া অনেকে দৌড়াদৌড়ির কসরত করেন। শাহরুখ খানের ছাইয়া ছাইয়া গানের দৃশ্যের মতো সিনেমাটিক দৃশ্য ঢাকার লোকাল ট্রেনগুলির ছাদে নিত্যদিন দেখা যায়। এই মৃত্যুখেলাও অনেক সময় দুর্ঘটনার কারণ ঘটায়। এইসব ক্ষেত্রে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ও পুলিশের নজরদারি আরো কঠোর করিতে হইবে। গ্রহণ করিতে হইবে স্টেশনে স্টেশনে জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি।

প্রকৃতপক্ষে সাধারণ মানুষের মধ্যে খুব বিপজ্জনক একটি ধারণা তৈরি হইয়াছে যে, রেললাইন এবং মানুষের জীবন সহাবস্থান করিতে পারে, ট্রেনের ছাদে বিনাভাড়ায় কিংবা নামমাত্র টাকায় ভ্রমণ করা যাইতে পারে। এই মানসিকতারও পরিবর্তন ঘটাইতে হইবে। এইজন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা ও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।

সুত্র:ইত্তেফাক, ১৭ ডিসেম্বর, ২০১৮


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.