শিরোনাম

ত্রুটিপূর্ণ পরিকল্পনায় নির্মাণ শুরুর আগেই বাড়ছে ব্যয়

ত্রুটিপূর্ণ পরিকল্পনায় নির্মাণ শুরুর আগেই বাড়ছে ব্যয়

ইসমাইল আলী:
ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন হয় ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে। বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন শেষে গত বছর জুনে রেলপথটি নির্মাণে ঠিকাদার নিয়োগ করা হয়। তবে নির্মাণ শুরুর আগেই এর পরিকল্পনায় ত্রুটি ধরা পড়ে। এতে প্রকল্পটি সংশোধন করতে হচ্ছে। ফলে ব্যয় বাড়াতে হচ্ছে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথ নির্মাণে।
এদিকে রেলপথটি নির্মাণে প্রয়োজনীয় জমি এখনও দখলমুক্ত করতে পারেনি রেলওয়ে। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ডাবল লাইন নির্মাণে সংস্থাটির নিজস্ব জমি ইজারা দিলেও এখন তা ছাড়তে রাজি নয় ইজারাগ্রহীতারা। উল্টো তা দখলমুক্ত করতে গিয়ে আইনি বাধার মুখে পড়েছে রেলওয়ে। এতে ঠিকাদারকে প্রয়োজনীয় জমি বুঝিয়ে দেওয়া যায়নি। আবার নতুন করে জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। ফলে এখনও মূল রেলপথ নির্মাণকাজ শুরুই হয়নি। এতে এক দফা বাড়ানোর পরও বর্ধিত সময়ে নির্মাণকাজ শেষ হচ্ছে না।

তথ্যমতে, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথকে ডাবল লাইনে উন্নীত করতে রাজধানীর গেণ্ডারিয়া থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত বিদ্যমান মিটারগেজ রেললাইনের সমান্তরালে ডুয়েলগেজ দ্বিতীয় লাইন নির্মাণ করা হবে। এজন্য ২০১৭ সালের ২০ জুন চায়না ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান পাওয়ার কনস্ট্রাকশন করপোরেশন লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করে রেলওয়ে। প্রকল্পটির আওতায় ১২ দশমিক ১০ কিলোমিটার মেইন লাইন ও পাঁচ দশমিক ১০ কিলোমিটার লুপ লাইন নির্মাণ করা হবে। রেলপথটি নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৩৭৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা।

রেলপথ ছাড়াও ১১টি সেতু ও কালভার্ট, দুটি ওয়াশপিট, একটি অফিস কাম স্টেশন বিল্ডিং, পাঁচটি স্টেশন ভবন ও প্ল্যাটফরম শেড, চারটি ফুট ওভারব্রিজ, ১৮ হাজার ৯৫০ মিটার বাউন্ডারি ওয়াল, ১২টি লেভেল ক্রসিং গেট, তিন হাজার ৩০০ মিটার ফ্যান্সিং, ৯ হাজার ৫০৭ বর্গমিটার সংযোগ সড়ক এবং তিন হাজার মিটার ড্রেন নির্মাণ করা হবে। প্রাথমিকভাবে ২০১৭ সালের জুনে প্রকল্পটির কাজ শেষ হওয়ার ছিল। পরে তা বাড়িয়ে ২০১৯ সালের জুনে নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এখনও মূল রেলপথ নির্মাণকাজ শুরুই হয়নি।

সম্প্রতি প্রকল্পটির স্টিয়ারিং কমিটির (পিএসসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। এতে জানানো হয়, প্রাথমিকভাবে কাজ শুরুর আগে অনেক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে হয় বিধায় বাস্তব কাজ শুরু হয়েছে চলতি বছরের জানুয়ারিতে। এখনও অনেক অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ কার্যক্রম চলমান আছে। এদিকে নারায়ণগঞ্জ স্টেশন এলাকায় জমি ইজারাগ্রহীতারা হাইকোর্টে ১৩টি রিট মামলা করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে উচ্চ আদালত থেকে স্থগিতাদেশ জারি করা হয়েছে। আইনজীবীর মাধ্যমে তা প্রত্যাহারে কাজ করে যাচ্ছে রেলওয়ে।

এদিকে ১৮৮২ সালে অধিগ্রহণকৃত জমির নথিপত্র নেই রেলওয়ের কাছে। ফলে ভূমির মালিকানা নিজেদের দাবি করতে পারছে না সংস্থাটি। এতে বিদ্যমান লাইনের পাশে ডুয়েলগেজ লাইন নির্মাণ সম্ভব নয়। এজন্য লেভেল ক্রসিং গেট নং টি-১ ও টি-২-এর মাঝে ৫০০ মিটার দৈর্ঘ্যে রেলওয়ের নামে সাত-আট ফুট জায়গা রয়েছে। সেখানে ডুয়েলগেজ লাইন নির্মাণ অসম্ভব। এক্ষেত্রে নতুন করে জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। যদিও প্রকল্পে জমি অধিগ্রহণ খাতে কোনো ব্যয় ধরা হয়নি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ডাবল লাইন নির্মাণে দশমিক ৭০ একর জমি দরকার। এজন্য আনুমানিক ১১৫ কোটি টাকা প্রয়োজন। আর স্থাপনা অপসারণে ক্ষতিপূরণ বাবদ আরও ৫০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। তবে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনায় (ডিপিপি) না থাকায় এ অর্থ ব্যয় করা যাচ্ছে না। এজন্য ডিপিপি সংশোধন করতে হবে।

সভায় আরও জানানো হয়, গেণ্ডারিয়া থেকে চাষাঢ়া পর্যন্ত রেললাইনের উভয় পাশে বিভিন্ন ধরনের স্থাপনার ফলে জিওটেকনিক্যাল সার্ভের সময় এলাকার মাটির বাস্তব অবস্থা নিরূপণ করা যায়নি। এতে রেলপথ নির্মাণে মাটি ভরাট করতে গিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হয়। মাটির ওপরের দিকে সামান্য মাটি ভালো থাকলেও বেশ গভীর পর্যন্ত পলিথিন ও স্পয়েল্ড সয়েল (নরম মাটি) রয়েছে। এসব পলিথিন ও নরম মাটি অপসারণ না করে অ্যামবেঙ্কম্যান্ট (বাঁধ) নির্মাণ করা যাবে না। তাই মাটির নিচের পলিথিন ও স্পয়েল্ড সয়েল অপসারণ, অ্যামবেঙ্কম্যান্ট ভরাটে ব্যয় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে যাবে।

এর বাইরে সেতু নির্মাণকালে পাইলিং সম্পন্ন হওয়ার পর এর হেড ভেঙে পাইল ক্যাপ নির্মাণের সময় বিদ্যমান রেলপথটির প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা স্থাপন করা প্রয়োজন হবে, যা চুক্তিমূল্যে নেই। এক্ষেত্রে বাড়তি অর্থ ব্যয় হবে। এছাড়া চাষাঢ়া-ফতুল্লা সেকশনে অবস্থিত জলাশয় সংলগ্ন স্থানে অ্যামবেঙ্কম্যান্ট নির্মাণকালে প্রটেকশনসহ ডাইক নির্মাণপূর্বক পানি নিষ্কাশন করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রেও বাড়তি ব্যয় গুনতে হবে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক কাজী মো. রফিকুল আলম শেয়ার বিজকে বলেন, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথ ডাবল লাইন নির্মাণে নতুন কিছু বিষয় যুক্ত হয়েছে। প্রাথমিকভাবে প্রকল্প পরিকল্পনায় বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত ছিল না। এছাড়া নতুন করে কিছু জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। এক্ষেত্রে কোনো অর্থই রাখা হয়নি। এজন্য প্রকল্পটি সংশোধনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সুত্র:শেয়ার বিজ,নভেম্বর ৬, ২০১৮


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.