শিরোনাম

পার্বতীপুর রেল জংশনকে বিশ্বমানে উন্নীত করার প্রচেষ্টা চলছে: রেলমন্ত্রী


।। রেল নিউজ ।।
দিনাজপুরের পার্বতীপুর রেলওয়ে জংশনকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করার প্রচেষ্টা চলছে বলে জানিয়ছেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন।

তিনি বলেন, দীর্ঘদিন অচল পড়ে থাকা ডেমু ট্রেনটি দেশীয় নতুন প্রযুক্তিতে চালু করা হয়েছে। মেরামত হওয়া ডেমু ট্রেনের লোড, গতি, পরিচালনা সবকিছুই ঠিকঠাক থাকলে আগামীতে আরো অবশিষ্ট ১৪টি ডেমু ট্রেন চালু করা হবে।

রবিবার দিনাজপুরের পার্বতীপুর রেল স্টেশন জংশনে দেশীয় প্রযুক্তিতে সচলকৃত ডেমু ট্রেনের পাবর্তীপুর-রংপুর রুটে বাণিজ্যিকভাবে চলাচল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেছেন।

রেলওয়ের পশ্চিম মহাব্যবস্থাপক অসীম কুমার তালুকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান ফিজার এমপি, রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মঞ্জুর-উল-আলম চৌধুরীসহ রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বক্তব্য রাখেন।

রেলমন্ত্রী বলেন, রেল যোগাযোগ ব্যবস্থাকে বিশ্বমানের করার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।এতে সর্বপ্রথম যাত্রী সেবার মান বাড়ানোসহ রেলপথের উন্নয়নের ওপর গুরুরত্ব দেওয়া হয়েছে। রেলের সব বিভাগে লোকবলের ঘাটতি শিগগিরই পূরণ করা হবে।সারাদেশের রেলপথের স্টেশনগুলো পর্যায়ক্রমে উন্নয়ন করা হবে। দেশের অন্যতম বৃহত্তম রেল জংশন পার্বতীপুর রেল স্টেশনকে আন্তর্জাতিক মানের পর্যায়ে উন্নীত করা হবে।

এ সময় বাংলাদেশ রেলওয়ে রাজশাহীর সহকারী চিফ অপারেটিং সুপার (পশ্চিম) মো. আব্দুল আউয়াল জানিয়েছে, চীনের প্রযুক্তি বাদ দিয়ে নিজস্ব প্রযুক্তি ব্যবহার করে দিনাজপুরের পার্বতীপুর ডিজেল ওয়ার্কশপে অকেজো ডেমু ট্রেন সচল করার সাফল্যে দেশের প্রকৌশলীরা প্রশংসিত হয়েছেন।

২০১৩ সালে সাড়ে ৬০০ কোটি টাকা খরচ করে বাংলাদেশ আমদানি করে ২০ সেট চীনা ডেমু ট্রেন। চীনের তানসন ইন্টারন্যাশনাল ও ডানিয়াল টেকনিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তৈরি ওই ডেমু ট্রেন কাছাকাছি দূরত্বে বেশি যাত্রী পরিবহনের সুবিধার্থে আমদানি করে সরকার। পরবর্তীতে ২০২০ সালে সেগুলো ধীরে ধীরে নষ্ট হয়ে পড়ে। একটি ডেমু ট্রেন চালাতে ৪০টি মডিউলের প্রয়োজন হয়। যার মূল্য প্রায় ৭ লাখ টাকা।

ট্রেনগুলো পরিচালনার মডিউল বা সফ্টওয়্যার না থাকায় সেগুলো সচল করার কোনো উপায় ছিল না। চীনা প্রকৌশলীরা তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থে সেগুলো হস্তান্তর করেননি। এরপর শুরু হয় দেশীয় প্রকৌশলীদের প্রাণাবন্তকর প্রচেষ্টা। অবশেষে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী ও আণবিক শক্তি কমিশনের সাবেক কর্মকর্তা প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামান মাত্র ৭২ দিনে দেশীয় প্রযুক্তি উদ্ভাবন করে ট্রেন সচল করতে সফল হন। ব্যয়বহুল মডিউলের পরিবর্তে বসানো হয় মাত্র দু’টি কন্ট্রোলার। আর তার উদ্ভাবিত এই কন্টোলার দিয়েই বাংলাদেশ রেলওয়ে ধীরে ধীরে চালু করে ডেমু ট্রেনগুলো। এর মধ্য দিয়ে যেমন ট্রেনগুলো সচল হয়, তেমনি সরকারি ব্যয়ও অনেকটা সাশ্রয় হয়।

বাংলাদেশ রেলওয়ে (পশ্চিম) জোনের সিডিউল মোতাবেক আর রোববার থেকে পার্বতীপুর-রংপুর রুটে একটি ডেমু ট্রেন চলাচল শুরু হয়েছে। সময়সূচি অনুযায়ী, প্রতিদিন বিকাল ৫:১৫টায় পার্বতীপুর থেকে ছেড়ে যাবে এবং সন্ধ্যা ৬:১০টায় রংপুরে পৌঁছাবে। আবার সন্ধ্যা ৬:২০টায় রংপুর থেকে ছেড়ে সন্ধ্যা ৭:২০টায় পার্বতীপুরে পৌঁছাবে। পরবর্তীতে এর রুট আরও সম্প্রসারিত হবে।

প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান জানান, তারা চার জন প্রকৌশলী দেড় বছরের গবেষণা ও চেষ্টায় চীনা প্রযুক্তিকে বাদ দিয়ে দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহার করে আজকের ডেমু ট্রেনকে সচল করতে সক্ষম হয়েছেন। ইতোমধ্যেই এই ট্রেনের যাত্রীসহ সফল ট্রায়াল হয়েছে।

গত ৪ঠা সেপ্টেম্বর বিকাল ৩টায় দিনাজপুরের পার্বতীপুর রেলওয়ে জংশন থেকে ট্রায়াল রানে কিছুসংখ্যক যাত্রী নিয়ে পঞ্চগড়ের বীর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজুল ইসলাম রেলওয়ে স্টেশনের উদ্দেশে ছেড়ে যায়। পরে সেখান থেকে আবার পার্বতীপুরে ঘুরে আসে।

পাবর্তীপুর লোকো ইয়ার্ডের কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, মেরামত হওয়া ডেমু ট্রেনের ট্রায়ালে লোড, গতি, পরিচালনা সবকিছুই ঠিকঠাক রয়েছে। রেলে যুক্ত হওয়ার পর আগামী ৪-৫ মাস অবজারভেশন শেষে সবকিছু ঠিক থাকলে বাকি অচল ডেমু ট্রেনগুলোও সচল করা হবে নিজস্ব প্রযুক্তির মাধ্যমে।

সূত্রঃ ঢাকাটাইমস


Comments are closed.