শিরোনাম

রেলওয়ের দেড়শ’ কোটি টাকার সম্পত্তি বেহাত

রেলওয়ের দেড়শ' কোটি টাকার সম্পত্তি বেহাত

খন্দকার মাহবুবুর রহমান:

কিশোরগঞ্জের বাজিতপুর উপজেলার সরারচর রেলস্টেশনে প্রায় দেড়শ’ কোটি টাকা মূল্যের রেলওয়ের সম্পত্তি দখলের অভিযোগ উঠেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাকর্মীসহ প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে। দীর্ঘদিন ধরে এসব জায়গায় দোকান-বাড়ি নির্মাণ করে ভোগ করছেন তারা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সরারচর রেলস্টেশনে কমপক্ষে ৪০ থেকে ৪৫ একর সম্পত্তি রয়েছে। বর্তমানে এ সম্পত্তির মূল্য কমপক্ষে দেড়শ’ কোটি টাকা বলে জানান এলাকাবাসী। এসব জমি আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রভাবশালী নেতাকর্মীরা রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে লিজ নিয়ে দোকান নির্মাণ করে ভাড়া দিয়েছেন বলে দখলকাররা জানান। রেলওয়ের জমিতে ছোট-বড় প্রায় চার শতাধিক দোকান তৈরি করে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। এসব দোকান থেকে প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা ভাড়া নিচ্ছেন তারা। স্টেশনের পেছন দিক থেকে সরারচর বাজারের লেভেল ক্রসিং পর্যন্ত প্রায় আড়াই শতাধিক দোকান রয়েছে। স্টেশনের সামনের দিকে রয়েছে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫টি দোকান। অনেকেই বাড়ি তৈরি করে ভাড়া দিয়েছেন, আবার কেউ কেউ বসবাস করছেন। এ ছাড়াও রেলওয়ের জায়গায় ছোট বড় ৭-৮টি পুকুর ও কৃষি জমি রয়েছে। কেউ পুকুরে মাছ চাষ করছেন, আবার কেউ কেউ কৃষি জমিতে ধান চাষ করছেন লিজধারী দখলদাররা। জনৈক প্রভাবশালী একটি পুকুর ভরাট কাজ শুরু করেছেন। পুকুর ভরাট করে তিনি ওই জায়গায় ক্লিনিক নির্মাণ করবেন বলে জানান। লিজ নামধারী দখলদারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি জমি রয়েছে বাজিতপুর উপজেলা বিএনপি সভাপতি শেখ মজিবুর রহমান ইকবালের। তার দখলে ৫০-৬০টি দোকান রয়েছে বলে একাধিক ব্যক্তি জানান। মজিবুর রহমান বলেন, আমার বাবা পাকিস্তান আমলে ৯৯ বছরের জন্য জায়গা লিজ নিয়েছেন। সেই মোতাবেক তারা দোকান নির্মাণ করে ভাড়া দিচ্ছেন এবং খাজনাও পরিশোধ করছেন।

সরারচর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা লিটন ভূঁইয়া জানান, তিনি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এক বছরের জন্য লাইসেন্স এনে প্রতিবছর নবায়ন করেন। কিন্তু গত পাঁচ বছর ধরে কর্তৃপক্ষ তা নবায়ন করছে না। হিলচিয়া গ্রামের আলিমুদ্দিন জানান, রেলওয়ের জমি লিজ নিয়ে তিনি দুটি দোকান করেছেন। তবে কয়েক বছর ধরে নবায়ন করছে না কর্তৃপক্ষ। প্রণব বণিক জানান, প্রায় ২০ বৎসর আগে তার বাবা রেল বিভাগ থেকে এক বছরের জন্য লিজ নিয়ে দোকান তৈরি করে ব্যবসা শুরু করেন। প্রতি বছরই তিনি নবায়ন করতেন। কর্তৃপক্ষ এখন আর নবায়ন করছে না। কামরুল শাহ্‌ জানান, তিনি সংশ্নিষ্ট বিভাগ থেকে ৯৯ বছরের জন্য লিজ নিয়েছেন ৫৫ শতকের একটি পুকুরসহ প্রায় ৬০ শতক জমি। গোলাপ মিয়ার ছেলে জামিলুর জানান, তার বাবা রেলওয়ের কাছ থেকে লিজ এনে আটটি দোকান করে ভাড়া দিয়েছেন। তবে কয়েক বছর ধরে কর্তৃপক্ষ লিজের টাকা নিচ্ছেন না। সরারচর ইউপি চেয়ারম্যান ও বিএনপি নেতা মো. মহসীন রেলওয়ের জায়গায় প্রায় তিন একর জায়গা রয়েছে বলে জানান।

কিশোরগঞ্জ রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী আনিছুজ্জামান জানান, সরারচর রেলওয়ে স্টেশনে তার সহকর্মীর একটি বাংলো ছিল, যা দখল করে নিয়েছে প্রভাবশালীরা। রেলওয়ে ঢাকা ডিভিশনের ডেপুটি কমিশনার ও ভূসম্পত্তি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, বিষয়টি শুনেছি। আমাদের সম্পত্তি দ্রুত উদ্ধার করে দখলকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। ৯৯ বছরের জন্য কোনো লিজ কাউকে দেওয়া হয়নি।

সুত্র:সমকাল, ০৩ ডিসেম্বর ২০১৯


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.