গত এপ্রিলে ঢাকা-কলকাতা রুটে চলাচল করছে পুরো শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ট্রেন। এতে মৈত্রী এক্সপ্রেসের কেবিনে প্রতি আসনের ভাড়া ২০ ডলার ও চেয়ারের ভাড়া ১২ ডলার নির্ধারণ করা হয়েছিল। উভয় ক্ষেত্রেই রয়েছে ১৫ শতাংশ ভ্যাট। এছাড়া টিকিটের সঙ্গে ৫০০ টাকার ট্রাভেল ট্যাক্স যোগ করা হয়। তবে এ ভাড়া ৫০ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে। গত ৮ ডিসেম্বর থেকে নতুন ভাড়া কার্যকর হয়েছে।
মৈত্রী ট্রেনের ভাড়া হঠাৎ বৃদ্ধিতে অনেকটাই বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা। তবে এরপরও মিলছে না মৈত্রী ট্রেনের টিকিট। গতকাল টিকিট কিনতে গিয়ে কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে খালি হাতে ফিরেছেন অনেকেই। কাউন্টার থেকে জানানো হয়েছে, ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত মৈত্রী এক্সপ্রেসের কোনো টিকিট নেই।
রেলওয়ের তথ্যমতে, মৈত্রী ট্রেনের ভাড়া বাড়ানোর বিষয়ে গত বছর থেকেই প্রাথমিক আলোচনা চলছিল। প্রাথমিকভাবে ২৫ শতাংশ ভাড়া বাড়ানোর কথা ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত ৫০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। এক্ষেত্রে কেবিনে প্রতি আসনের ভাড়া ৩০ ও চেয়ারের ভাড়া ২০ ডলার করা হয়েছে। এছাড়া উভয় ক্ষেত্রেই ১৫ শতাংশ ভ্যাট বহাল রাখা হয়েছে। পাশাপাশি সব শ্রেণির টিকিটের সঙ্গে ৫০০ টাকার ট্রাভেল ট্যাক্সও রয়েছে। সব মিলিয়ে এসি আসনে তিন হাজার ৪০০ টাকা ও এসি চেয়ারে দুই হাজার ৫০০ ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে।
এদিকে গত বছর দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর যৌথ ঘোষণার অনুসারে গত মাসে চালু হয়েছে বিরতিহীন মৈত্রী এক্সপ্রেস সার্ভিস। এতে সীমান্তে আর ইমিগ্রেশন ও চেকিং করা হচ্ছে না। ঢাকা ও কলকাতাতেই এটি সম্পন্ন করা হবে। ফলে বিরতিহীনভাবে ঢাকা থেকে কলকাতা পর্যন্ত ট্রেনটি চলাচল করছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকা ও কলকাতায় ইমিগ্রেশন ও চেকিং সম্পন্ন করায় মৈত্রী এক্সপ্রেসের যাত্রীদের সীমান্তে আর চেকিং করা লাগছে না। শুধু ইঞ্জিন পরিবর্তনের জন্য ট্রেনটি শুধু ১০ মিনিটের বিরতি দেয়। এতে মৈত্রী এক্সপ্রেসের যাত্রা সময় অনেক কমে গেছে। ফলে যাত্রী চাহিদা আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। ফলে এক মাস আগে অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হলেও ১০ থেকে ১২ দিনের মধ্যে তা বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। ফলে অনেকেই টিকিট পাচ্ছে না।
উল্লেখ্য, ১৯৬৫ সালে ভারত-বাংলাদেশ ছয়টি সীমান্ত দিয়ে রেল যোগাযোগ চালু ছিল। তখন খুলনা-কলকাতার পাশাপাশি দার্জিলিং মেইল যেত পার্বতীপুর-শিলিগুড়ি। কিন্তু ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের পর সব ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এখন আবার সেই লাইনগুলো চালুর ওপর জোর দিয়েছে দুই দেশ।
রেলের ইতিহাস অনুযায়ী, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২-৭৩ সালে একবার আগের ট্রেন লাইন চালু হয়। ওই সময় ভারতে আশ্রয় নেওয়া শরণার্থীরা দেশে ফেরেন ট্রেনে চড়ে। পরে আর কোনো যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করেনি। ২০০১ সাল থেকে খুলনা-কলকাতা লাইনে মালগাড়ি চলাচল করছে সীমিতভাবে।
পরে ২০০৮ সালে দুই দেশের মধ্যে মৈত্রী এক্সপ্রেস চালু হয়। প্রথমে সপ্তাহে একদিন যেত ও একদিন আসত ট্রেনটি। শুরুর দিকে যাত্রী না পেলেও পরে ধীরে ধীরে মৈত্রী এক্সপ্রেস জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এতে সপ্তাহে দুদিন যেত ও আসত ট্রেনটি। এখন সপ্তাহে তিনদিন করে যাওয়া-আসা করে মৈত্রী এক্সপ্রেস।
এদিকে ২০১৪ সালের এপ্রিলে ঢাকায় আন্তঃদেশীয় রেলওয়ে সভায় খুলনা-কলকাতা একজোড়া মৈত্রী এক্সপ্রেস চালুর প্রস্তাব করা হয়েছিল। তখন ভারতীয় কর্তৃপক্ষ বনগাঁও-কলকাতা স্টেশনে সাব-আরবান ট্রেনের আধিক্য ও সেকশনাল ক্যাপাসিটি না থাকার কারণে খুলনা-কলকাতা লাইনে ট্রেন চালুতে সময় নেয়। কারিগরি সক্ষমতা অর্জনের পর গত এপ্রিলে এর উদ্বোধন করেন দুই প্রধানমন্ত্রী। এটি বনগাঁও লাইন দিয়ে সীমান্ত স্টেশন পেট্রাপোল-বেনাপোল দিয়ে চলাচল করবে।
সূত্র জানায়, খুলনা-কলকাতা রুটে দ্বিতীয় মৈত্রী এক্সপ্রেস বন্ধন যাত্রা শুরু করেছে ১৬ নভেম্বর থেকে। এক্ষেত্রে এসি কেবিনের আসনে ১৫ ডলার ও এসি চেয়ারে ১০ ডলার ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। উভয় ক্ষেত্রেই রয়েছে ১৫ শতাংশ ভ্যাট। সব শ্রেণির টিকিটের সঙ্গে ৫০০ টাকার ট্রাভেল ট্যাক্স যোগ হবে। ফলে এ ট্রেনে এসি আসনে ভাড়া গুনতে হয় দুই হাজার টাকা ও এসি চেয়ার দেড় হাজার টাকা।
উল্লেখ্য, বর্তমানে মৈত্রী এক্সপ্রেস ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে ছাড়ে সকাল ৮টা ১৫ মিনিটে আর কলকাতা পৌঁছায় বিকাল ৪টায়। আর কলকাতা স্টেশন থেকে ফিরতি ট্রেন ছাড়ে সকাল ৭টা ১০ মিনিটে। সেটি ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে পৌঁছায় বিকাল ৪টা ৫ মিনিটে। সপ্তাহে তিনদিন করে মোট ছয়দিন যাতায়াত করে ট্রেনটি।
এদিকে বন্ধন এক্সপ্রেস সপ্তাহে একদিন যাতায়াত করে। এটি খুলনা থেকে ছাড়ে দুপুর ১টা ৩০ মিনিটে ও কলকাতা পৌঁছায় সন্ধ্যা ৬টা ১০ মিনিটে। আর কলকাতা থেকে ফিরতি ট্রেন ছাড়ে পরের দিন সকাল ৭টা ১০ মিনিটে। সেটি খুলনায় পৌঁছায় দুপুর ১২টা ৩০ মিনিটে।
সুত্র:শেয়ার বিজ,ডিসেম্বর ১১, ২০১৭