ইসমাইল আলী: পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ স্থাপনে ঢাকা থেকে মাওয়া হয়ে যশোর পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ করছে সরকার। ২০১৬ সালের মে মাসে প্রকল্পটি অনুমোদন করা হয়। সাড়ে চার বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও প্রকল্পটির অগ্রগতি খুবই ধীর। এরই মধ্যে প্রকল্পটিতে ইলেকট্রিক ট্র্যাকশন সংযোজনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এজন্য প্রকল্প ব্যয় বাড়বে কমপক্ষে তিন হাজার ৬০০ কোটি টাকা। যদিও এর প্রভাবে ট্রেনের গতি বাড়বে না।
এদিকে ইলেকট্রিক ট্র্যাকশনের মাধ্যমে ট্রেনের গতি বাড়ানোর বিকল্প পরিকল্পনাও রয়েছে রেলওয়ের। তবে সেক্ষেত্রে বাড়তি ব্যয় হবে চার হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা। এতে ঢাকা-মাওয়া-যশোর রুটে ট্রেনের গতি ঘণ্টায় ৪০ কিলোমিটার বাড়ানো যাবে।
সূত্রমতে, রেলপথমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজনের নির্দেশে পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পে ইলেকট্রিক ট্র্যাকশন সংযোজনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য সম্ভাব্যতা যাচাই সম্পন্ন করেছে ঢাকা-মাওয়া-যশোর রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের ঠিকাদার চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিআরইসি)। গত জুলাইয়ে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। গত শনিবার (৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর হোটেল লা মেরিডিয়ানে ওই প্রতিবেদনের ওপর পর্যালোচনা বৈঠকের আয়োজন করে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ঢাকা-মাওয়া-যশোর রেলপথের ডিজাইন স্পিড ধরা আছে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার। এ গতি বহাল রেখে রেলপথটিতে ইলেকট্রিক ট্র্যাকশন করা হলে কিছু বাড়তি কাজ করতে হবে। এজন্য ব্যয় হবে ৩৯ কোটি ৩৪ লাখ ডলার। এছাড়া বিদ্যমান কাজের পাশাপাশি কিছু অংশও বাস্তবায়ন করা যাবে। সেজন্য ব্যয় হবে তিন কোটি ৯ লাখ ডলার। সব মিলিয়ে বাড়তি ব্যয় হবে ৪২ কোটি ৪৩ লাখ ডলার বা তিন হাজার ৬০৬ কোটি ৫৫ লাখ টাকা।
ব্যয় বিশ্লেষণে দেখা যায়, ইলেকট্রিক ট্র্যাকশনের জন্য জমির কাজে বাড়তি ব্যয় হবে দুই কোটি ৭০ লাখ ডলার, ট্র্যাক তথা রেলপথ নির্মাণে ৭৯ লাখ ডলার, সেতু নির্মাণে চার কোটি ৭৩ লাখ ডলার, স্টেশন ও বিল্ডিং নির্মাণে তিন কোটি ডলার, সিগন্যালিংয়ে এক কোটি ৭৯ লাখ ডলার, আনুষঙ্গিক খাতে পাঁচ কোটি ৯ লাখ ডলার, ইলেকট্রিফিকেশনে ১১ কোটি ৮৩ লাখ ডলার ও লোকোমোটিভ রক্ষণাবেক্ষণে ৭৪ লাখ ডলার। এছাড়া বিস্তারিত ডিজাইন ও সমীক্ষা খাতে ব্যয় হবে এক কোটি ৫৩ লাখ ডলার। বিমা ফি ১৫ লাখ ডলার, কনটিনজেন্সি এক কোটি ৫৩ লাখ ডলার ও ব্যয় সমন্বয় খাতে চার কোটি ৬০ লাখ ডলার বাড়তি ব্যয় হবে। পাশাপাশি ইলেকট্রিক রোলিং স্টক তথা ইঞ্জিন কেনায় ব্যয় হবে তিন কোটি ৯৬ লাখ ডলার।
জানতে চাইলে পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের পরিচালক গোলাম ফখরুদ্দিন এ. চৌধুরী কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, রেলপথমন্ত্রীর নির্দেশে পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পে ইলেকট্রিক ট্র্যাকশন প্রবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। শনিবার অনুষ্ঠিত বৈঠকে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) বিশেষজ্ঞরাও ছিলেন। তারা কিছু মতামত দিয়েছেন। এসব বিষয় পর্যালোচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তিনি আরও বলেন, নির্মাণ ব্যয় বাড়লেও ইলেকট্রিক লোকোমোটিভের দাম অনেক কম। বর্তমানে রেলওয়ের ব্যবহƒত ডিজেল ইলেকট্রিক লোকোমোটিভের একটির দামে চারটি ইলেকট্রিক লোকোমোটিভ কেনা যাবে। এছাড়া এ ধরনের লোকোমোটিভ ও রেলপথের রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় অনেক কম। পাশাপাশি রেলের তেল চুরিও এ প্রকল্পের মাধ্যমে বন্ধ করা সম্ভব। এছাড়া এ ধরনের লোকোমোটিভের জন্য বিদ্যুৎ খুবই কম লাগে। ফলে পরিচালনা ব্যয়ও কম। সার্বিকভাবে এ প্রকল্পটি রেলের জন্য হবে লাভজনক।
এদিকে ইলেকট্রিক ট্র্যাকশনের পাশাপাশি ট্রেনের গতি বাড়ানোর জন্য বিকল্প একটি প্রস্তাবও দেয়া হয়েছে প্রতিবেদনে। এতে দেখা যায়, গতি বাড়ানোর জন্য রেলপথটিতে ইলেকট্রিক ট্র্যাকশন করা হলে কিছু বাড়তি কাজ করতে হবে। এজন্য ব্যয় হবে ৪১ কোটি ১৬ লাখ ডলার। আর বিদ্যমান কাজের পাশাপাশি কিছু অংশ বাস্তবায়ন করা যাবে। সেজন্য ব্যয় হবে ১১ কোটি ৩৮ লাখ ডলার। সব মিলিয়ে বাড়তি ব্যয় হবে ৫২ কোটি ৫৩ লাখ ডলার বা চার হাজার ৪৬৫ কোটি ৩১ লাখ টাকা।
ব্যয় বিশ্লেষণে দেখা যায়, এক্ষেত্রে শুধু জমির কাজে ও সিগন্যালিংয়ে বাড়তি ব্যয় হবে। এছাড়া ব্যয় সমন্বয় খাতে বাড়তি কিছু অর্থ ব্যয় হবে। তবে অন্যান্য খাতে ব্যয় ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার গতির মতোই থাকবে।
উল্লেখ্য, পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৪ হাজার ৯৮৮ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। তবে দুই বছরের মাথায় তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। যদিও গত আগস্টে প্রকল্পটির ব্যয় আরও এক হাজার ১৫৪ কোটি টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। এতে ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৪০ হাজার ৪০০ কোটি ৮০ লাখ টাকা। প্রকল্পটি দ্বিতীয় দফা সংশোধনের সময় এ ব্যয় অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তবে দুই দফায় এরই মধ্যে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে গেছে পাঁচ হাজার ৪১১ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। ইলেকট্রিক ট্র্যাকশন হলে এ ব্যয় আরও বেড়ে যাবে।
সূত্র:শেয়ার বিজ, ডিসেম্বর ৭, ২০২০