শিরোনাম

রেলদুর্ঘটনা ও আমাদের অসচেতনতা

রেলদুর্ঘটনা ও আমাদের অসচেতনতা

ট্রেনে কাটা পড়িয়া দুই পা হারাইয়াছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্রী। রেলস্টেশনে রেললাইনের উপর দিয়া হাঁটিয়া এক প্লাটফর্ম হইতে অন্য প্লাটফর্মে যাইতেছিলেন তিনি। এই সময় ট্রেনের ইঞ্জিন ঘুরাইবার কাজ চলিতেছিল। সেই ইঞ্জিনের চাকায় কাটা পড়িয়া উরু হইতে দুই পা বিচ্ছিন্ন হইয়া যায় তাহার। আশার কথা হইল, ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাহার চিকিত্সার যাবতীয় খরচ বহনের ঘোষণা দিয়াছে। ইহার আগে গত ২২ জানুয়ারি সিরাজগঞ্জে রেলস্টেশন হইতে ট্রেনে উঠিবার সময় পড়িয়া গিয়া দুই পা থেঁতলাইয়া যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রের। এই দুইটি দুর্ঘটনাই মর্মান্তিক। তবে এখানে কিছু প্রশ্ন থাকিয়া যায়। উচ্চশিক্ষিত হইয়াও আমরা কি পথে-ঘাটে চলিতে সচেতনতার পরিচয় দিতে পারিতেছি? সচেতনতাই পারে অনেক দুর্ঘটনা হইতে আমাদের রক্ষা করিতে। তরুণ-তরুণীরা আজকাল যে হারে ট্রেনের লাইন দিয়া কানে হেডফোন লাগাইয়া চলাচল করেন, তাহা রীতিমতো বিপজ্জনক। এই কারণে সমপ্রতি অনেকে হতাহত হইলেও এই ব্যাপারে আমাদের কোনো টনক নড়িতেছে না।
সমপ্রতি সড়ক দুর্ঘটনার পাশাপাশি রেলদুর্ঘটনাও ক্রমেই বাড়িয়া চলিতেছে। ইহার প্রধান দুইটি কারণ রহিয়াছে। প্রথমত, অরক্ষিত, অপরিকল্পিত ও অননুমোদিত রেলক্রসিং, ক্ষতিগ্রস্ত রেলপথ, দায়িত্বরতদের অবহেলা ও নানা যান্ত্রিক ত্রুটি-বিচ্যুতি; দ্বিতীয়ত, আমাদের অসচেতনতা। এক পরিসংখ্যানে জানা যায়, গত আড়াই বত্সরে রেল দুর্ঘটনায় মারা গিয়াছেন আট শতাধিক মানুষ। আহত ও পঙ্গুত্ব বরণ করিয়াছেন ছয় শতাধিক। ট্রেন যখন চলাচল করে, তখন রেলওয়ের আইন অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট লাইনের দুই পাশের ১০ ফুট এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি থাকে। এই নিয়ম মানিয়া চলিলে ট্রেনে কাটা পড়িবার কোনো আশঙ্কা থাকিতে পারে না। আবার রেললাইনের দুই ধারে নানা অবৈধ স্থাপনা ও বসতি গড়িয়া উঠিবারও কথা নহে। অন্যদিকে রেলওয়ের সূত্রমতে, সারাদেশে দুই হাজার ৮৩৫ কিলোমিটার রেলপথে দুই হাজার ৫৪১টি লেভেল ক্রসিং আছে। ইহার মধ্যে অনুমোদিত মাত্র ৭৮০টি। বাকি এক হাজার ৭৬১টিই অনুমোদনহীন। আবার অনুমোদিত ক্রসিংয়ের মাত্র ২৪২টিতে গেইটকিপার আছে। অবৈধ রেলক্রসিং নির্মাণে অনেক সময় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সমর্থন থাকে। এই পরিস্থিতি মোটেও কাম্য নহে।
অতএব, যেসব স্থানে অনুমোদিতভাবে লেভেল ক্রসিং গড়িয়া তোলা হইয়াছে, সেখানে স্থানীয়ভাবে হইলেও নিরাপত্তাকর্মী নিয়োজিত করিতে হইবে। ইহা ছাড়া রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে সিগনাল লাইনের ত্রুটি দূরীকরণ, উন্নত মানের রেলক্রসিং নির্মাণ, গুরুত্বপূর্ণ লেভেল ক্রসিংগুলিতে উড়াল সেতু নির্মাণ, ক্রসিংগেটের আশপাশে অবৈধ স্থাপনা ভাঙিয়া ফেলা, লোকবল বাড়ানো, গেইটম্যানের স্থায়ী পদ সৃষ্টি, রেললাইনের দুই পাশে দেওয়াল তুলিয়া দেওয়া, ট্রাফিক সার্জেন্ট মোতায়েন ইত্যাদি পদক্ষেপ ধাপে ধাপে গ্রহণ করিতে হইবে। তবে আলোচ্য দুইটি রেলদুর্ঘটনার ক্ষেত্রে সচেতনতার যে অভাব পরিলক্ষিত হইতেছে, এইজন্য সচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণা আরো জোরদার করা প্রয়োজন।

About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.