শিরোনাম

রেলে যাত্রীসেবা উন্নয়নে চাই সংগতিপূর্ণ পদক্ষেপ

রেলে যাত্রীসেবা উন্নয়নে চাই সংগতিপূর্ণ পদক্ষেপ

সড়কপথে দুর্ঘটনা, যানজট প্রভৃতি বিবেচনায় এবং রেলপথে যাতায়াত অপেক্ষাকৃত আরামদায়ক ও সাশ্রয়ী হওয়ায় ট্রেন ভ্রমণে ঝুঁকছেন যাত্রীরা। এ অবস্থায় রেলপথে যাত্রীসেবার মান বাড়াতে বিভিন্ন উদ্যোগও নিয়েছে সরকার। এতে ট্রেনযাত্রায় মানুষের আস্থা বাড়ছে, বাড়ছে যাত্রীর চাপ।
এ অবস্থায় গতকাল শেয়ার বিজে প্রকাশিত ‘চীন থেকে ২০০ কোচ কেনায় রেলের চুক্তি’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। এতে বলা হয়, চীনা কোম্পানির কাছ থেকে ৯২৭ কোটি ৫১ লাখ ৬৯ হাজার টাকা (আট কোটি ৪৯ লাখ ৭০ হাজার ডলার) দিয়ে ২০০টি মিটারগেজ কোচ কিনছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।

রোববার চীনের সিআরআরসি সিফাং কোম্পানি লিমিটেড ও বাংলাদেশ রেলওয়ের মধ্যে এ-সংক্রান্ত চুক্তি সই হয়। অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ‘টেন্ডারার্স ফাইন্যান্স’-এর মাধ্যমে কোচগুলো সংগ্রহ করা হচ্ছে; অর্থাৎ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানই ঋণের সংস্থান করছে কোচ কেনায়। তার মানে, অর্থায়ন নিয়ে ভাবতে হচ্ছে না।

দেশের মিটারগেজ লাইনে অধিকসংখ্যক রেলকোচ চালানো যায় না, এটাও সত্য। এতে যাত্রীর চাপ সামলানো মুশকিল হয়ে পড়ছে। এ সমস্যা নিরসনে অধিক রেলকোচ চালানোর সুবিধার্থে মিটারগেজ লাইনকে ধীরে ধীরে ব্রডগেজ ও ডুয়েলগেজে রূপান্তরের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এর অংশ হিসেবে কিছু কাজ শুরুও হয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে এ ধরনের প্রথম প্রকল্প অনুমোদন দেয় একনেক। এর আওতায় দিনাজপুরের পার্বতীপুর এবং রংপুরের সদর, বদরগঞ্জ, কাউনিয়া উপজেলা মিলিয়ে মোট ৬৬ দশমিক ৮৯ কিলোমিটার মিটারগেজকে ডুয়েলগেজ করে ফেলা হবে। ওই সময় একনেকের সভাশেষে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেছিলেন, দেশে আর মিটারগেজ থাকবে না। অধিক রেলকোচ চালানোর জন্য সব রেললাইনই ব্রডগেজ ও ডুয়েলগেজ হয়ে যাবে। এটা পর্যায়ক্রমে হবে। এদিকে রোববার উক্ত চুক্তি সই অনুষ্ঠানে রেলপথমন্ত্রী বললেন, রেল খাতকে নতুন করে সাজাতে সরকার কাজ করছে। চলমান প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে রেলওয়ের আমূল পরিবর্তন হবে এবং বর্তমানের তুলনায় অধিক হারে রেলের মাধ্যমে যাত্রীসেবা দেওয়া সম্ভব হবে।

রেল খাতকে নতুন করে সাজাতে মিটারগেজকে ক্রমে ব্রড ও ডুয়েলগেজ করা হচ্ছে কি না, সে বিষয়ে তিনি অবশ্য কিছু বলেননি। যখন মিটারগেজ ক্রমে উঠিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে, তখন ২০০টি মিটারগেজ রেলকোচ কেনার চুক্তি নিয়েও প্রশ্ন উঠবে নিশ্চয়ই। ২০১৫ সালেই সারা দেশে মিটারগেজ রেলপথ পর্যায়ক্রমে বন্ধ করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। এ পরিপ্রেক্ষিতে নতুন কোনো মিটারগেজ রেলপথ নির্মাণও হচ্ছে না। এ অবস্থায় মিটারগেজ কোচ কেনার আলোচ্য বিষয়ে রেল মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটি বা ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ভূমিকাও আমাদের জানা নেই। এটা অবশ্য ধরে নেওয়া যাবে না যে, ২০০টি মিটারগেজ রেলকোচ কেনার পেছনে কোনো অসৎ উদ্দেশ্য ছিল। বিদ্যমান রেললাইনে যাত্রীদের সুবিধা বাড়াতেই হয়তো এ উদ্যোগ। সেক্ষেত্রে এর উপযোগিতার বিষয়টি সুস্পষ্ট করা দরকার ছিল। এর আগে নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে রেলওয়ের সমঝোতা চুক্তির প্রায় দু’বছর পর জানা যায় যে, প্রতিষ্ঠানটি ভুয়া এবং এমওইউ ছিল নন-বাইন্ডিং, মানে বাস্তবায়নে বাধ্যবাধকতা নেই। এমন অভিজ্ঞতার নিরিখে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নিবিড় নজরদারির আওতায় ২০০ মিটারগেজ রেলকোচ কেনার ইস্যুটির যথাযথ নিষ্পত্তি হবে বলেই আমরা আশা করব।

সুত্র:শেয়ার বিজ, নভেম্বর ৬, ২০১৮


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.