শিরোনাম

আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের মেয়াদ বাড়লো


।। রেল নিউজ ।।
একে একে ৫ বছর পেরিয়ে গেছে। তবুও শেষ হয়নি ‘আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েলগেজ রেল সংযোগ নির্মাণ (বাংলাদেশ অংশ) প্রকল্প’র কাজ। জুলাই ২০১৬ হতে ডিসেম্বর ২০১৮ মেয়াদে বাস্তবায়নের জন্য প্রকল্পটি অনুমোদন দেওয়া হয়। এরপর প্রকল্প সংশোধনে সময় বাড়ে ২০২২ সালের জুন নাগাদ। এ মেয়াদেও প্রকল্পের কাজ শেষ হচ্ছে না। এবার চতুর্থবারের মতো প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে।

পরিকল্পনা কমিশন জানায়, চতুর্থবারের মতো ব্যয় ব্যতিরেকে জুন ২০২৩ সাল নাগাদ প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ৪৭৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা। এরমধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৫৭ কোটি ৫ লাখ টাকা এবং ভারতীয় ঋণ ৪২০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা।

আজ মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) শেরে-বাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে আসবেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান।

প্রকল্পের উদ্দেশ্য: বাংলাদেশের আখাউড়া হয়ে ভারতের কলকাতা ও আগরতলা পর্যন্ত রেল সংযোগ স্থাপন। বাংলাদেশ ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মধ্যে রেল যোগাযোগ স্থাপনের মাধ্যমে ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্র সম্প্রসারণ। ক্ষুদ্র শিল্পের প্রসারের মাধ্যমে স্থানীয় উদ্যোক্তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়ন।

প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম: বাংলাদেশ অংশে ১০ দশমিক ০১ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ মেইন লাইন এবং ২৫ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ লুপ লাইন নির্মাণ। ৫৬ দশমিক ০১ একর ভূমি অধিগ্রহণ, ২০টি মাইনর ব্রিজ এবং ৩টি মেজর ব্রিজ নির্মাণ। তিনটি স্টেশনে কম্পিউটারাইজড ইলেকট্রনিক সিগন্যালিং সিস্টেম স্থাপন করা।

পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মো. মামুন আল রশীদ জাগো নিউজকে জানান, কোভিড-১৯ মহামারির কারণে প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যে শেষ করা সম্ভব হয়নি।

২০১৬ সালে ৪৭৭ কোটি ৮১ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। পরবর্তীসময়ে ব্যয় বৃদ্ধি ব্যতিরেকে প্রকল্পের মেয়াদ ৩ বছর ৬ মাস বাড়িয়ে জুন ২০২২ পর্যন্ত করা হয়। এ সময় (জুন ২০২২) পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ১৪০ কোটি ৪৫ লাখ টাকা, যা অনুমোদিত ব্যয়ের মাত্র ২৯ দশমিক ৩৯ শতাংশ।

আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ প্রকল্প

মামুন আল রশীদ জানান, প্রকল্পের বাস্তবায়ন অগ্রগতি কম হওয়ার কারণে মেয়াদ আরও এক বছর বাড়িয়ে জুন ২০২৩ পর্যন্ত নির্ধারণ করতে সংশোধন প্রস্তাব তোলা হবে একনেক সভায়।

বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্র জানায়, প্রকল্পের আওতায় একটি চার চাকার ডাবল কেবিন পিকআপ সংগ্রহের পাশাপাশি পুনর্বাসন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য এনজিও নিয়োগ দেওয়া হবে।

২০১০ সালে ভারত সরকারের অনুদানে আখাউড়া-আগরতলা রেল সংযোগ নির্মাণের জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়। স্মারক অনুযায়ী ভারত সরকারের আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় ইঞ্জিনিয়ারিং প্রকিউরমেন্ট অ্যান্ড কন্সট্রাকশন (ইপিসি) ভিত্তিতে এ রেল সংযোগ নির্মাণ করা হচ্ছে।

২০১০ সালের জানুয়ারিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের সময় আখাউড়া-আগরতলা রেলপথ নির্মাণের বিষয়ে একমত হয় উভয় দেশ। তখনই সিদ্ধান্ত হয়, ১৪ কিলোমিটার রেলপথ স্থাপনের এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে ভারতের অনুদানে।

আখাউড়ার গঙ্গাসাগর থেকে আগরতলা পর্যন্ত মিটার গেজ এ রেলপথের দৈর্ঘ্য হবে ১১ দশমিক ৫ কিলোমিটার। পরে একে ব্রড গেজে রূপান্তরিত করারও সুযোগ থাকবে। যেখানে ভারত অংশে প্রায় ৫ কিলোমিটার আর বাংলাদেশ অংশে পড়বে ১০ কিলোমিটারের মতো।

বাংলাদেশ অংশে এটি আখাউড়া-চট্টগ্রাম রেলপথের গঙ্গাসাগর স্টেশনে এসে মিলিত হবে। তারপর বিদ্যমান রেললাইনের পূর্বপাশ দিয়ে সমান্তরালভাবে আখাউড়া জংশন স্টেশনে গিয়ে মিলিত হবে।

আখাউড়া-আগরতলা রেললিংকটির মাধ্যমে ত্রিপুরাসহ উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্যগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের রেল যোগাযোগ স্থাপিত হবে। ফলে দুই প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে রেল যোগাযোগে নতুন মাত্রা যোগ এবং ব্যবসা-বাণিজ্য ক্ষেত্রে নতুন পথ উন্মোচিত হবে।

ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্ক এবং উপ-আঞ্চলিক কানেকটিভিটির ক্ষেত্রে একটি নতুন করিডোর স্থাপিত হচ্ছে। এতে দুদেশের মধ্যে বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।

শুরুতে আখাউড়া-আগরতলা ডুয়েলগেজ রেললাইন নির্মাণ (বাংলাদেশ অংশ) প্রকল্পের মেয়াদকাল ছিল ১৮ মাস। এরমধ্যে তিনবার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এরই মধ্যে কেটে গেছে প্রায় ৫০ মাস। তবুও সম্পন্ন হচ্ছে না দুই দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট এ প্রকল্পের কাজ। সাড়ে ১০ কিলোমিটার রেলপথের ভারতের আগরতলা অংশে পড়েছে ৪ কিলোমিটার, বাকিটা বাংলাদেশ অংশে। ভারতের অংশের কাজ প্রায় শেষ। তবে বাংলাদেশ অংশে অগ্রগতির ধীরগতিতে দেখা দিয়েছে অসন্তোষ।

সূত্রঃ জাগোনিউজ


Comments are closed.