সাইদ সবুজ: বাংলাদেশ রেলওয়ের শ্রমিক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন ঢাকা মেইল ট্রেনের দ্বিতীয় শ্রেণির চারটি বগিতে দলবল নিয়ে ভ্রমণ করলেও ভাড়া পরিশোধ করেননি। গত ৩ অক্টোবর ঢাকায় অনুষ্ঠিত রেলওয়ে শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির দ্বিবার্ষিক সম্মেলনে যোগদান করতে তিনি নেতাকর্মীদের নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা ভ্রমণ করেন।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল সূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশ রেলওয়ের শ্রমিক লীগের ‘কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মেলন, ২০১৯’-এ যোগদান উপলক্ষে চট্টগ্রাম-ঢাকা-চট্টগ্রাম যাতায়াতের জন্য শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদকের পক্ষে যুগ্ম সম্পাদক মো. লোকমান হোসেন আসন সংরক্ষণের জন্য আবেদন করেন। এরপর ৩০ সেপ্টেম্বর রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের ডেপুটি চিফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার গৌতম কুমার কুণ্ড আসন সংরক্ষণের জন্য রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (চট্টগ্রাম ও ঢাকা) এবং স্টেশন ম্যানেজারকে (চট্টগ্রাম ও ঢাকা) নির্দেশ প্রদান করেন।
ওই চিঠিতে তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ রেলওয়ের শ্রমিক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মেলন, ২০১৯-এ যোগদান উপলক্ষে চট্টগ্রাম-ঢাকা-চট্টগ্রাম যাতায়াতের জন্য শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদকের পক্ষে যুগ্ম সম্পাদক মো. লোকমান হোসেন ২ অক্টোবর চট্টগ্রাম-ঢাকাগামী ১নং আপ (ঢাকা মেইল) ট্রেনের দুটি প্রথম শ্রেণির কোচের আসন ও তিনটি দ্বিতীয় শ্রেণির কোচের আসন এবং ৩ অক্টোবর ঢাকা-চট্টগ্রামগামী ২নং মেইল (চট্টগ্রাম মেইল) ট্রেনের দুইটি প্রথম শ্রেণির কোচের আসন ও তিনটি দ্বিতীয় শ্রেণির কোচের আসন সংরক্ষণের জন্য আবেদন করেন। তাই ওই তারিখে উল্লিখিত বগিগুলো সংরক্ষণের জন্য নির্দেশ প্রদান করেন তিনি।
তারপর ১ অক্টোবর রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অ্যাসিসট্যান্ট চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট মো. মনিরুজ্জমান ১নং ঢাকা মেইল ট্রেনের দ্বিতীয় শ্রেণির পাঁচটি বগি দুজনের নামে বরাদ্দ করেন। যথাসময়ে তারা চট্টগ্রাম-ঢাকা-চট্টগ্রাম ভ্রমণও করেন। কিন্তু তাদের নামে বরাদ্দকৃত টিকিটগুলো সংগ্রহ না করেই ভ্রমণ করেন। যদিও বিনা টিকিটে ট্রেনভ্রমণ করা দণ্ডনীয় অপরাধ।
এদিকে একটি বগির ভাড়া মো. খন্দকার সাইফুল ইসলাম মামুন (প্রধান সহকারী, ইটি শাখা) নামের একজন পরিশোধ করলেও বাকি চারটি বগির কোনো ধরনের ভাড়া পরিশোধ করেননি লোকমান। তাই লোকমানের নামে বরাদ্দ করা টিকিট সংগ্রহের জন্য (ভাড়ার টাকা আদায়) বিভাগীয় রেলওয়ের দফতর থেকে বারবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনো ধরনের সাড়া দেননি।
এতে অনেকটা বাধ্য হয়ে বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক মো. বোরহান উদ্দিন শ্রমিক লীগের নেতা লোকমানের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য মহা-ব্যবস্থাপকের পূর্বাঞ্চলের দফতরে ১৫ অক্টোবর চিঠি প্রদান করেন।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ট্রেনের টিকিট ছাড়া ভ্রমণ কারার কোনো সুযোগ নেই। রেলওয়ে হেডকোয়ার্টার্স অনুমতি দিলেও টিকিট বাস্তবায়ন করবে বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপকের দফতর। কিন্তু এত লোক বিনা টিকিটে কীভাবে ভ্রমণ করল? ওখানে টিসি, টিটি, টিটিআই, ডিসিওসহ ডিআরএমের দায়িত্ব ছিল তদারকির করার। তারা ঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করলে এ রকম হওয়ার কথা নয়।
এ বিষয়ে বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক মো. বোরহান উদ্দিন শেয়ার বিজকে বলেন, রেলওয়ের শ্রমিক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন ট্রেনের চারটি বগি বারদ্দ নিয়ে কোনো ধরনের টিকিট সংগ্রহ না করে চট্টগ্রাম-ঢাকা-চট্টগ্রাম ভ্রমণ করেন। এরপর তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি কোনো ধরনের সাড়া দিচ্ছেন না। আর সেদিন লোকমানদের অনেক লোক ছিল। আমাদের পক্ষে লোক ছিল মাত্র পাঁচজন। ফলে শত শত লোকের টিকিট চেক করা সম্ভব হয়নি। আর সেই সময় তাদের কাছে টিকিট চাইতে গেলে পরিস্থিতি অন্যরকম হতো।
সুত্র:শেয়ার বিজ, অক্টোবর ২৮, ২০১৯