জহিরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর:
লোকসানের কারণে ১৯৯৭ সালে বন্ধ হয়ে যায় ফেনী-বিলোনিয়া রেলপথে ট্রেন চলাচল। ট্রেন বন্ধ হলেও রেলের বিপুল জমি, লাইন, মালপত্র রয়ে গেছে। গত ২২ বছরে এর অধিকাংশই বেদখল হয়ে গেছে। লাকসাম জিআরপি থানায় মামলা দায়ের ছাড়া বেদখল জমি উদ্ধারে আর কোনো তৎপরতা নেই রেলের।
রেলওয়ে সূত্র জানিয়েছে, আসাম বেঙ্গল রেলওয়ে কোম্পানি ১৯২৭ সালের ১৭ ডিসেম্বর ফেনী থেকে বিলোনিয়া পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার রেলপথ স্থাপনের জন্য ২৫টি গ্রামের ২৭৭ একর জমি অধিগ্রহণ করে। ১৯২৯ সালে ফেনী-বিলোনিয়া রেলপথ চালুর ৬৮ বছর পর লোকসানের কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়।
সরেজমিন দেখা গেছে, ফেনী-বিলোনিয়া রেলপথের বেশিরভাগ এখন অবৈধ দখলে। স্টেশনগুলোর অস্তিত্বও নেই। রেললাইনের লোহার পাত, স্লিপার খুলে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। মুন্সীরহাট, মোহাম্মদপুর, গাইনবাড়ি, বন্দুয়াসহ বহু জায়গায় রেললাইনের চিহ্নও নেই। রেললাইন এখন পরিণত হয়েছে সড়কপথে।
দখল হয়ে গেছে রেলওয়ের শত শত কোটি টাকার ভূমি। তৈরি হয়েছে দালানকোঠা, ঘরবাড়ি, দোকানপাট। ফেনী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি আইনুল কবির শামীম জানান, পরশুরামে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বিলোনিয়া অংশে বিলোনিয়া স্থলবন্দর রয়েছে। এ বন্দর দিয়ে নিয়মিত রফতানি হচ্ছে। ফেনীর বিলোনিয়া রেলপথটি চালু হলে যাতায়াত ব্যবস্থার সুবিধা বাড়ার পাশিপাশি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য বাড়বে।
ফুলগাজী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল আলীম ও পরশুরাম উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামাল উদ্দিন মজুমদার জানান, রেলপথ চালু হলে চট্টগ্রাম বন্দর ও বিলোনিয়া স্থলবন্দরে পণ্য পরিবহন অনেক সহজ হবে। পরিত্যক্ত অবস্থায় প্রতিনিয়ত চুরি হচ্ছে রেলপথের সম্পত্তি। এভাবে অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকলে অচিরেই ওই রেলপথের সব সম্পদ লুটপাট হয়ে যাবে।
ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (রেলপথ) মো. সাইফুল্লাহ জানান, এ লাইনটি বন্ধ হওয়ার পর লোকবল না থাকায় অনেক সম্পদ চুরি হয়ে গেছে। রেলপথের দু’পাশের জায়গায় এক বছর মেয়াদে কৃষি ও বাণিজ্যিকভাবে অস্থায়ী ছোট ছোট শেড নির্মাণে অনুমতি দেওয়া হলেও অনেকেই অবৈধভাবে বড় বড় স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করেছেন। দখলদারদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা করা হয়েছে। এরই মধ্যে এ রেলপথের সব সম্পদের একটি প্রাথমিক জরিপ করা হয়েছে।
এ ছাড়া বিলোনিয়া স্থলবন্দরে ভারতের সঙ্গে রেলপথ যোগাযোগের বিষয়ে কিছুদিনের মধ্যে একটি সভা হতে পারে বলে তিনি জানান।
সুত্র:সমকাল, ২৭ জুলাই ২০১৯