শিরোনাম

খুলনা-মোংলা রেলপথসহ তিন প্রকল্পের ব্যয় বেড়েছে ২৩১ শতাংশ


।। নিউজ ডেস্ক ।।
খুলনা-মোংলা রেলপথ নির্মাণ, খুলনার আধুনিক কারাগার ও শিপইয়ার্ড সড়ক নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয়ের পরিমাণ গড়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ২৩১ শতাংশ। অপরদিকে বড় তিন প্রকল্পে সময় গড়ে বেড়েছে সাড়ে ৬ বছর করে।

ঠিকাদারদের গাফিলতি, তদারকির অভাব, দেরির কারণ চিহ্নিত না করা ও ব্যবস্থা না নেওয়ায় এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে বারবার। নাগরিক নেতারা বলছেন, এতে অর্থের অপচয় হয়, যার বোঝা বহন করতে হচ্ছে জনগণকে।

আধুনিক কারাগার : ‘কারাগার হবে সংশোধনাগার’ এমন উদ্দেশ্য নিয়ে খুলনায় আধুনিক কারাগার নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয় ২০০৮ সালে। আর প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৪-১৫ অর্থবছরে। এ প্রকল্পটির মেয়াদ ছিল ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত। তবে মাঝপথে এসে দুই দফায় এটির সময় বাড়ানো হয়। একই সঙ্গে বাড়ে ব্যয়। শুরুতে প্রকল্প ব্যয় ধরা হয় ১৪৪ কোটি টাকা। এরপর সেটি গিয়ে দাঁড়ায় ২৫১ কোটি টাকায়। সর্বশেষ ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হওয়া নিয়ে এখনই সংকট দেখা দিয়েছে। ইতোমধ্যে ব্যয় ও সময় বৃদ্ধির আবেদন জানানো হয়েছে খুলনা গণপূর্ত অধিদপ্তর থেকে।

খুলনার গণপূর্ত বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, নগরীর উপকণ্ঠ ডুমুরিয়া উপজেলার চকমথুরাবাদের হাসানখালী মৌজার ৩০ একর জমিতে নতুন এ কারাগার নির্মাণ করা হচ্ছে। ২০১১ সালে প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন লাভ করে। এরপর স্থান পরিবর্তন, জমি অধিগ্রহণসহ সব প্রক্রিয়া শেষে ৫৬ একর জমির ওপর ২৫১ কোটি টাকা ব্যয় নির্ধারণ করা হয়। দুই হাজার বন্দি ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন এ কারাগারের নির্মাণকাজ কবে শেষ হবে এ নিয়ে শঙ্কা কাজ করছে। গণপূর্ত বিভাগের সহকারী প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান বলেন, কারারক্ষীদের নিরাপত্তা, নকশার পরিবর্তনসহ বিভিন্ন কারণে ব্যয় বেড়েছে। এছাড়া মাঝখানে করোনার কারণে কাজ থমকে ছিল। যে কারণে সময় বাড়ানো হয়েছে।

খুলনা-মোংলা রেল প্রকল্প : খুলনা থেকে মোংলা পর্যন্ত ৬৫ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের মূল ব্যয় ছিল ১ হাজার ৭২১ কোটি ৩৯ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। প্রথম সংশোধনীতে ব্যয় বাড়িয়ে ধরা হয় ৩ হাজার ৮০১ কোটি ৬১ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। দ্বিতীয় সংশোধনীতে ৪৫৯ কোটি টাকা ব্যয় বাড়ানো হয়। বৃদ্ধির পর প্রকল্পটির মোট ব্যয় দাঁড়ায় ৪ হাজার ২৬০ কোটি ৮৮ লাখ ৫৯ হাজার টাকায়। সে হিসাবে প্রথম প্রাক্কলিত ব্যয়ের তুলনায় বর্তমান প্রাক্কলিত ব্যয় বেড়েছে আড়াই গুণ। প্রকল্প গ্রহণের পর ২০১৩ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের মেয়াদ ছিল। পরে রেলপথ মন্ত্রণালয় ব্যয় না বাড়িয়ে প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ ২০১৪ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এক বছর বাড়িয়ে নেয়। ২০১৮ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের লক্ষ্য দিয়ে প্রকল্পের প্রথম সংশোধনী অনুমোদন করা হয়। পরে প্রথম সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবের (ডিপিপি) ব্যয় বাড়ানোর পাশাপাশি প্রকল্প বাস্তবায়ন মেয়াদ প্রথমবার ২০২০ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত এবং দ্বিতীয়বার ২০২১ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

সর্বশেষ চলতি বছরের ডিসেম্বর নাগাদ এর মেয়াদ ধরা হয়েছে। তবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে। জমি অধিগ্রহণে বিলম্ব, যথাসময়ে মালামাল সরবরাহ না হওয়া, রূপসা নদীর ওপর রেল সেতু নির্মাণে দেরি হওয়া, জলপাইগুঁড়ি থেকে আনা রেললাইনের স্লিপার বাতিল হওয়াসহ নানা কারণে এ সময়ক্ষেপণ হয়। বর্তমানে এ প্রকল্পের কাজ ৮৫ শতাংশ শেষ হয়েছে। রেললাইন স্থাপন বাকি রয়েছে ২৬ কিলোমিটার। আটটি স্টেশনের ৫টিই এখনো নির্মাণ করা হয়নি। শতভাগ নির্মাণ সম্পন্ন হয়নি রূপসা নদীর ওপর ব্রিজটির। প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম বলেন, যেসব কারণে কাজ বাস্তবায়নে বিলম্ব সেটি স্পষ্ট। তবে আমরা ২০২২ সালের মধ্যে এই লাইনে রেল চালানোর উপযোগী করে তোলার চেষ্টা করছি।

খুলনা শিপইয়ার্ড সড়ক প্রশস্তকরণ : নগরীর রূপসা ট্রাফিক মোড় থেকে খানজাহান আলী সেতু পর্যন্ত সড়কটি প্রশস্তকরণ ও উন্নয়নের প্রকল্প গ্রহণ করে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ)। ২০১০ সালে গ্রহণ করা এ প্রকল্পের নাম দেওয়া হয় ‘খুলনা শিপইয়ার্ড সড়ক প্রশস্তকরণ ও উন্নয়ন প্রকল্প’। ২০১৩ সালের মে মাসে একনেক সভায় অনুমোদন হয়। মেয়াদকাল ধরা হয়েছিল ২০১৫ সালের জুন পর্যন্ত। পরে তা বাড়িয়ে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। পরে ২০২০ সালের ২১ জুলাই ফের প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। প্রকল্পের সময় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে আর্থিক আকারও। ওই সময়ের ৯৮ কোটি ৯০ লাখ টাকার প্রকল্পটি দাঁড়িয়েছে ২৫৯ কোটি ২১ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রায় ১০৫ শতাংশ ব্যয় বেড়েছে। এরপর দেড় বছর সময় ব্যয় হয়েছে শুধু দরপত্র প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে। বর্তমানে এর কাজ শুরু হলেও তা চলছে ধীরগতিতে।

এ সড়কের কাজ সম্পন্নের বিষয়ে কেডিএ চেয়ারম্যান ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এসএম মিরাজুল ইসলাম বলেন, অর্থ ছাড় ও জায়গা অধিগ্রহণ জটিলতা, নকশা পরিবর্তনসহ নানা কারণে সময় বেড়েছে। তবে কাজ শুরু হয়েছে, আশা করছি শেষ হয়ে যাবে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে।

প্রকল্প বাস্তবায়নে এমন দীর্ঘসূত্রতা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খুলনার নাগরিক নেতারা। বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ উজ জামান বলেন, সময় ও ব্যয় বাড়লে সংশ্লিষ্টদের অনিয়ম করতে সুবিধা হয়। প্রকল্প দেখাশোনার বিষয়ে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাদের তদারকির অভাব রয়েছে। যে কারণে দফায় দফায় সময় বৃদ্ধি পায়। এতে জনগণের অর্থের অপচয় ঘটে। তাই কোটি কোটি টাকা গচ্চা দেওয়ার রীতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।

সূত্রঃ যুগান্তর


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।