শিরোনাম

জনবল সংকটে আটকে গেছে রেলওয়ের চার অঞ্চলে বিভক্তি

জনবল সংকটে আটকে গেছে রেলওয়ের চার অঞ্চলে বিভক্তি

বর্তমানে রেলওয়ের জনবলের প্রায় ৩৯ শতাংশ পদ শূন্য। উচ্চ আদালতে মামলার কারণে গত কয়েক বছরে বিজ্ঞপ্তি দিয়েও বিভিন্ন পদে লোকবল নিয়োগ দিতে পারেনি সংস্থাটি। এর মধ্যে অবসরে গেছেন প্রচুর কর্মী। এছাড়া বেড়েছে ট্রেন ও স্টেশনের সংখ্যা এবং রেলপথের দৈর্ঘ্য। এতে সেবার মান নিয়ে জটিলতার মুখে পড়েছে রেলওয়ে।

এরই মধ্যে রেলওয়ের দুটি অঞ্চল ও চারটি পরিচালন বিভাগকে ভেঙে চারটি অঞ্চল ও আটটি পরিচালন বিভাগ করা হচ্ছে। এগুলো পরিচালনার জন্য বিদ্যমান শূন্য পদ পূরণ করার পরও আরও ১৭ হাজার ৩১২ জন নিয়োগ দেওয়া লাগবে। এ অবস্থায় রেলওয়েকে চার অঞ্চলে বিভক্ত করা নিয়ে সংকট দেখা দিয়েছে। সম্প্রতি রেলপথ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ তথ্য উঠে আসে।

বৈঠকে জানানো হয়, ২০১৪ সালের ১৩ অক্টোবর রেলপথ মন্ত্রণালয় পরিদর্শনের সময় প্রধানমন্ত্রী রেলওয়েকে চারটি অঞ্চলে বিভক্ত করার নির্দেশ দেন। এজন্য পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। রেলওয়েকে চার অঞ্চলে ভাগ করে পরিচালনার জন্য ওই পরামর্শক ৫৭ হাজার ৫৮৭ জনের সাংগঠনিক কাঠামোর প্রয়োজন বলে সুপারিশ করে।

এদিকে রেলওয়ে সংস্কার প্রকল্পের আওতায় প্রাইসওয়াটারহাউস কুপারস রেলওয়ের বিদ্যমান জনবলকে ৫০ হাজার ২৭৫ জনে উন্নীত করার সুপারিশ করে। যদিও বর্তমানে রেলের সাড়ে ১৫ হাজারের বেশি পদ শূন্য রয়েছে। এতে বেশকিছু স্টেশন বন্ধ করে দিয়েছে রেলওয়ে। আবার গেটকিপার ছাড়া ঝুঁকি নিয়ে লেভেল ক্রসিং দিয়ে যাতায়াত করছে ট্রেন।

তথ্যমতে, রেলওয়ের চার অঞ্চলের মধ্যে বর্তমান পূর্বাঞ্চল ও পশ্চিমাঞ্চলের হেড কোয়ার্টার চট্টগ্রাম ও রাজশাহীতেই থাকবে। তবে পূর্বাঞ্চলের অধীনে চট্টগ্রাম ও সিলেট পরিচালন বিভাগ থাকবে। আর পশ্চিমাঞ্চলের অধীনে থাকবে পাকশী ও লালমনিরহাট। এর বাইরে ময়মনসিংহ ও ঢাকা পরিচালন বিভাগকে নিয়ে গঠন করা হবে উত্তরাঞ্চল, যার হেডকোয়ার্টার হবে ময়মনসিংহ। আর রাজবাড়ী ও খুলনা পরিচালন বিভাগ নিয়ে গঠন করা হবে দক্ষিণাঞ্চল, যার হেডকোয়ার্টার হবে ফরিদপুরে।

বৈঠকে উপস্থিত রেলওয়ের অপারেশন বিভাগের এক কর্মকর্তা জানান, ট্রাফিক বিভাগে বর্তমানে লোকবলের চরম সংকট রয়েছে। নতুন রেলপথ নির্মাণের পর সেগুলোয় ট্রেন পরিচালনার জন্য তা অপারেশন বিভাগের কাছে ন্যস্ত করা হয়। তবে অপারেশনাল কাজ চালাতে গিয়ে কোনো কোনো স্টেশনে তিন শিফটে কাজ করতে হচ্ছে। তাই লোকবল বৃদ্ধি করার জরুরি। এর মধ্যে নতুন অঞ্চল যুক্ত হলে এ চাপ আরও বাড়বে।
এদিকে রেলওয়েকে চার অঞ্চলে বিভক্ত হলে ভূসম্পত্তি বিভাগ, স্টোর বিভাগ ও রেলওয়ে নিরাপত্তা বিভাগে ব্যাপক চাপ তৈরি হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। এসব ক্ষেত্রেও নতুন জনবল ছাড়া চার অঞ্চলের অপারেশনাল কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব নয় বলে বৈঠকে মতামত দেওয়া হয়।
রেলপথ সচিব মো. মোফাজ্জেল হোসেন এ প্রসঙ্গে বলেন, রেলওয়ের বিদ্যমান জনবলকে ৫০ হাজার ২৭৫ জনে উন্নীত করার প্রস্তাব অনুমোদনের জন্য এরই মধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। এটি অনুমোদনের পর চার অঞ্চলে বিভক্তি ও তা পরিচালনার জন্য ৫৭ হাজার ৫৮৭ জনের নতুন সাংগঠনিক কাঠামো অনুমোদনের প্রস্তাব জনপ্রশাসনে পাঠানো হবে। সাংগঠনিক কাঠামো অনুমোদনের পরই নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হবে। এছাড়া বিদ্যমান শূন্য পদগুলোতেও নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে।

তথ্যমতে, বর্তমানে রেলওয়ের অনুমোদিত জনবল রয়েছে ৪০ হাজার ২৭৫টি। তবে কর্মরত রয়েছে মাত্র ২৪ হাজার ৬২২ জন। অর্থাৎ ১৫ হাজার ৬৫৩টি পদ শূন্য। তবে শূন্যপদ পূরণে মাত্র দুই হাজার ৪৯৩টি জনের নিয়োগ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

বর্তমানে রেলওয়েতে প্রথম শ্রেণির পদ রয়েছে ৫৬৩টি। এর মধ্যে কর্মরত রয়েছেন ৪০৮ জন। আর ১৫৫টি বা ২৭ দশমিক ৫৩ শতাংশ পদ শূন্য। দ্বিতীয় শ্রেণির পদ শূন্য রয়েছে ৬৯৮টি বা ৪৪ শতাংশ। বর্তমানে এক হাজার ৫৮৭টি দ্বিতীয় শ্রেণির পদের মধ্যে কর্মরত রয়েছেন ৮৮৯ জন।
বর্তমানে রেলে সবচেয়ে বেশি শূন্য রয়েছে তৃতীয় শ্রেণির জনবল। এ শ্রেণির অনুমোদিত পদ রয়েছে ২১ হাজার ৬৪৪টি। এর মধ্যে কর্মরত রয়েছেন ১২ হাজার ৬০৩ জন। শূন্য রয়েছে ৪২ শতাংশ বা ৯ হাজার ৪১টি পদ। এছাড়া চতুর্থ শ্রেণির পদ শূন্য রয়েছে পাঁচ হাজার ৭৫৯টি বা ৩৫ শতাংশ। রেলের এ শ্রেণির পদ রয়েছে ১৬ হাজার ৪৮১টি। তবে কর্মরত রয়েছেন ১০ হাজার ৭২২ জন।

এদিকে জনবল সংকটের কারণে সারা দেশে রেলের ৪৩৭টি স্টেশনের মধ্যে ১৩৯টি বন্ধ। এর মধ্যে পূর্বাঞ্চলে বন্ধ রয়েছে ৫৬টি ও পশ্চিমাঞ্চলে ৮৩টি। এছাড়া সারা দেশে রেলের এক হাজার ৪০২টি লেভেল ক্রসিংয়ের মধ্যে ৯৪৬টিতে কোনো গেটকিপার নেই। এর মধ্যে পূর্বাঞ্চলে গেটকিপারবিহীন অরক্ষিত ক্রসিং রয়েছে ৪৩৪টি ও পশ্চিমাঞ্চলে ৯৬৮টি।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মামলাজনিত জটিলতায় দীর্ঘদিন রেলের নিয়োগ প্রক্রিয়া বন্ধ ছিল। এর মধ্যে প্রচুর কর্মী অবসরে গেছেন। এতে রেলে বড় ধরনের শূন্যতা তৈরি হয়েছে। যদিও ২০১০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৯ বছরে ১১ হাজার ৭৯০ জন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তা না হলে ট্রেন পরিচালনা কষ্টকর হয়ে যেত।

সুত্র:শেয়ার বিজ, মার্চ ৬, ২০১৯


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.