।। নিউজ ডেস্ক ।।
রাজধানীর কমলাপুর ও রাজশাহী রেলস্টেশনে আলাদা দুটি ‘স্বয়ংক্রিয় ট্রেন ওয়াশিং প্ল্যান্ট’ উদ্বোধন করা হয় স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে ট্রেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কাজের জন্য। কিন্তু উদ্বোধনের পর পরই প্ল্যান্টে তালা ঝুলিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। কার্যক্রম আপাতত বন্ধ। আগের মতোই আলাদা প্ল্যাটফর্মে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে চলছে ট্রেন ধোয়ামোছার কাজ।
তবে ট্রেন ওয়াশিং প্ল্যান্ট প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্ল্যান্ট দুটিতে প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কোনো কাজ বাকি নেই। যন্ত্রপাতি সব সচল রয়েছে। এখন প্ল্যান্ট দুটি রেলওয়ের অপারেশন বিভাগে হস্তান্তরের কাজ চলছে। শিগগির ট্রেন পরিষ্কারের কাজ শুরু হবে।
গত সেপ্টেম্বরে প্ল্যান্ট স্থাপনের পর পরীক্ষামূলকভাবে ট্রেন পরিষ্কার করা হয়। এরপর গত ৮ নভেম্বর আনুষ্ঠিকভাবে প্ল্যান্ট দুটি উদ্বোধন করেন রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। ওই দিন একটি ট্রেন যাত্রী নামানোর পর ট্রেনের বগিগুলোর উভয় পাশ, ছাদ, আন্ডার গিয়ার সুচারুভাবে পরিষ্কার করা হয়।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, আগে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে হাত ও ব্রাশ দিয়ে ঘষে ট্রেনের ভেতর এবং বাইরের অংশ পরিষ্কার করা হতো। এতে বগি ঠিকমতো পরিষ্কার হতো না। বিভিন্ন অংশে কালো দাগ পড়তো। এখন আধুনিক পদ্ধতিতে প্ল্যান্টে ট্রেন ঢুকলেই জানালা-দরজা লাগিয়ে ওয়াশিং পাউডার ও পানি দিয়ে অটোমেটিক পদ্ধতিতে পরিষ্কার হয়ে আরেক দিক দিয়ে বেরিয়ে আসবে। এটি একটি পরিবেশবান্ধব ও ব্যয়সাশ্রয়ী প্রকল্প। স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরিষ্কার করায় ট্রেনের বগিগুলো চকচক দেখাবে। যে কোনো অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে প্ল্যান্ট অটোমেটিক বন্ধ হয়ে যাবে।
‘এ প্ল্যান্ট প্রতিদিন কমপক্ষে এক লাখ লিটার পানি সাশ্রয় করবে, যা ব্যবহৃত পানির ৭০ শতাংশই রি-সাইকেল করে পুনরায় ব্যবহার উপযোগী করা সম্ভব হবে।’
কমলাপুর রেল স্টেশনের ১ নম্বর প্ল্যাটফর্ম দিয়ে বরাবর উত্তর দিকে প্রায় ৫শ মিটার এগিয়ে গেলেই দেখা মিলবে এই ওয়াশিং প্ল্যান্ট। রোববার (১৪ নভেম্বর) সরেজমিনে দেখা যায়, উত্তর-দক্ষিণে লম্বালম্বিভাবে স্টিলের কাঠামোর ঘরের ভেতর এই প্ল্যান্ট স্থাপন করা হয়েছে। এর উত্তর পাশ দিয়ে ট্রেন ঢুকে দক্ষিণ দিক দিয়ে বের হওয়ার লাইন রয়েছে। তবে প্ল্যান্টটির বা ঘরের দুপাশে ফটকে তালা লাগানো। বাইরে আরকটি ঘরের সামনে বড় পানির ট্যাংক, পাইপসহ বিভিন্ন ধরনের যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়েছে। সেগুলোতেও তালা লাগানো রয়েছে।
এর পাশে আলাদা একটি প্ল্যাটফর্মে ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে হুইল পাউডার ও ব্রাশ দিয়ে ট্রেন পরিষ্কার করছেন শ্রমিকরা। একেকটি ট্রেন পরিষ্কার করতে তাদের ৪০ থেকে ৫০ মিনিট সময় লাগছে। তবে ট্রেনের নিচের অংশ তারা পরিষ্কার করতে পারছেন না।
শ্রমিকদের একজনের নাম আবু তাহের। তিনি জানান, তাদের শুধু ট্রেনের দুপাশ ও উপরের অংশ পরিষ্কার করতে বলা হয়েছে। ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে ট্রেনের নিচের অংশ পরিষ্কার করা সম্ভব হয় না। ওয়াশিং প্ল্যান্টের চারপাশে পরিষ্কার করা সম্ভব হয়। তবে কী কারণে প্ল্যান্টের কাজ বন্ধ তা জানি না।
রেলওয়ের সংশ্লিষ্টরা জানান, এখন ট্রেনের প্রতিটি বগি পরিষ্কার করতে গড়ে এক হাজার ৫০০ লিটার পানি খরচ হয়। স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতে পরিষ্কার করা হলে পানি লাগবে মাত্র ৬০ লিটার। এতে সাশ্রয় হবে এক হাজার ৪৪০ লিটার পানি। এছাড়া ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে হাত ও ব্রাশ দিয়ে ঠিকমতো ট্রেন পরিষ্কার হতো না। ট্রেনের গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রাংশে মরিচা ধরে যেত। এমন পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্যই এই ওয়াশিং প্ল্যান্ট স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে।
বর্তমানে দেশে রেলওয়েতে এক হাজার ২১৭টি মিটারগেজ ও ৪৬৭টি ব্রডগেজ কোচ রয়েছে। শিগগির আরও ৩৫০টি মিটারগেজ এবং ৩০০টি ব্রডগেজ নতুন ট্রেন চালু হবে। এসব নতুন ট্রেন চালু হলে এই প্ল্যান্টের মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে ট্রেনের কোচ পরিষ্কার করা সম্ভব হবে।
স্বয়ংক্রিয় ট্রেন ওয়াশিং প্ল্যান্টের প্রকল্প কর্মকর্তা ফকির মহিউদ্দিন বলেন, প্রকল্প হস্তান্তর করার জন্য সব কাগজপত্র তৈরি আছে। আগামী দু-একদিনের মধ্যেই রেলওয়ের অপারেশন বিভাগে প্রকল্পটির হস্তান্তর করা হবে। প্রকল্পটির পরিচালনা করার জন্য অপারেশন বিভাগের কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
হস্তান্তর প্রক্রিয়া শেষ না করে কেন প্রকল্প উদ্বোধন করা হলো- এমন প্রশ্নের জবাবে ফকির মহিউদ্দিন বলেন, উদ্বোধনের দিন থেকেই প্রকল্পটি পরিচালনা করা যেত। এজন্য সবকিছুই প্রস্তুত ছিল। কিন্তু রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা চেয়েছেন, হস্তান্তরের পরে কার্যক্রম শুরু হবে।
সূত্রঃ জাগোনিউজ২৪