নিউজ ডেস্ক:
চরম ঝুঁকিতে রয়েছে যাত্রীবাহী ট্রেন। পর্যাপ্তসংখ্যক পুলিশ ফোর্স না থাকায় সব ট্রেনে নিরাপত্তা দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কর্মকর্তাসহ প্রায় আড়াই হাজারের জনবল নিয়ে রেলওয়ে পুলিশের অধীনে ৩৪৭টি যাত্রীবাহী ট্রেন পরিচালিত হয়। এরমধ্যে আন্তঃনগর ১০৪টি, মেইল, এক্সপ্রেস ও ডেমু ১২০টি এবং লোকাল ১৩৫টি ট্রেনের নিরাপত্তা কার্যক্রম পরিচালনা করে। ফলে আন্তঃনগর ট্রেনের নিরাপত্তায় তিন থেকে চার জন পুলিশ কনস্টেবল দেওয়া হলেও লোকাল ও কমিউটারে কোনো পুলিশ সদস্যই দিতে পারে না রেলওয়ে পুলিশ। সম্প্রতি ময়মনসিংহগামী একটি কমিউটার ট্রেনে ডাকাতি ও যাত্রী খুন হওয়ার পর ট্রেনের নিরাপত্তার বিষয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যাত্রীবাহী ট্রেনের নিরাপত্তা আরো জোরদারের দাবি জানিয়েছেন যাত্রীরা।
বাংলাদেশ রেলওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি মোর্শেদ আলম বলেন, জনবল সংকটে রয়েছে রেলওয়ে পুলিশে। এ কারণে লোকাল ও কমিউটার ট্রেনে নিরাপত্তা দেওয়া যাচ্ছে না। শুধু আন্তঃনগর ও এক্সপ্রেস ট্রেনে ফোর্স দেওয়া হয়। তা-ও আবার তিন থেকে চার জন। তিনি বলেন, রেলওয়ের নিরাপত্তার পাশাপাশি রেলওয়ে পুলিশকে অনেক কিছুই দেখভাল করতে হয়। যে জনবল রয়েছে তাদের মধ্যে গড়ে ১০০ থেকে ১৫০ জন থাকে ছুটিতে। তবে আরো ২ হাজার জনবল পাওয়ায় চেষ্টা চলছে। ঐ জনবল পাওয়া গেলে নিরাপত্তা ফোর্স বাড়ানো সম্ভব হবে।
রেলওয়ে পুলিশ সূত্র জানায়, রেললাইন ছাড়াও রেলস্টেশন ও রেলওয়ের ভেতরের অপরাধ দমনও এই বাহিনীর দায়িত্বে। রেললাইনের নির্দিষ্ট এলাকার বাইরে তাদের কোনো কাজ নেই। তবে নির্দিষ্ট ঐ এলাকার মধ্যেই অনেক ঘটনাই ঘটে। এসব দেখতে হয় রেলওয়ে পুলিশকে। প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো এলাকায় ট্রেনে কাটা পড়ে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে। ঘটছে ট্রেন দুর্ঘটনাও। এ সব কিছুই দেখভাল করতে হয় রেল পুলিশকে। এছাড়া রেলওয়ে পুলিশ ট্রেনের নিরাপত্তার পাশাপাশি মামলার তদন্ত, আদালতে সাক্ষ্য দেওয়া, মাদক উদ্ধারের অভিযান, প্রশাসনিক কাজ, স্টেশনের নিরাপত্তাসহ আরো কিছু কাজ করে। এসবের মধ্যেই যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হয়।
জানা গেছে, ২৩ সেপ্টেম্বর বিকালে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ছেড়ে যাওয়া দেওয়ানগঞ্জগামী ৫১ নম্বর কমিউটার ট্রেনটি গফরগাঁও রেলওয়ে স্টেশন ছেড়ে এলে সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সদস্যরা ছাদে ভ্রমণরত যাত্রীদের ওপর হামলা চালায়। এতে দুই যুবক নিহত হন। এ নিয়ে ময়মনসিংহ রেলওয়ে থানায় মামলা হয়েছে। এখন পর্যন্ত সন্দেহভাজন কয়েক জনকে ধরা হয়েছে।
প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ট্রেনে ডাকাতির ঘটনা ইতিমধ্যে তদন্ত শুরু করেছে রেলওয়ে পুলিশ। ট্রেনটিতে ছাদে ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীরা গন্তব্যে যাচ্ছিল। করোনা মহামারিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ট্রেনে ওঠার কথা থাকলেও যাত্রী ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ কেউ তা মানেনি। এতেই ডাকাতির ঘটনা ঘটছে বলে মনে করছে রেলওয়ে পুলিশ ও বাংলাদেশ রেলওয়ে। কেউ ছাদে না উঠলে এমন ঘটনা ঘটত না বলেই তারা মনে করছে।
বাংলাদেশ রেলওয়ে পুলিশের ঢাকার পুলিশ সুপার (এসপি) সাইফুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমরা আন্তঃনগর ট্রেনে পুলিশ দিয়ে থাকি। এসব ট্রেনে অস্ত্রসহ তিন জন কনস্টেবল দিতে পারি। কখনো কখনো এএসআই বা এসআইরাও থাকেন। তবে কমিউটারে বা মেইলে ফোর্স দিতে পারি না। কারণ আমাদের ফোর্সের স্বল্পতা।
রেলওয়ে পুলিশের এ কর্মকর্তা আরো বলেন, নিরাপত্তার বিষয়টি আমরা গোয়েন্দা তথ্য ও প্রয়োজন অনুসারে করে থাকি। যখন কোনো তথ্য থাকে তখন সেসব ট্রেনে নিরাপত্তা বৃদ্ধি করা হয়। ময়মনসিংহগামী যে ট্রেনটিতে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে তাতে তারা ফোর্স দিতে পারেননি বলেও জানান তিনি। যাত্রীদের ছাদে উঠে না যাওয়ার অনুরোধও করেন তিনি।
সূত্র:ইত্তেফাক, ০২ অক্টোবর, ২০২১