শিরোনাম

১৭৯ কিলোমিটারে ঝুঁকিপূর্ণ ১৩ সেতু

১৭৯ কিলোমিটারে ঝুঁকিপূর্ণ ১৩ সেতু

হুমায়ূন রশিদ চৌধূরী:

সিলেট-আখাউড়া রেল সেকশনের ১৭৯ কিলোমিটার দীর্ঘ রেল লাইনের ১৩টি সেতু ঝুঁকিপূর্ণ বলে অভিযোগ রয়েছে। এতে ব্যহত হচ্ছে রেল চলাচল। প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে।

এই রুটে চলাচলকারী ১৫টি ট্রেনে প্রতিদিন ১৫ হাজার যাত্রী যাতায়াত করে থাকেন। সূত্র মতে, আখাউড়া-সিলেট রেল সেকশনে রেল যোগাযোগ চালু হয় ব্রিটিশ শাসন আমলে। পরে রেলপথে বড়ো ধরনের কোনো সংস্কার হয়নি। যখনই কোনো দুর্ঘটনা ঘটে, তখনই কিছুদিন সংস্কারের তোড়জোড় চলে। রেলওয়ের একটি সূত্র নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানায়, এইভাবে সংস্কারের নামে সরকারের বিপুল পরিমাণ টাকার অপচয় হচ্ছে। সিংস্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, সিলেট-আখাউড়া সেকশনে পূর্বে ট্রেনের গতি ছিল ৭০-৮০ কিলোমিটার। কিন্তু এখন দুর্ঘটনার ভয়ে ৪০ কিলোমিটার গতিতে চালাতে হচ্ছে। কোনো কোনো স্থানে গতি আরো কম।

রেলওয়ে প্রকৌশল শাখার সূত্র জানায়, আখাউড়া-সিলেট রেলপথের ১৭৯ কিলোমিটারের মধ্যে ১৩টি সেতু ঝুঁকিপূর্ণ। ২০১৮ এর ২৯ মার্চ হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার ইটাখোলা এলাকার ৫৬ নম্বর সেতু বৃষ্টিতে মাটি সরে গেলে সেখানে তখন ভয়াবহ পরিস্থির সৃষ্টি হয়। তারপর থেকে ঐ সেতুর ওপর দিয়ে খুব ধীরে চালানো হচ্ছে ট্রেন। সিলেট রেলওয়ে স্টেশনে কর্মরত এক প্রকৌশলী জানান, এর মধ্যে মাইজগাঁও-ভাটেরাবাজার সেকশনের ২৯নং সেতুতে ডেড স্টপ জারি করা হয়েছে।

সিলেট-আখাউড়া সেকশনের অতিঝুঁকিপূর্ণ সেতুগুলোর মধ্যে রয়েছে শমশেরনগর-টিলাগাঁও সেকশনের ২০০ নম্বর সেতু, ভানুগাছ-শ্রীমঙ্গল সেকশনের ১৫৭ নম্বর সেতু, সাতগাঁও-শ্রীমঙ্গল সেকশনের ১৪১ নম্বর সেতু, মনতলা-ইটাখোলা সেকশনের ৫৬ নম্বর সেতু, মাইজগাঁও-ভাটেরাবাজার সেকশনের ২৯ নম্বর সেতু, কুলাউড়া-বরমচাল সেকশনের ৫ ও ৭ নম্বর সেতু, মোগলাবাজার-মাইজগাঁও সেকশনের ৪৩, ৪৫ ও ৪৭ নম্বর সেতু। এই পথের অনেক স্থানেই রেল পথের স্লিপারে পাথর না থাকা এবং নাট-বল্টু চুরি যাওয়ার কারণে স্লিপার নড়বড়ে হয়ে গেছে। অনেকগুলোতেই স্লিপারের নড়াচড়া বন্ধে বাঁশ ও কাঠের গোঁজ দিয়ে মেরামত করা হয়েছে।

সূত্র মতে, গত একবছরে এই সেকশনে ঘটেছে অন্তত ১৫টি দুর্ঘটনা। এসব দুর্ঘটনায় প্রাণহানীসহ আহত হয়েছেন অনেকে। মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় গত একবছরে রেলপথে দুর্ঘটনায় নারী-পুরুষ এবং শিশুসহ মারা গেছেন ২১ জন। গত ২৩ জুন রাতে কুলাউড়া উপজেলার বরমচাল স্টেশনে উপবন এক্সপ্রেস ট্রেন দুর্ঘটনায় ৪ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। আহত হন ৬৭ জন। ওই দুর্ঘটনায় আন্তঃনগর উপবন এক্সপ্রেসের ৪টিবগি লাইনচ্যুত হয়ে দুমড়েমুচড়ে খালে ও রেল লাইনের পাশে পড়ে যায়।

এদিকে, সিলেট রেল পথের দুর্ঘটনা ও দুর্ভোগ গত বছর জুড়েই ছিল আলোচনার শীর্ষে। ৫ এপ্রিল রাতে মাইজগাঁও স্টেশন এলাকায় শাহজালাল সারকারখানা থেকে সার বহনকারী বিসি স্পেশাল ট্রেনের বগিটি লাইনচ্যুত হয়ে সিলেটের সঙ্গে সারাদেশের যোগাযোগ কয়েক ঘণ্টা বন্ধ থাকে। ১৬ মে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার মল্লিকপুর এলাকায় জালালাবাদ এক্সপ্রেস ট্রেনের ১টি বগি লাইনচ্যুত হয়। এর আগে ২০১৮ এর ২৮ মার্চ মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় সিলেট থেকে চট্টগ্রামগামী তেলবাহী ১টি ট্রেন লাইনচ্যুত হয়ে সিলেটের সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ ২ ঘণ্টা বন্ধ থাকে। ঐ বছরের ৭ এপ্রিল একদিনে ২ বার দেখা দেয় যান্ত্রিক ত্রুটি। কুলাউড়ার-মাইজগাঁও রেলওয়ে স্টেশনে পারাবত এক্সপ্রেসের বগি ও ইঞ্জিনের সংযুক্তস্থলের বাফার রিং ভেঙে গেলে বগির সঙ্গে ইঞ্জিন বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এতে ২ ঘণ্টা আটকে থাকে পারাবত। একইদিন আবার ঢাকাগামী আন্তঃনগর উপবন এক্সপ্রেস রাত সাড়ে ১১টার দিকে কুলাউড়া স্টেশনের পরবর্তী লংলা স্টেশন অতিক্রমকালে ট্রেনের বগি ও চাকার সংযুক্ত ১টি লোহার রড ভেঙে যায়। একই বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি রাতে শ্রীমঙ্গল উপজেলার সাতগাঁও এলাকায় উপবন এক্সপ্রেসের বগি লাইনচ্যুত হয়। যান্ত্রিক ত্রুটি, বগি লাইনচ্যুত হওয়া, বগি থেকে ইঞ্জিন খুলে যাওয়ার মতো ঘটনা ঘটছে নিয়মিত।

সুত্র:ইত্তেফাক, ০৪ জানুয়ারি, ২০২০


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.