শিরোনাম

ডাবল লাইন করা যাচ্ছে না চাষাঢ়া-নারায়ণগঞ্জ রেলপথ

ডাবল লাইন করা যাচ্ছে না চাষাঢ়া-নারায়ণগঞ্জ রেলপথ

ইসমাইল আলী: ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথ ডাবল লাইন নির্মাণ প্রকল্প নেয়া হয় ২০১৫ সালে। প্রকল্পটির আওতায় জুরাইন থেকে নারায়ণগঞ্জ বন্দর পর্যন্ত ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণের কথা ছিল। এজন্য নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের (নাসিক) কিছু জমি প্রয়োজন। তা হস্তান্তরে নাসিক কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়। মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভি সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠকও করেন রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন।

যদিও রেলপথমন্ত্রীর অনুরোধের কোনো গুরুত্বই দেয়নি মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভি। এতে বাধ্য হয়ে জুরাইন-চাষাঢ়া অংশ ডাবল লাইন করতে হচ্ছে। আর পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের আওতায় ডাবল লাইন হচ্ছে কমলাপুর-জুরাইন অংশটি। তবে চাষাঢ়া থেকে নারায়ণগঞ্জ নৌবন্দর পর্যন্ত দুই কিলোমিটার ডাবল লাইন করা যাচ্ছে না।

সম্প্রতি প্রকল্পটির সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবনা (আরডিপিপি) পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ খুবই ব্যস্ততম রুট। অনেকেই নারায়ণগঞ্জ থেকে ঢাকা এসে লেখাপড়া বা চাকরি করছেন। এতে রুটটিতে আগামীতে ট্রেনের সংখ্যা বাড়াতে হবে। তবে পুরো রেলপথটি ডাবল লাইন না হলে প্রকল্পটির সুফল পুরোপুরি মিলবে না।

সূত্রমতে, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথের লেভেল ক্রসিং গেট নং টি-১ ও টি-২-এর মাঝে ৩০০ মিটার দৈর্ঘ্যে আরএস নকশা অনুযায়ী রেললাইনের বাম পাশে সাত-আট ফুট জায়গা রয়েছে। সেখানে ডুয়েলগেজ লাইন নির্মাণ অসম্ভব। এজন্য শূন্য দশমিক ৫১ একর জমি দরকার। এতে আনুমানিক ব্যয় হবে ৮৩ কোটি ৭৬ টাকা। আর স্থাপনা অপসারণে ক্ষতিপূরণ বাবদ আরও ৪৯ কোটি ৭৫ লাখ টাকা ব্যয় হবে। সব মিলিয়ে ব্যয় হবে ১৩৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা।

যদিও প্রকল্পটিতে এ খাতে কোনো বরাদ্দ ছিল না, তাই জমি অধিগ্রহণ এড়াতে ওই অংশটির জন্য পৃথক সমীক্ষা পরিচালনা করা হয়। এতে নাসিকের মালিকানাধীন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী সড়ক থেকে ৯০০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১৮ ফুট প্রস্থ ভূমি রেললাইন নির্মাণের জন্য রেলের বরাবর হস্তান্তরের সুপারিশ করা হয়। নাসিক মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভি প্রাথমিকভাবে এ প্রস্তাবে সম্মত হলেও পরে জমি দিতে অস্বীকৃতি জানান।

এর পরিপ্রেক্ষিতে রেলপথমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন সরাসরি প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেন। পরে ২০১৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর আবার আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক করে রেলপথ মন্ত্রণালয়। এতে অনুরোধ করলে আইভী রহমান ৯০০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১২ ফুট প্রস্থ জমি দিতে সম্মত হন। কিন্তু এখনও সে জমি আর হস্তান্তর করেনি সিটি করপোরেশন। এতে চাষাঢ়া থেকে ৩০০ মিটার অংশে ডাবল লাইন নির্মাণে শূন্য দশমিক ৫১ একর জমি অধিগ্রহণ করতেই হবে। আর ওই অংশে টিনশেড থেকে সাততলা ভবন পর্যন্ত রয়েছে। এগুলোর ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে। সব মিলিয়ে প্রায় ১৩৩ কোটি ৫১ লাখ টাকা দরকার হবে।

এ বিষয়ে গত বছর ১৮ জুলাই রেলপথ সচিবের সভাপতিত্বে একটি বৈঠক আহ্বান করা হয়। এতে জানানো হয়, প্রস্তাবিত জমি আগে রেলের জন্য অধিগ্রহণ করা হয়েছিল। তবে পরবর্তীকালে সিএস ও আরএস জরিপে এগুলো স্থানীয় জনগণের নামে রেকর্ড করা হয়ে যায়। তাই অধিগ্রহণকৃত জমি আবার অধিগ্রহণ করতে গেলে অডিট আপত্তি উঠতে পারে। ফলে চাষাঢ়া থেকে নারায়ণগঞ্জ অংশটি ডাবল লাইন হবে না।

জানতে চাইলে প্রকল্পটির পরিচালক মো. সেলিম রউফ শেয়ার বিজকে বলেন, জুরাইন থেকে চাষাঢ়া পর্যন্ত বিদ্যমান রেলপথ ডাবল লাইন করা হলেও জমি অধিগ্রহণজনিত সমস্যার কারণে চাষাঢ়া থেকে নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত অংশটি ডাবল লাইন করা যাচ্ছে না। তাই ওই দুই কিলোমিটার অংশে বিদ্যমান মিটারগেজ লাইনকেই ডুয়েলগেজ করা হচ্ছে। জমি সমস্যার সমাধান হলে পরে পৃথক প্রকল্পের আওতায় বাকি অংশ ডাবল লাইন করা হবে।

উল্লেখ্য, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ ডাবল লাইন নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ৩৭৮ কোটি ৬৬ লাখ টাকা। এর মধ্যে জাপানের অনুদান রয়েছে ২৪৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। বাকি ১২৯ কোটি ১১ লাখ টাকা সরকারের তহবিল থেকে সররবাহ করা হবে। তবে সংশোধিত হিসাবে প্রকল্পটির ব্যয় দাঁড়িয়েছে ৬৩২ কোটি ৭৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ রেলপথটির নির্মাণব্যয় বাড়ছে ২৫৪ কোটি ১৩ লাখ টাকা বা ৬৭ দশমিক ১১ শতাংশ। যদিও প্রকল্পটিতে বাড়তি কোনো অর্থ দিতে রাজি নয় জাপান সরকার। ফলে ব্যয় বৃদ্ধির পুরোটাই সরকারি তহবিল থেকে সরবরাহ করতে হবে।

আরডিপিপিতে ব্যয় বৃদ্ধির যুক্তি হিসেবে বলা হয়েছে, প্রকল্পটির আওতায় বিদ্যমান মিটারগেজ রেললাইনের সমান্তরালে একটি ডুয়েলগেজ লাইন নির্মাণকাজ চলছে। নতুন ডুয়েলগেজ লাইনটি বিদ্যমান রেললাইনের চেয়ে অনেক উঁচু। এতে বিদ্যমান স্ট্রাকচারে অসম ভার্টিকাল লেভেল দেখা দেবে। ফলে স্টেশন, সেতু, প্ল্যাটফর্ম ও লেভেল ক্রসিংয়ে জটিলতা বাড়বে। ফলে ট্রেন চলাচলে জটিলতা সৃষ্টি হবে। আবার লেভেল ক্রসিংগুলোয় সাধারণ যানবাহন চলাচলেও সমস্যা সৃষ্টি হবে। এ সমস্যা পরিহারে নতুন একটি প্যাকেজের মাধ্যমে বিদ্যমান মিটারগেজ রেললাইনটিও ডুয়েলগেজে রূপান্তর করতে হবে।

ব্যয় বৃদ্ধির আরও কিছু খাত আরডিপিপিতে তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীদের সুবিধার কথা বিবেচনায় তিনটি নতুন ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) জন্য একটি দোতলা ভবন কাম ব্যারাক নির্মাণ, সরকারি রেলওয়ে পুলিশের (জিআরপি) জন্য একটি দোতলা ভবন কাম ব্যারাক নির্মাণ এবং গেণ্ডারিয়া থেকে চাষাঢ়ার মাঝে পাঁচটি গ্যাং হাট নির্মাণ নতুন করে যুক্ত হয়েছে।

বিদ্যমান রেললাইনটি সংস্কারেও কোনো রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় অন্তর্ভুক্ত ছিল না প্রকল্পটিতে। কিন্তু বাস্তব অবস্থায় কাজ করতে গিয়ে কিছু অংশ রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয়েছে। আবার জুরাইন থেকে চাষাঢ়া পর্যন্ত ডাবল লাইন নির্মাণের জন্য পরামর্শক চুক্তির মেয়াদ বাড়াতে হবে। সব মিলিয়ে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যাচ্ছে।

সূত্র:শেয়ার বিজ,  ১১ জানুয়ারি ২০২২

About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.