শিরোনাম

দর্শনা রেলবন্দর: ১৫ মাসে রেলের আয় শত কোটি টাকা


।। রেল নিউজ ।।
ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে অল্প দূরত্ব ও স্বল্প ব্যয়ে ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা রেলবন্দর ব্যবসায়ীদের জন্য আশির্বাদ স্বরূপ।

পণ্য আমদানি-রপ্তানির জন্য বন্দরটি দুই দেশের মধ্যে সেতুবন্ধন হয়ে কাজ করছে।

বাণিজ্যিক সুবিধায় এ রেলবন্দরটি ব্যবসায়ীদের কাছে লাভের খনি! দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক রক্ষায় ব্যবসায়ীদের কাছে আকর্ষণীয় পথ দর্শনা রেলবন্দর। এ বন্দর দিয়ে রেলপথে পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে বেশ আগ্রহী দুই দেশের ব্যবসায়ীরা। যাতায়াত ব্যবস্থা ও সময় স্বল্পতার সুবিধা পেতে দর্শনা রেলপথের জুড়ি নেই। এ সীমান্ত পথ দিয়ে লাখ লাখ টন পণ্য আমদানি হচ্ছে নিয়মিত। এতে ব্যবসায়ীদের মধ্যে জাগছে আশার আলো। এ রেলবন্দর ঘিরে মজবুত হচ্ছে স্থানীয় ও জাতীয় অর্থনীতির বাণিজ্যিক ভিত। লাভ থেকে পিছিয়ে নেই রেল বিভাগও। গেল বছরে দর্শনা রেলবন্দর দিয়ে শুধু পণ্য আমদানি করেই শত কোটি টাকা আয় করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
জানা যায়, দেশের চাহিদা পূরণে ভারত থেকে ধান, গম, ভুট্টা, পেঁয়াজ, খৈল, ফ্ল্যাই অ্যাশ, জিপসাম, পাথরসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি করা হয়। এসব পণ্য এলসির মাধ্যমে দেশে নিয়ে আসেন সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ীরা। সড়ক পথ কিংবা রেলপথের মাধ্যমে আনা নেওয়া করা হয় এসব পণ্য। তার মধ্যে চুয়াডাঙ্গার দর্শনা রেলবন্দর দিয়ে দেশে আসে এসব পণ্যের বড় বড় চালান। পণ্য আমদানিতে প্রতিদিনই সরগরম থাকে বন্দর এলাকা।

দর্শনা আন্তর্জাতিক রেলওয়ে স্টেশন কর্তৃপক্ষের তথ্য বলছে, ২০২১ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এ ১৫ মাসে দর্শনা বন্দর দিয়ে ২৩ লাখ ৬৪ হাজার ৭২২ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি করা হয়েছে। রেলযোগে এ পরিমাণ পণ্য আমদানি করে মোট ১০৫ কোটি ৪৫ লাখ ৯৬ হাজার ৪২২ টাকা আয় করেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। যা অন্যান্য বছরের তুলনায় অনেক বেশি। এ সময়ে ভারত থেকে বাংলাদেশে চাল এসেছে এক লাখ ২২ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন, গম তিন লাখ সাত হাজার ২০০ মেট্রিক টন, ভুট্টা দুই লাখ ২৫ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন, পাথর ১১ লাখ ৩০ হাজার ৪০০ মেট্রিক টন, পেঁয়াজ ৩১ হাজার ২০০ মেট্রিক টন, খৈল ৫৫ হাজার ২০০ মেট্রিক টন ও ফ্ল্যাই অ্যাশ এসেছে এক লাখ ৮৪ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, সড়ক পথের তুলনায় রেলপথে পণ্য আমদানি করায় খরচ অনেকটা কমেছে। একই সঙ্গে স্বল্প সময়ে পণ্য দেশে পৌঁছায়। এজন্য বাণিজ্যিক হিসেবে পণ্য আমদানিতে লাভের হিসেব থাকে রেলবন্দর দিয়ে পণ্য পরিবহনে। আর রেলবন্দরের মধ্যে দর্শনা রেলবন্দরটি সব চেয়ে বেশি আকর্ষণীয়। কেননা, এখান থেকে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার দূরত্ব অনেকটাই কম।

দর্শনা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট আতিয়ার রহমান হাবু বলেন, করোনাকালে স্থলবন্দর বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীরা রেলপথের সুবিধা ব্যবহার করেন ব্যাপকভাবে। তখন থেকেই ট্রেনে পণ্য আমদানির পরিমাণ কয়েকগুণ বেড়ে যায়। এখনও রেলপথে পণ্য আনা নেওয়ায় ব্যবসায়ীরা বেশ আগ্রহ দেখাচ্ছেন। এখানে দু’টি বিষয় প্রাধান্য পায়, একটি হচ্ছে, রেলপথে একসঙ্গে বিপুল পরিমাণ পণ্য পরিবহন করা যায়, আরেকটি হলো, সড়ক পথের তুলনায় খরচ ও সময় দু’টিই সাশ্রয় হয়।

ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম জানান, অন্যান্য রেলবন্দরের তুলনায় দর্শনা রেলবন্দরটি ব্যবসায়ীদের কাছে পছন্দের পথ। কেননা, দর্শনার সঙ্গে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ অন্যান্য এলাকার দূরত্ব অনেকটা কম। ট্রেন থেকে পণ্য খালাসের পর ট্রাকে করে অল্প সময়ে পণ্য দেশের বিভিন্ন স্থানে পরিবহন করা হয়। এতে বেশ সুবিধা পাওয়া যায়।

দর্শনা আন্তর্জাতিক রেলওয়ে স্টেশনের সুপারিনটেনন্ডেন্ট মীর লিয়াকত আলী বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ের বড় একটি আয়ের মাধ্যম হচ্ছে পণ্য পরিবহন। আর এ পণ্য পরিবহনে বিশাল ভূমিকা রাখে দর্শনা রেলবন্দর। প্রতি অর্থবছরেই বিপুল অর্থ উপার্জন হয় এ বন্দর ঘিরে। এছাড়া বর্তমানে দর্শনা বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানির পরিমাণও অনেকটা বেড়েছে। যা রেলওয়ে ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে আশা জাগাচ্ছে।

চুয়াডাঙ্গা চেম্বার অব কমার্সের সহ-সভাপতি মঞ্জুরুল আলম মালিক লার্জ বলেন, পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে রেলবন্দরটির যে সক্ষমতা প্রয়োজন, তা বর্তমানে রয়েছে। ভবিষ্যতে যদি পণ্য আমদানি আরও বেড়ে যায়, তাহলে রেলবন্দরটিতে আরও লোকবল বাড়ানোর পরিকল্পনা মাথায় নিতে হবে। এছাড়া বাণিজ্যের সম্ভাবনাময় দর্শনাকে আরও সমৃদ্ধ করতে রেলবন্দরের মাধ্যমে পণ্য আমদানির পাশাপাশি রপ্তানি বাড়ানো গেলে উভয় দেশের রাজস্ব বাড়বে।

সূত্রঃ বাংলানিউজ২৪


Comments are closed.