শিরোনাম

পিপিপিতে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প নিচ্ছে রেলওয়ে!

পিপিপিতে অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প নিচ্ছে রেলওয়ে!

ইসমাইলআলীঅব্যবহৃত জমির মাধ্যমে আয় বাড়াতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বে (পিপিপি) বেশকিছু প্রকল্প হাতে নিয়েছে রেলওয়ে। তবে এসব প্রকল্পের বেশিরভাগেরই রেলওয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা নেই। এছাড়া প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন তদারকির জন্য রেলওয়ের কোনো পিপিপি সেল নেই। আবার পিপিপিতে বাস্তবায়নাধীন এসব প্রকল্প দেখাশোনার জন্য রেলওয়ের কোনো জনবলও নেই। তাই পিপিপিতে এ ধরনের অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প গ্রহণে আপত্তি উঠেছে।

সম্প্রতি রেলপথ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে এ তথ্য উঠে আসে। এতে জানানো হয়, মূল কাজ-বহির্ভূত পিপিপি প্রকল্প রেলের জন্য কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা বিশদ পর্যালোচনার প্রয়োজন।

তথ্যমতে, পিপিপিতে ১৫টি প্রকল্প নিয়েছে রেলওয়ে। এর মধ্যে মাত্র দুটি প্রকল্প রেলওয়ে পরিচালনা-সংক্রান্ত তথা কোর প্রকল্প। আর তিনটি প্রকল্প মিশ্র ধরনের (কোর ও নন-কোর)। এগুলো কিছুটা বাণিজ্যিক ও কিছুটা রেলওয়ে পরিচালনা-সংক্রান্ত। তবে ১০টি প্রকল্প কোনোভাবেই রেলওয়ে পরিচালনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়। এগুলো নন-কোর প্রকল্প হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

পিপিপির আওতায় রেলওয়ে পরিচালনা-সংক্রান্ত প্রকল্প দুটি হলো গাজীপুরের ধীরাশ্রমে আন্তর্জাতিক কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) নির্মাণ ও ঢাকা শহরের চারদিকে ৮২ কিলোমিটার বৃত্তাকার রেলপথ নির্মাণ। মিশ্র ধরনের প্রকল্প তিনটি হলো ঢাকার বিমানবন্দর রেলস্টেশনে মাল্টিমোডাল হাব নির্মাণ, কমলাপুর রেলস্টেশনে মাল্টিমোডাল হাব নির্মাণ ও চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে আইকনিক ভবন নির্মাণ।

এদিকে পিপিপির আওতায় নেওয়া নন-কোর ১০টি প্রকল্পের মধ্যে চট্টগ্রামেই রয়েছে চারটি। এগুলো হলো রেলের অব্যবহৃত জমিতে ৫০০ শয্যার একটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও জাতীয় ট্রেনিং ইনস্টিটিউট নির্মাণ, একটি পাঁচ তারকা হোটেল নির্মাণ, একটি শপিংমল ও হোটেল কাম রেস্টহাউস নির্মাণ এবং পোলো গ্রাউন্ডে একটি বহুতল আবাসিক কাম বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ।

রাজধানীর কমলাপুর, নীলফামারীর সৈয়দপুর ও পাবনার পাকশীতে অবস্থিত রেলওয়ে কর্মচারী হাসপাতাল তিনটিকে আধুনিকায়নের জন্য পিপিপিতে তিনটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে তিনটিকেই ২৫০ শয্যার হাসপাতাল ও ৫০ শয্যার মেডিকেল কলেজে উন্নীত করা হবে। এছাড়া খুলনায় অব্যবহৃত জমিতে ২৫০ শয্যার একটি আধুনিক মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল নির্মাণে পিপিপিতে আরেকটি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এর বাইরে খুলনায় অব্যবহৃত জমিতে একটি শপিংমল ও হোটেল কাম গেস্টহাউস নির্মাণ এবং সৈয়দপুরে অব্যবহৃত জমিতে রেলওয়ে প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণে আরও দুটি প্রকল্প পিপিপির আওতায় নেওয়া হয়েছে।

তথ্যমতে, পিপিপিতে বাস্তবায়নের জন্য এরই মধ্যে ১২টি প্রকল্প অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি অনুমোদন করেছে। এর মধ্যে আটটি নন-কোর। বাকি তিনটি প্রকল্প অনুমোদনের প্রক্রিয়াধীন, যার মধ্যে দুটি নন-কোর। যদিও পিপিপিতে বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নন-কোর প্রকল্পগুলোর অগ্রগতি নেই বললেই চলে।

বৈঠকে জানানো হয়, পিপিপিতে বাস্তবায়নের জন্য সাড়ে ছয় বছরে নন-কোর একটি প্রকল্পও আলোর মুখ দেখেনি। চট্টগ্রামে শপিংমল ও হোটেল কাম গেস্টহাউস নির্মাণে পিপিপি প্রকল্পটি চুক্তি স্বাক্ষর পর্যায়ে থাকলেও নির্ধারিত জমি অবৈধ দখলে থাকায় তা বিলম্বিত হচ্ছে। এছাড়া চট্টগ্রাম ৫০০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণ প্রকল্পটি সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে পাঠানো হলেও তা আটকে গেছে। এক্ষেত্রে জমির উচ্চ মূল্য, অপেক্ষাকৃত কম রাজস্ব আয়, রেলওয়ে মূলকাজ বাদ দিয়ে হাসপাতাল নির্মাণ, প্রকল্পটি পরিবেশগত ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করবে কি না ইত্যাদি বিষয় পুনরায় পরীক্ষার সুপারিশ করা হয়েছে।

এদিকে কোর দুটি প্রকল্পের মধ্যে ধীরাশ্রমে আইসিডি নির্মাণে এখনও কোনো আগ্রহী বিনিয়োগকারী পাওয়া যায়নি। তবে বৃত্তাকার রেলপথ নির্মাণে আগ্রহ দেখিয়েছে কোরিয়ান একটি কোম্পানি। তবে জমি অধিগ্রহণসহ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রচুর বিনিয়োগ দরকার হবে বলে বিনিয়োগকারী কোম্পানি কিছুটা সংশয়ে রয়েছে। প্রকল্প দুটি বাস্তবায়নে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৭৪ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা। এর ৯০ শতাংশই দরকার হবে বেসরকারি বিনিয়োগ খাতে। যদিও প্রকল্প দুটি রেলওয়ের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

যদিও নন-কোর ও মিশ্র ধরনের প্রকল্পগুলোয় খুব বেশি বিনিয়োগ দরকার হবে না। এর মধ্যে নন-কোর ১০টি প্রকল্প বাস্তবায়নে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে সাত হাজার ৮১০ কোটি টাকা, যার মধ্যে বেসরকারি বিনিয়োগ দরকার হবে ৯ দশমিক ৪৫ শতাংশ। আয় বৃদ্ধির জন্য নেওয়া হলেও এ প্রকল্পগুলোর গুরুত্ব নেই বললেই চলে। আর মিশ্র ধরনের প্রকল্পগুলোর সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে চার হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বেসরকারি বিনিয়োগ দরকার হবে শূন্য দশমিক ৫৫ শতাংশ। এগুলোও রেলের জন্য মোটামুটি গুরুত্বপূর্ণ।

বৈঠকে জানানো হয়, পিপিপির আওতায় বাস্তবায়নের জন্য গৃহীত প্রকল্পগুলো রেল পরিচালনার সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট নয়। মূলত এগুলো হচ্ছে অব্যবহৃত জমিভিত্তিক পিপিপি প্রকল্প। রেলের জমি এক ধরনের দীর্ঘমেয়াদি বন্দোবস্তের মাধ্যমে বেসরকারি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করার জন্য প্রকল্পগুলো নেওয়া হয়েছে। তবে পিপিপি প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন বা পরিচালনায় রেলওয়ের নিজস্ব পৃথক কোনো জনবল বা পিপিপি সেল নেই। বিদ্যমান অপ্রতুল জনবল দিয়ে বাস্তবায়নের জন্যই প্রকল্পগুলো নেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে বৈঠকে অংশ নেওয়া এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে শেয়ার বিজকে বলেন, পিপিপির মাধ্যমে রেলওয়ের জমি ব্যবহারের মাধ্যমে মূল কাজ (পরিচালনা) সংশ্লিষ্ট প্রকল্প নেওয়ার বিষয়ে সুপারিশ করা বৈঠকে। আর মূল কাজ-বহির্ভূত পিপিপি প্রকল্প কতটা ফলপ্রসূ হবে, তা বিশদ পর্যালোচনার সুপারিশও করা হয়। পাশাপাশি নন-কোর প্রকল্প বাস্তবায়ন ও পরিচালনায় রেলওয়ের নিজস্ব পিপিপি সেল গঠনসহ তিন থেকে পাঁচজনকে পিপিপি এক্সপার্ট হিসেবে তৈরি করার সুপারিশ উঠে আসে। আর চলমান ননকোর প্রকল্পগুলোর জন্য প্রযোজ্য সরকারি দপ্তর/সংস্থাকে সম্পৃক্ত করা ও রেলের অব্যবহৃত জমির জন্য জিআইএস ম্যাপ তৈরি করে চলমান প্রকল্পগুলোর গ্রহণযোগ্যতা নিরূপণের সুপারিশ করা হয়।

সুত্র:শেয়র বিজ


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.