শিরোনাম

বেশি দামে নিম্নমানের ইঞ্জিন কিনেছে রেল!

বেশি দামে নিম্নমানের ইঞ্জিন কিনেছে রেল!

ইসমাইলআলী১০ মাসের মধ্যে ১০০টি মিটারগেজ লোকোমোটিভ (ইঞ্জিন) কেনায় তিনটি পৃথক চুক্তি করে রেলওয়ে। এ তিন চুক্তির আওতায় ১০, ৭০ ও ২০টি ইঞ্জিন সরবরাহ করছে দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্দাই রোটেম। এর মধ্যে ১০ ইঞ্জিনে নিম্নমানের যন্ত্রাংশ সংযোজন করেছে কোম্পানিটি। এজন্য ১০ মাস ধরে আটকে রাখা হয়েছে ইঞ্জিনের মূল্য পরিশোধ। এবার ২০ ইঞ্জিনেও নি¤œমানের যন্ত্রাংশ সংযোজনের অভিযোগ উঠেছে, যার ১০টি গত মাসে দেশে এসে পৌঁছেছে।

সূত্রমতে, ১০ লোকোমোটিভ কেনার প্রকল্পে মূল ইঞ্জিন, অলটারনেটর, কম্প্রেসর ও ট্রাকশন মোটর চুক্তি অনুযায়ী সংযোজন করা হয়নি। এজন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। গত ফেব্রুয়ারি মাসে এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দেয় কমিটি। এতে চুক্তির শর্ত লঙ্ঘন করে ইঞ্জিন, অলটারনেটর, কম্প্রেসর ও ট্রাকশন মোটর ভিন্ন মডেলের সংযোজনের প্রমাণ পাওয়া যায়। এজন্য হুন্দাই রোটেমের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে কমিটি। যদিও অজ্ঞাত কারণে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

এদিকে ২০ লোকোমোটিভ কেনার প্রকল্পেও মূল ইঞ্জিনের মডেল পরিবর্তন করা হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী ইঞ্জিনের মডেল হওয়ার কথা ছিল টিআর-১ বা টি-১। কিন্তু হুন্দাই রোটেম ইএস মডেলের ইঞ্জিন সংযোজন করেছে। এর আগে সরবরাহকৃত ১০ লোকোমোটিভেও একই মডেলের ইঞ্জিন দিয়েছিল হুন্দাই রোটেম। মডেল পরিবর্তনের ফলে ইঞ্জিন থেকে কার্বন নিঃসরণের হার বেড়ে যেতে পারে আশঙ্কা করছেন রেলওয়ের প্রকৌশলীরা।

এদিকে ১০ ও ৭০ ইঞ্জিন কেনার চুক্তি আগে হলেও সেগুলোয় টিএ-১২ মডেলের অলটারনেটর সংযোজনের কথা ছিল। যদিও চুক্তির শর্ত ভেঙে ১০ ইঞ্জিন প্রকল্পে টিএ-৯ মডেলের অলটারনেটর সংযোজন করে হুন্দাই রোটেম। আর ২০ ইঞ্জিন কেনায় চুক্তি করা হয়েছিল টিএ-৯ মডেলের অলটারনেটর সংযোজনের শর্তে।

যদিও ২০ ইঞ্জিন কেনায় সবচেয়ে বেশি খরচ হচ্ছে রেলের। ইঞ্জিনগুলো কেনায় ২০১৯ সালের ১৮ মার্চ চুক্তি করা হয়। এ চুক্তিমূল্য ছিল ৬৭৪ কোটি ১০ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতিটি ইঞ্জিনের দাম পড়ছে ৩৩ কোটি ৭১ লাখ টাকা। আর এ প্রকল্পে ঋণ দিচ্ছে কোরিয়ার ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট ফান্ড (ইডিসিএফ)। গত মাসে দেশে আসা ১০ ইঞ্জিন বর্তমানে পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হচ্ছে।

এর মাত্র পাঁচ মাস আগে ৭০টি ইঞ্জিন কেনায় চুক্তি করে রেলওয়ে ও হুন্দাই রোটেম। ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর সইকৃত সে চুক্তি মূল্য ছিল এক হাজার ৯৮৬ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ ইঞ্জিনপ্রতি দাম পড়ছে ২৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। বায়ার্স ক্রেডিটের আওতায় ইঞ্জিনগুলো কেনা হচ্ছে। এজন্য কঠিন শর্তে ঋণ দিচ্ছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক (এসসিবি) ও জাপানের সুমিতোমো মিটসুই ব্যাংকিং করপোরেশন (এসএমবিসি)। তবে ঋণ চুক্তি সই না হওয়ায় এখনও ইঞ্জিন সরবরাহের কাজ শুরু করেনি হুন্দাই রোটেম।

এদিকে ১০ ইঞ্জিন কেনায় হুন্দাই রোটেমের সঙ্গে রেলওয়ে চুক্তি সই হয় ২০১৮ সালের ১৭ মে। এর চুক্তিমূল্য ছিল ২৯৭ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতিটি ইঞ্জিনের দাম পড়ছে ২৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। আর এ প্রকল্পে ঋণ দিচ্ছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। বর্তমানে ইঞ্জিনগুলোর গুণগত মান যাচাইয়ে কারিগরি কমিটি কাজ করছে। তাদের প্রতিবেদনের পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে রেলওয়ে।

কম দামে নিম্নমানের ইঞ্জিন কেনার বিষয়ে জানতে চাইলে ২০ লোকোমোটিভ প্রকল্পের পরিচালক মোহাম্মদ হাসান মনসুর শেয়ার বিজকে বলেন, ২০ ইঞ্জিন কেনায় ঋণ দিচ্ছে কোরিয়া। আর দেশটি থেকেই ইঞ্জিন কেনার শর্ত রয়েছে। তাই কোম্পানিটি দাম বেশি প্রস্তাব করলেও কিছুই করার ছিল না। আবার অলটারনেটরও হুন্দাই রোমেটই টিএ-৯ সংযোজনের শর্ত দিয়েছে। এক্ষেত্রেও রেলওয়ের কিছুই করার ছিল না।

তিনি আরও বলেন, টিএ-৯ মডেলের অলটারনেট দেয়া হলেও লোকোমোটিভের কোনো সমস্যা হবে না। আর ইঞ্জিনের মডেল টি-১-এর পরিবর্তে ইএস মডেল দিলেও সমস্যা নেই। বরং এগুলো আরও উন্নত মডেলের। এগুলো থেকে কার্বন নিঃসরণ বেশি হওয়ার আশঙ্কা নেই।

সূত্র:শেয়ার বিজ, জুন ২৭, ২০২১


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.