শিরোনাম

ভারতের প্রথম রেলওয়ে ‘গেটওম্যান’ সালমা

রেলওয়ে গেটওম্যান সালমা বেগম

।। আন্তর্জাতিক ।।
রেল ক্রসিং পেরোনোর সময়ে আপনি নিশ্চয়ই কোনো একজন ব্যক্তিকে গেটম্যান হিসেবে ক্রসিং বন্ধ করতে বা খুলে দিতে দেখেন। সাধারণত এই কাজটিকে সবসময় একজন পুরুষকেই সামলাতে দেখি আমরা। তবে, আজ আপনাদের কাছে এমন এক মহিলার প্রসঙ্গ তুলে ধরব যিনি গত ১০ বছর যাবৎ এই কাজটি করে চলেছেন। শুধু তাই নয়, তিনিই হলেন ভারতের প্রথম রেলওয়ে ‘গেটওম্যান’।

জানা গিয়েছে, ভারতের উত্তরপ্রদেশের লখনউ সদর দফতর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার দূরে মালহাউর রেল ক্রসিংয়ে দক্ষতার সাথে এই কাজ করে আসছেন ২৯ বছর বয়সী সালমা বেগম। ১৯ বছর বয়স থেকে সালমা ভারি লোহার চাকা ঘুরিয়ে প্রতিদিন রেল ক্রসিং খোলা ও বন্ধ করার মাধ্যমে সুষ্ঠুভাবে কাজ করে চলেছেন। তাঁকে এই কাজ করতে দেখে তাঁর আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীদের মধ্যে অনেকেই বিরোধিতা করেছিলেন। যদিও কোনোকিছুই তাঁর মনোবলকে ভাঙতে পারেনি।

প্রতিবেশী ও আত্মীয়রা বিরোধিতা করলেও বাবা সমর্থন করেন তাঁকে: এই প্রসঙ্গে গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী জানা গিয়েছে যে, সালমার বাবা রেলওয়েতে গেটম্যান হিসেবে কাজ করতেন। পরে অসুস্থতার কারণে তাঁকে তাঁর চাকরি ছাড়তে হয়। তিনি কানে কম শুনতেন। এদিকে সালমার মাও পক্ষাঘাতগ্রস্ত ছিলেন। এমতাবস্থায় বাড়িতে আর কোনো উপার্জনশীল ব্যক্তি না থাকায় সালমা মাত্র ১৯ বছর বয়সেই “গেটওম্যান” হওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

এদিকে, একজন মহিলাকে এই কাজ করতে দেখে বিষ্মিত হয়ে যান রেল বিভাগের লোকজনও। এমনকি, অনেকেই তাঁকে এই কাজের অনুপযুক্ত মনে করার পাশাপাশি কটূক্তিও করেন। কিন্তু সালমা তাঁর কাজের প্রতি অবিচল ছিলেন। এদিকে, প্রশিক্ষণ শেষ করার পর ডিউটি করার সময়ে একমাস যাবৎ সালমার পাশে থাকতেন তাঁর বাবা। ধীরেধীরে এই কাজটি ভালোভাবে করতে পারদর্শী হয়ে ওঠেন সালমা। এভাবে আজ প্রায় ১০ বছর যাবৎ কাজটি করে চলেছেন তিনি।

স্বামীও চাননি যে তিনি চাকরি করুন: উল্লেখ্য যে, ১২ ঘন্টা যাবৎ ডিউটি ​​করা সালমার জন্য আদৌ সহজ ছিল না। কিন্তু তিনি তা দক্ষতার সাথে করে দেখিয়েছেন। আজ মানুষ তাঁর কাজের প্রশংসা করেন এবং একসাথে ছবিও তোলেন। পাশাপাশি রেল বিভাগের কর্মচারীরাও তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করেন। এই প্রসঙ্গে এক সংবাদ মাধ্যমের সাক্ষাৎকারে সালমা জানান, এই কাজের কারণেই বিয়ে ঠিক হওয়ার দুই বছর পরে বিয়ে করতে হয়েছে তাকে। কারণ তাঁর হবু স্বামী চাননি যে তিনি এই কাজটি করেন। কিন্তু সালমা জানান তিনি এই চাকরি ছাড়বেন না। তবে, এখন তাঁর স্বামীও তাঁকে সমর্থন করেন। জানা গিয়েছে, সালমার এক বছরের একটি ছেলে রয়েছে। বর্তমানে তিনি তাঁর চাকরির পাশাপাশি সংসারের দায়িত্বও দারুণভাবে সামলাচ্ছেন।


Comments are closed.