শিরোনাম

চীনা ঋণের দীর্ঘসূত্রতায় শুরু করা যাচ্ছে না কাজ

রেলের তিন প্রকল্প

শামীম রাহমান:
জিটুজি পদ্ধতিতে বাংলাদেশ রেলওয়ের তিন প্রকল্পে ২৩ হাজার কোটি টাকা ঋণ দেয়ার কথা চীনের। প্রকল্পগুলোর কাজও পেয়েছে চীনেরই তিন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু প্রকল্প বাস্তবায়নে চুক্তি স্বাক্ষরের দু-তিন বছর পেরিয়ে গেলেও চীনা ঋণের অর্থ পায়নি বাংলাদেশ। অর্থায়নের অভাবে শুরু হচ্ছে না প্রকল্পের কাজ। রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, এ বছর আর ঋণ পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।

বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ের তিনটি রুটে নেটওয়ার্ক স্থাপনের লক্ষ্যে জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী সেকশনে ডুয়াল গেজ ডাবল লাইন নির্মাণের উদ্যোগ নেয় বাংলাদেশ রেলওয়ে। এতে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয় ৭ হাজার ২৯৬ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৫ হাজার ৮৩৭ কোটি টাকা ঋণ দেয়ার কথা চীনের।
রেলের আখাউড়া-সিলেট সেকশনটিতে বর্তমানে মিটার গেজ লাইন রয়েছে। ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় আনতে লাইনটি মিটার গেজ থেকে ডুয়াল গেজে রূপান্তরের উদ্যোগ নেয়া হয়। ১৪ হাজার ৬১০ কোটি টাকা প্রাক্কলিত ব্যয়ের ১৩ হাজার ৬৯৭ কোটি টাকা ঋণ, যা দেয়ার কথা চীন সরকারের।
একইভাবে জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ-জামালপুর সেকশনে বিদ্যমান রেললাইনের সমান্তরাল একটি ডুয়াল গেজ রেললাইন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এরই মধ্যে প্রায় ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটির সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শুরু হয়েছে। প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৩৪৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে চীনের ঋণ দেয়ার কথা ৩ হাজার ৪৭৯ কোটি টাকা।

রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কে যুক্ত হতে তিন প্রকল্পের মধ্যে দুটির কাজ দ্রুততম সময়ের মধ্যে শুরু করা জরুরি। যদিও কবে নাগাদ ঋণের বিষয়টির সুরাহা হবে এবং কাজ শুরু করা যাবে, তা নিশ্চিত বলতে পারছেন না তারা।

রেলের পরিকল্পনা শাখার এক কর্মকর্তা জানান, তিন প্রকল্পের একটি হলো জয়দেবপুর থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত ডুয়াল গেজ ডাবল লাইন নির্মাণ। এর দৈর্ঘ্য প্রায় ১৭৩ কিলোমিটার। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে ট্রান্স-এশিয়ান রুটের পাশাপাশি উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলার সঙ্গে ঢাকায় যাতায়াত সময় অনেক কমে আসবে। বর্তমানে ঢাকা-রাজশাহী যাতায়াতে প্রায় ৬ ঘণ্টা সময় লাগে। লাইনটি বাস্তবায়ন হলে তা ৪ ঘণ্টায় নামিয়ে আনা সম্ভব। উত্তরের অন্য জেলার সঙ্গেও ঢাকায় যাতায়াতের সময় ২-৩ ঘণ্টা কমে আসবে। অন্য দুই প্রকল্পও গুরুত্বপূর্ণ। অথচ ঋণের অভাবে কাজ শুরু হচ্ছে না। শুধু এ তিন প্রকল্পই নয়, চীনের অর্থায়নে বাস্তবায়নাধীন বেশির ভাগ প্রকল্পই ধীরগতিতে চলছে বলে জানান তিনি।

রেলওয়ের তথ্যানুযায়ী, জয়দেবপুর-ঈশ্বরদী সেকশনে ডুয়াল গেজ ডাবল লাইন নির্মাণের লক্ষ্যে ২০১৪ সালের ২৬ অক্টোবর চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশনের (সিসিইসিসি) সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন হয়। পরের বছরের ১৫ জানুয়ারি প্রাথমিক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (পিডিপিপি) পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদন পায়। ২০১৬ সালের ১৯ অক্টোবর জিটুজি পদ্ধতিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সম্মত হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিসিইসিসি। এর এক বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো ঋণচুক্তির বিষয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি।

আখাউড়া-সিলেট সেকশনে মিটার গেজ থেকে ডুয়াল গেজে রূপান্তরের লক্ষ্যে ২০১৫ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর চায়না রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যুরোর (সিআরবিজি) সঙ্গে চুক্তি হয়। পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্পটির পিডিপিপি অনুমোদন হয় পরের বছরের ২১ মার্চ। ২০১৬ সালের ১৯ অক্টোবর জিটুজি পদ্ধতিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সম্মত হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিআরবিজি। এটিরও ঋণচুক্তির বিষয়ে অগ্রগতি শূন্য।
একইভাবে ২০১৪ সালের ২৪ জুলাই জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ-জামালপুর সেকশনে বিদ্যমান রেললাইনের সমান্তরাল একটি ডুয়াল গেজ রেললাইন নির্মাণের লক্ষ্যে চায়না রেলওয়ে ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপের (সিআরআইজি) সঙ্গে চুক্তি করে রেলওয়ে। ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর জিটুজি পদ্ধতিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সম্মত হয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সিআরআইজি। চলতি বছরের ১৫ মার্চ প্রকল্পটির পিডিপিপি অনুমোদন করে পরিকল্পনা কমিশন।

প্রায় ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ-জামালপুর প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শুরু হয়েছে। চলতি বছরের ২৬ ফেব্রুয়ারি সমীক্ষা প্রস্তাবটি রেলপথ মন্ত্রণালয়ে ও ১ মার্চ পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়। সমীক্ষা প্রস্তাবের ওপর গত ১৬ আগস্ট প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয় বলে রেলওয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের সচিব মোফাজ্জেল হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, ‘প্রকল্প তিনটিতে চীনা অর্থায়নের বিষয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে। এর মধ্যে দুটি প্রকল্পের আলোচনা অনেক দূরই এগিয়েছে। নভেম্বরের মধ্যে বাণিজ্যিক চুক্তির বিষয়টি চূড়ান্ত করা সম্ভব।’
ঋণের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘চীনের অর্থবছর শুরু হয় জানুয়ারিতে। এ কারণে চলতি বছরের মধ্যে ঋণ পাওয়ার আশা আমরা করছি না। তবে দেশটির আগামী অর্থবছরের শুরুর দিকেই যেন ঋণ পাওয়া যায়, সে লক্ষ্যে আমরা আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি।’

সুত্র:বর্ণিক বার্তা,অক্টোবর ২৯, ২০১৭


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.