শিরোনাম

বায়োটয়লেট ও পরিচ্ছন্ন রেল যোগাযোগ

বায়োটয়লেট ও পরিচ্ছন্ন রেল যোগাযোগ

তুফান মাজহার খান :

বাংলাদেশে যাতায়াত ব্যবস্থার অন্যতম মাধ্যম হল রেলওয়ে। প্রতিদিন লাখ লাখ যাত্রী ট্রেনে যাতায়াত করেন। বাংলাদেশ তথা পূর্ববাংলায় রেলওয়ে সেবা চালু হয়েছিল ১৮৬২ সালে। সর্বপ্রথম ব্রিটিশ ব্যবস্থাপনায় এ যোগাযোগ ব্যবস্থার সূচনা হয়েছিল বলে জানা যায়।

>

যাত্রীসেবার ক্ষেত্রে রেলওয়ে যতই ভালো হোক না কেন, এর মাধ্যমে পরিবেশের যে একটি মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে, সেটা হয়তো কারও নজরেই পড়েনি বা নজরে পড়লেও এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি।

এটি হল রেলওয়ের মানববর্জ্য ব্যবস্থাপনা। আরও সহজ করে বলতে গেলে তা হল, ট্রেনের শৌচাগার ব্যবস্থাপনা; যা খুবই অনুন্নত ও পরিবেশ নষ্টকারী একটি ব্যবস্থাপনা এবং সেই ব্রিটিশ শাসনামল থেকেই চলে আসছে।

ট্রেনের শৌচাগারগুলোর মানববর্জ্য সরাসরি রেললাইনের ওপর পড়ে, যা আশপাশের পরিবেশ দূষিত করে; ছড়ায় রোগজীবাণু। অনেক স্থানে রেললাইনের পাশেই থাকে পুকুর, ডোবা, খাল, নদীসহ অনেক জলাশয়। রেললাইনে পড়া মানববর্জ্য বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে সেসব জলাশয়ের পানিতে মেশে; যার ফলে সেসব জলাশয়ও নষ্ট হয়।

এমনও দেখা যায়, স্টেশনে ট্রেন থেমে থাকা অবস্থায়ও যাত্রীরা শৌচাগার ব্যবহার করেন। তখন সেসব বর্জ্য নিচে পড়ে স্টেশনের পরিবেশকেও নষ্ট করে। যদিও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ট্রেন স্টেশনে দাঁড়ানো অবস্থায় শৌচাগার ব্যবহার না করতে নোটিশ টাঙিয়ে রেখেছে; কিন্তু কে শোনে কার কথা? সাধারণ জনগণ অসচেতনতা অথবা প্রয়োজনের তাগিদে তা করেই যায়।

তাহলে এর কি কোনো সমাধান নেই? হ্যাঁ, অবশ্যই আছে। উন্নত রাষ্ট্রগুলোয় বায়োটয়লেটযুক্ত ট্রেন চলে অনেক আগে থেকেই। এ থেকে ব্রিটিশরাও বাদ যায়নি। এখন প্রশ্ন হতে পারে, বায়োটয়লেট কী? বায়োটয়লেট হল এমন এক ধরনের উন্নত শৌচাগার ব্যবস্থা, যা সাধারণত উড়োজাহাজে ব্যবহৃত হয়ে থাকে।

অর্থাৎ মানববর্জ্য জমা হওয়ার জন্য গণপরিবহনের টয়লেটের সঙ্গে আলাদা ট্যাংক যুক্ত থাকে। এটাই হল বায়োটয়লেট, যা প্রতিবার গন্তব্যে পৌঁছার পর পরিষ্কার করা হয়। এটি পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে।

প্রশ্ন হল, আমাদের এত পুরনো ট্রেন কি সরকার বিক্রি করে বায়োটয়লেট সমৃদ্ধ নতুন ট্রেন কিনবে? না, ঠিক তা নয়। ব্রিটিশ আমল থেকে চলতে থাকা পুরনো ট্রেনগুলোর অবস্থা খুবই নাজুক এবং এরই মধ্যে অনেক ট্রেন পুরোপুরি অকেজোও হয়ে গেছে। এরপর সরকার অনেক নতুন ট্রেন কিনেছে।

কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, সেসব ট্রেনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনাও একই রকম। যেমন সাধারণ ব্রডগেজ বা মিটারগেজ ট্রেন, ডেমু ট্রেন, সোনার বাংলা ট্রেন ইত্যাদি। অবশ্য রেলওয়ের নতুন ৫০টি কোচে বায়োটয়লেট সংযুক্ত হয়েছে।

এজন্য সরকারকে ধন্যবাদ। ভবিষ্যতে বাংলাদেশ রেলওয়েতে যুক্ত হবে এমন প্রতিটি কোচেই বায়োটয়লেট যুক্ত করার আবেদন থাকবে সরকারের কাছে। এতে করে আমাদের পরিবেশ যেমন থাকবে সুন্দর, তেমনই বাংলাদেশ রেলওয়েতে যোগ হবে নতুন এক মাত্রা।

প্রাবন্ধিক, কবি ও কথাসাহিত্যিক, ডেমরা, ঢাকা

[email protected]

সুত্র:যুগান্তর, ৩০ অক্টোবর ২০১৯,


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.