শিরোনাম

বিনা টিকিটে রেল ভ্রমণের বিল পরিশোধ করলেন এমদাদুল হক

এমদাদুল হক (একদম বামে)

।। রেল নিউজ ।।
চাকরিতে থাকাকালীন ট্রেনে কয়েকবার বিনা টিকিটে ভ্রমণ করা এক সরকারি কর্মচারী সম্প্রতি অবসরে যাওয়ার পর সব ভাড়া পরিশোধ করেছেন।

‘বাসে বা ট্রেনে বিনা টিকিটে ভ্রমণ করলে দেশ ও জাতির হক বা অধিকার নষ্ট করা হয়। তা কোনো দিন মাফ হয় না’—বিবেকের এমন তাড়না থেকে বিনা টিকিটে ট্রেনে যাতায়াতের ভাড়া একসঙ্গে পরিশোধ করেছেন তিনি।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের দক্ষিণ মৌড়াইল এলাকার বাসিন্দা এমদাদুল হক (৬৫) দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদকে) কনস্টেবল পদে কর্মরত ছিলেন। গত ডিসেম্বরে তিনি অবসর নেন।

গতকাল সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনের বুকিং সহকারীর কক্ষে এসে বিনা টিকিটে ট্রেনে ভ্রমণ করার ভাড়া পরিশোধ করেন তিনি।

এমদাদুল হক সংবাদ মাধ্যমকে জানান, ‘গত ডিসেম্বরে অবসর নেওয়ার আগের ২/৩ বছরে ট্রেনে ১৫/১৬ বার বিনা টিকিটে ঢাকা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া গিয়েছিলাম। সেই হিসেবে ভাড়া পরিশোধ করেছি।’
‘এখন অবসরে এসে অনুশোচনায় ভুগছি’ উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ‘অন্যায় হয়ে গেছে—এমন অনুশোচনাবোধ থেকেই রেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করি।’
এমদাদুল হক আরও বলেন, ‘এই দেনার দায় তো কোন পুণ্য দিয়ে শোধ করার উপায় নেই। তাই সরাসরি রেলে টাকা জমা দিলাম। জানি না এতে আমার দায়মুক্তি হবে কি না। তবে মানসিক প্রশান্তি পাচ্ছি।’

জানা গেছে, জীবনে যতবার বিনা টিকিটে ট্রেন ভ্রমণ করেছিলেন তার হিসেব করে রেখেছিলেন এমদাদুল। দেনার দায় থেকে মুক্তি পেতে বাংলাদেশ রেলওয়েকে হিসাব করে মোট ২ হাজার ৫৩০ টাকা বুঝিয়ে দিয়েছেন।
এ বিষয়ে এমদাদুল হকের বড় ছেলে ইমরান বলেন, আমার বাবা সৎভাবে জীবনযাপন করেন। মানুষ মনে কষ্ট পায় এমন কাজ তিনি কখনো করেননি। কারো কাছে এক টাকা ঋণ থাকলেও খুঁজে বের করে তিনি পরিশোধ করেন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশনের বুকিং সহকারী দিদার মোল্লা সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘একসময় ট্রেন যাত্রী এমদাদুল হক ভুল করে বিনা টিকিটে ভ্রমণ করেছেন। তখন তিনি চাকরিতে ছিলেন। সম্প্রতি, অবসরে যাওয়ার পর তিনি অনুশোচনায় ভুগছিলেন। এজন্যই তিনি নিজেই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।’

দিদার মোল্লা আরও বলেন, ‘রেলওয়ে থেকে দায়মুক্তির জন্য এমদাদুল হক ২ হাজার ৫৩০ টাকা সমমূল্যের আসনবিহীন টিকিট কেটে আগের ভ্রমণের দায় পরিশোধ করেছেন।’

ব্রাহ্মণবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন মাস্টার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এমন নজির স্থাপন করায় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ অভিভূত। এখন থেকে ট্রেনে যাতায়াতের ক্ষেত্রে এমদাদুল হককে সর্বাত্মক সহায়তা করা হবে।’


Comments are closed.