শিরোনাম

জুরাইনে রেলের জায়গা দখল করে ৫শ’ অবৈধ দোকান

জুরাইনে রেলের জায়গা দখল করে ৫শ’ অবৈধ দোকান

ফিরোজ মান্না ॥ সরকারী জায়গা দখলমুক্ত করার জন্য প্রতিনিয়ত উদ্ধার কাজ পরিচালনা করলেও রাজধানীর জুরাইনে রেলওয়ের জায়গা দখল করে ৫শ’র বেশি দোকান নির্মাণ করা হয়েছে। প্রভাবশালী ও রেলওয়ের কতিপয় কর্মকর্তা কর্মচারীর যোগসাজশে এ ঘটনা ঘটেছে। এ সব দোকান থেকে প্রতিদিন কয়েক লাখ টাকা প্রভাবশালীদের পকেটে যাচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসী বেশ কয়েক দফা রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিলেও জায়গা উদ্ধারের বিষয়ে কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। রেললাইন ঘেঁষে এসব দোকান পাট গড়ে তোলায় যেকোন সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। শুধু রেলওয়ের জায়গা দখল করে দোকান নির্মাণেই শেষ নয়, দোকানগুলোতে অবৈধ বিদ্যুত ও পানির সংযোগও দেয়া হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, জুরাইন রেলগেট থেকে মুন্সিবাড়ি পর্যন্ত সাড়ে ৫শ’র বেশি দোকান বসানো হয়েছে। বেশিরভাগ দোকান ১০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১০ ফুট প্রস্ত। কিছু দোকানের দেয়াল পাকা করে চাল দিয়েছে টিন দিয়ে। আবার কিছু দোকান টিন দিয়ে নির্মাণ করেছে। কাঁচা বাজারের জন্য বাঁশের ঝাপ ও পলিথিনের চালা দেয়া হয়েছে। প্রতিটি দোকানই বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘেরা। দোকানের ভেতরে খাট বসিয়ে মালামাল সাজানো। অধিকাংশই মাছ, ব্রয়লার মুরগি, গরুর মাংস, জুতা, কাপড়, খাবার হোটেল, ফল, চা, মুদি ও খেলনার দোকান। অনেক দোকান ঝুঁকিপূর্ণভাবে রেললাইনের পাশে বসানো হয়েছে। এত দোকান দেখে মনে হতে পারে এটি কোন বাণিজ্যিক এলাকা। জুরাইন রেলগেট দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করেন শামসুর রহমান। তিনি বলেন, এসব দোকান বসিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ তো রয়েছেই, পাশাপাশি এখানে মাদকদ্রব্য বেচাকেনার অভিযোগও আছে। ফলে এলাকার পরিবেশও নষ্ট হচ্ছে। মাঝে দু-একবার উচ্ছেদ করা হয়েছিল এসব দোকান। কিন্তু অনেকটা লোকদেখানো। কিছুদিন পরেই আবার দোকান বসানো হয়।

গে-ারিয়া রেলস্টেশনের স্টেশনমাস্টারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কথা বলা সম্ভব হয়নি। তবে রেলওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির সহকারী পরিদর্শক (এসআই) তোফাজ্জল বলেন, অবৈধ দোকান উচ্ছেদের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। বড় অভিযান ছাড়া এগুলো উচ্ছেদ করা সম্ভব না। রেলওয়ে পুলিশের টাকা নেয়ার বিষয়টি জানা নেই বলে তিনি জানান।

ডিপিডিসির বেচা পোস্তগোলা বিদ্যুত অফিসের এক কর্মকর্তা বলেন, অনেক বার বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গিয়ে তোপের মুখে পড়তে হয়েছে। পরে সেখান থেকে আমাদের কর্মীরা পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছে। একটি শক্তিশালী চক্র ওই এলাকা পুরো নিয়ন্ত্রণ করে। ওয়াসার কর্মকর্তারা বলেন, পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করতে গেলেও তারা সংঘবদ্ধভাবে বাধা দেয়। তবে ওয়াসার বিরুদ্ধে অভিযোগ ওয়াসার স্থানীয় অফিসের সঙ্গে যোগসাজশেই পানির সংযোগ নিয়েছে অবৈধ দখলদাররা।

এলাকাবাসী জানিয়েছে, জুরাইন রেলগেট থেকে মুন্সিবাড়ি পর্যন্ত এক কিলোমিটার এলাকায় রেললাইনের পাশে রেলওয়ের খালি জায়গায় আগে থেকেই কিছু দোকান বসত। সর্বশেষ চার মাস আগে দোকানগুলো উচ্ছেদ করে রেল কর্তৃপক্ষ। উচ্ছেদের কয়েক দিন পরেই আবার প্রভাবশালী রেলওয়ের লোকজন মিলে কাঁচা-পাকা দোকান ঘর নির্মাণ করেছে।

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এখানে দোকান বরাদ্দ নেয়ার জন্য প্রথমে এককালীন ১০ হাজার করে টাকা নেয়া হয়েছে। অনেকের কাছ থেকে আবার টাকা নিয়ে দোকান দেয়া হয়নি। এককালীন এই টাকার বাইরে দোকানের আকৃতি অনুযায়ী প্রতিদিন একটা নির্দিষ্ট অঙ্কের চাঁদা দিতে হয়। কাপড় ব্যবসায়ী কালু মিয়া বলেন, দোকানের জন্য দিনে ২৫০ টাকা টাকা করে চাঁদা দিতে হয়। এর ব্যতিক্রম করলে সংশ্লিষ্ট দোকানিকে উঠিয়ে দিয়ে নতুন কাউকে বরাদ্দ দেয়া হয়। আরেক কাপড় বিক্রেতা নিরব বলেন, ঝড়বৃষ্টির কারণে অনেক সময় দোকান ঠিকমতো চলে না। আবার অন্যান্য কারণেও মাঝেমধ্যে দোকান বন্ধ রাখতে হয়। তবে চাঁদা থেকে নিস্তার নেই। প্রতিদিন টাকা না দিলে দোকান বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দেয়া হয়। ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, রেলগেট এলাকায় দোকানঘর বরাদ্দ দেয়া ও টাকা তোলার দায়িত্বে রয়েছেন স্বপন, ইব্রাহিম মোল্লা, জলিল শেখ, তোফাজ্জল, মাসুদ, শাজাহান। তারা প্রতিদিন দোকান থেকে চাঁদা তোলেন। এ ছাড়া ভাসমান হকারদের কাছ থেকে গড়ে প্রতিদিন টাকা নেয়া হচ্ছে। যাদের বিরুদ্ধে ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেছেন-তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করে কথা বলা সম্ভব হয়নি। জলিল শেখের ফোন ধরলেও তিনি এ বিষয়ে কোন কথা বলেননি।

সুত্র:জনকন্ঠ, ২৯ জানুয়ারী ২০২০


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.