শিরোনাম

নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হচ্ছে না পুনর্বাসন প্রকল্প

নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হচ্ছে না পুনর্বাসন প্রকল্প

সাইদ সবুজ:
নির্দিষ্ট সময়ে শেষ হচ্ছে না বাংলাদেশ রেলওয়ের কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশন পুনর্বাসন প্রকল্প। ৬৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ের প্রায় ৫৩ কিলোমিটার প্রকল্পের মেয়াদকাল ২০১১ সালের ১ জুলাই থেকে ২০১৭ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। এরপর ২০১৯ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত আরেক দফা মেয়াদ বাড়ানো হয়। কিন্তু প্রকল্পের মেয়াদ আর পাঁচ মাস থাকলেও কাজ হয়েছে মাত্র ১৩ শতাংশ।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ৫২ দশমিক ৫৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে কুলাউড়া-শাহবাজপুর সেকশনটি ব্রিটিশ শাসনামলে ১৮৯৬ সালের ৪ ডিসেম্বর চালু হয়। এটি ভারতের আসাম রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত। তবে দীর্ঘ ১০৬ বছর চালু থাকার পর বাজেট স্বল্পতার কারণে নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ না করায় এক সময় ট্রেন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে সেকশনটি। এ অবস্থায় ২০০২ সালের ৭ জুলাই রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এ পথে ট্রেন চলাচল বন্ধ করে দেয়। এরপর কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখা উপজেলার লোকজন দুর্ভোগে পড়েন। পরবর্তীকালে রেলপথটির সংস্কার করে পুনরায় ট্রেন চলাচল চালুর দাবিতে স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠন আন্দোলন কর্মসূচি পালন করে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে ২০১১ সালে বিদ্যমান মিটারগেজ লাইন সংস্কারের লক্ষ্যে প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়। তারপর ২০১৫ সালের ২৬ মে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় ৬৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ ডুয়েলগেজে রূপান্তর ও পুনর্বাসন প্রকল্প অনুমোদন পায়। এর মধ্যে ১২২ কোটি টাকা বাংলাদেশ সরকারের (জিওবি) থেকে, বাকি ৫৫৬ কোটি টাকা (এলওসি) ভারত সরকার ঋণ হিসেবে দেবে। ২০১৫ সালের ৬ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকালে প্রকল্পটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। তবে প্রকৃত কাজ শুরু হয় অনেক পরে।

কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথে ছয়টি স্টেশন রয়েছে। সেগুলো হলো: কুলাউড়া, জুড়ী, দক্ষিণভাগ, কাঁঠালতলী, বড়লেখা, মুড়াউল ও শাহবাজপুর। রেলপথটি ডুয়েলগেজের হবে। ছয়টি রেলস্টেশনের মধ্যে চারটি ‘বি’ ও দুটি ‘ডি’ শ্রেণির হবে। রেলপথটিতে ১৭টি বড় সেতু ও ৪২টি ছোট সেতু এবং কালভার্ট নির্মাণ করা হবে। ভারতের ‘কালিন্দি রেল নির্মাণ’ প্রতিষ্ঠান দরপত্রের মাধ্যমে কাজটি পেয়েছে। এ প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবে কাজ করছে ভারতের ‘বালাজি রেল রোড সিস্টেমস’ নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠান।

রেলওয়ের দেওয়া সর্বশেষ প্রকল্পের অগ্রগতির তথ্য অনুসারে দেখা যায়, চুক্তিপত্রের মূল্য ৫৪৪ কোটি টাকা ভারতের এক্সিম ব্যাংক ২০১৮ সালের ১১ জানুয়ারি অনুমোদন দিয়েছে। তার মধ্যে নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ১০ শতাংশ অগ্রিম বিল বাবদ ৫৪ কোটি ৪৮ লাখ ৬৭ হাজার টাকা গত বছরের ২৭ মার্চ পরিশোধ করা হয়েছে। এরপর নিয়োজিত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শাহবাজপুর-ভারতীয় বর্ডার সেকশনে বিদ্যমান ট্র্যাক (লাইন) ও রেলসেতু অপসারণ করেছে। এর মধ্যে ৩৯টি রেলসেতুর মধ্যে ১৬টির গার্ডার ও ১৫ কিলোমিটার ট্র্যাক ভেঙে অপসারণ করা হয়েছে। এ প্যাকেজের ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ১০ দশমিক ৯০ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ১০ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরের সংশোধিত বাজেট বরাদ্দ ছিল ২৭ কোটি ৩১ লাখ টাকা আর গত ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে এক কোটি ৩৮ লাখ টাকা। প্রকল্পের শুরু থেকে ২০১৮ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ৬৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা।

কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (ট্র্যাক) ও প্রকল্প পরিচালক মো. তানভিরুল ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, প্রকল্পের মেয়াদকাল অনুসারে কাজের তেমন অগ্রগতি হয়নি। কারণ, চাইলেও আমরা অনেক কিছু করতে পারি না। চুক্তি অনুসারে ৭৫ শতাংশ পণ্যদ্রব্য আনতে হবে ভারত থেকে আর বাংলাদেশ থেকে ব্যবহার করতে পারব মাত্র ২৫ শতাংশ। এছাড়া দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় অনেক জায়গা বেদখল ও প্রকল্প এলাকায় গাছগাছালিতে ভরে গেছে। এরই মধ্যে অনেক গাছ অপসারণ করা হয়েছে এবং ভৌত অবকাঠানো নির্মাণ শুরু হয়েছে। চলতি মেয়াদ শেষ হলে পুনরায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হবে। এ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখবে। আর জুড়ী ও বড়লেখার যোগাযোগব্যবস্থায় নতুন মাত্রা যুক্ত হবে।

সুত্র:শেয়ার বিজ, জানুয়ারি ১৯, ২০১৯


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.