শিরোনাম

ভারতের যে পাহাড়ি রেলপথগুলি ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটের স্বীকৃতি পেয়েছে


।। আন্তর্জাতিক ।।
বিশ্বে বিভিন্ন স্থানগুলোকে সাংস্কৃতিক এবং প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের তকমা দিয়ে থাকে ইউনেস্কো। ভারতের বেশ কয়েকটি রেলপথ ইউনেস্কোর ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’ স্বীকৃতি পেয়েছে। এই প্রতিবেদনে ভারতের তিনটি মাউন্টেইন রেলওয়ের নাম তুলে ধরা হচ্ছে যেগুলো বিশ্বজুড়ে খ্যাতি অর্জন করেছে।

দার্জিলিং হিমালয় রেলওয়ে

দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়ে পশ্চিমবঙ্গের পার্বত্য রেলপথ। নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে শৈলশহর দার্জিলিং পর্যন্ত বিস্তৃত একটি ২ ফুট ন্যারো গেজ রেল পরিষেবা। এই রেলপথে টয় ট্রেনের যতায়াত চলে। দার্জিলিং হিমালয়ান রেলওয়েটি ১৮৮১ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের তত্তাবধানে তৈরি হয়। ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো দার্জিলিং হিমালয়ান রেলকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত করে। জঙ্গলের মধ্য দিয়ে সমতল থেকে পাহাড়ের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় টয় ট্রেনটি। ভারতের সবথেকে প্রাচীন পাহাড়ি রেলপথ এটি। শিলিগুড়ি জংশন থেকে ধীরেধীরে সুকনা, রংটং, তিনধরিয়া, গয়াবাড়ি, মহানদী, কার্শিয়াং, তুং, সোনাদা, ঘুম হয়ে দার্জিলিং শহরে ঢোকে ট্রেন। যাত্রাপথে মনোরম জলবায়ু এবং পাহাড়ের সৌন্দর্য যেন যাত্রার ক্লান্তিকে কোন ভাবেই কাছে ঘেষতে দেয় না। পাশাপাশি সবুজ গালিচায় মোড়া পাহাড়ের বুকে নজরে পড়ে চা পাতা তোলার ব্যস্ততা। মেঘে ঢাকা পাহাড় তার মধ্য দিয়ে কু ঝিকঝিক, ব্যস আর কি চাই? এই সকল কারণে দার্জিলিং হিমালয় রেলওয়ের মাথায় বসান হয়েছে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের মুকুট।

নীলগিরি মাউন্টেইন রেলওয়ে

দক্ষিণ ভারতের তামিলনাড়ু মেট্টুপালাইয়াম থেকে উটি পর্যন্ত নীলগিরি মাউন্টেইন রেলওয়ে ভারতের সবথেকে ধীর গতিতে চলাচলকারী ট্রেন। পাহাড়ি এই রেলপথে যে প্যাসেঞ্জার ট্রেন চলাচল করে, সেটির স্পিড ঘণ্টায় ৯ কিলোমিটার। নৈসর্গিক এই রেলপথে অনেক জায়গাতেই যাত্রীরা ট্রেন থেকে নেমে দিব্যি ছবি তুলে ফের ট্রেনে উঠে যেতে পারেন। এই রেলপথটিতে ১৬টি সুড়ঙ্গ এবং ২৫০টি ব্রিজ রয়েছে। ১৯০৮ সালে এই রেলপথে ট্রেন চলাচল শুরু করে। তবে ২০০৫ সালে ইউনেস্কো থেকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের তকমা পায় রেলপথটি। মেট্টুপালাইয়াম থেকে উটি যাওয়ার পথে কেল্লার, কুনুর, ওয়েলিংটনকে যুক্ত করেছে এই রেলপথ। নীলগিরি পর্বতের অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে ট্রেনের ছোট কামরায় বসে উপভোগ করার সুযোগ পাওয়া যায়। পাহাড়ের কোলে চা বাগান, নিস্তরঙ্গ জলপ্রপাতের দৃশ্য যেন প্রকৃতির উপর তৈরি হওয়া পোট্রেট। ভারতের সবচেয়ে মনোরম রেলওয়ের ভ্রমণের অংশ এটি। প্রতিটি ঋতুতেই যেন নতুন রূপে ধরা দেয়, তবে বিশেষ করে বর্ষারানির আগমণে যেন প্রকৃতির নতুন খেলা দেখার সুযোগ মেলে এই রেলপথে।

কালকা সিমলা রেলওয়ে

কলকা-সিমলা রেলওয়ে একটি ন্যারো গেজের ২ ফুট ৬ইঞ্চির রেলওয়ে। এটি উত্তর পশ্চিম ভারতের কলকা থেকে সিমলা ভ্রমণের পর্বতময় একটি রেলওয়ে। পাহাড়ি নৈসর্গিক দৃশ্য এবং ছবির মতন আশেপাশের গ্রামের জন্য এই রেলওয়ে বিখ্যাত। কালকা থেকে সিমলা যাওয়ার পথে ধর্মপুর, কুমারহাট্টি, সোলান, সালোগরা, কান্দাঘাট, শোগি সহ আরও বেশকয়েকটি জায়গাকে যুক্ত করেছে এই রেলপথ। ১৯০৩ সালে কালকা-সিমলা রেলপথে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। ২০০৮ সালে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের তকমা পায় এই রেলপথটি। কালকা-সিমলা ভারতের নান্দনিক রেলপথগুলোর মধ্যে একটি। হিমাচল প্রদেশের পাহাড় এবং উপত্যকার বুক চিড়ে চলে যাওয়া এই পথে ভ্রমণ করা মানেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে উপভোগ করার বারতি সুযোগ। পাহাড়ে রেলপথ তৈরি করার উদ্দেশ্য হল পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে যাত্রাপথে উপভোগ করা। সবুজ বিস্তৃর্ণ গালিচা, পাইনরাশি, দেবদারুর সৌন্দর্য, জলপ্রপাত, পাহাড়ি গ্রাম্য জনজীবনের সঙ্গে পরিচিতি গড়ে তোলায় এই রেলপথের ভূমিকা অনন্য।


Comments are closed.