শিরোনাম

জোড়াতালি দিয়ে রেলের ঈদ সার্ভিস

জোড়াতালি’ দিয়ে রেলের ঈদ সার্ভিস

শামীম রাহমান :চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে পরিত্যক্ত অবস্থায় থাকা ২১টি কোচ মেরামত করা হয়েছে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায়। মেরামতের পর বগিগুলো যোগ হচ্ছে লালমনি এক্সপ্রেসসহ বিভিন্ন ট্রেনে। এবারের ঈদযাত্রায় এমন ১৮০টি কোচ যুক্ত হচ্ছে রেলের বহরে। সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, ‘জোড়াতালি’ দিয়ে মেরামত করে এসব কোচ বহরে যোগ করছে রেলওয়ে। অন্যদিকে রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, মেরামত নয়, পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে এসব কোচ।

নব্বইয়ের দশকে ইরান থেকে বেশকিছু যাত্রীবাহী কোচ আমদানি করেছিল রেলওয়ে। দীর্ঘদিন ব্যবহারের পর এসব কোচের অনেকগুলো চট্টগ্রামের পাহাড়তলী কারখানায় পরিত্যক্ত অবস্থায় ছিল। সেখান থেকে ২১টি কোচ সৈয়দপুর কারখানায় এনে মেরামত করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৪টি কোচ যোগ করা হয়েছে ঢাকা-লালমনিরহাটের মধ্যে চলাচল করা লালমনি এক্সপ্রেসে। বাকিগুলো অন্য ট্রেনের সঙ্গে জুড়ে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন রেল কর্মকর্তারা।

সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার কর্মকর্তারা জানান, ঈদুল ফিতর উপলক্ষে ৯০টি কোচ মেরামত করে বহরে যোগ করার লক্ষ্য বেঁধে দেয় রেলপথ মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে ৫৯টি ব্রডগেজ লাইনের জন্য। বাকি ৩১টি মিটারগেজের জন্য। গতকাল পর্যন্ত ৫৫টি কোচ এ কারখানা থেকে সরবরাহ করা হয়েছে। বাকি কোচগুলো ঈদের আগেই সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলেও জানান তারা।

সৈয়দপুর কারখানা থেকে সরবরাহ করা লালমনি এক্সপ্রেসের ‘ইরানি’ কোচগুলো সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, মেরামত ও রঙ করা হলেও তা মানসম্মত নয়। যাত্রীদের জন্য মেরামত করা টয়লেট ও পানি সরবরাহ ব্যবস্থাও লোকাল মেইল ট্রেনের মতোই। লাইটিং, জানালা ও দরজার অবস্থাও নিম্নমানের। সিটগুলো দেখতে ভালো হলেও সেগুলো এগোনো-পেছানোর ব্যবস্থা নাজুক। ফ্যানগুলো পুরনোই রয়ে গেছে। লাগেজ হ্যাঙ্গারও নড়বড়ে। পাওয়ার কারের মেশিনও পুরনো। তবে কোচগুলোর এয়ার ব্রেকগুলো ভালো অবস্থায় দেখা গেছে।

নতুন কোচ নিয়ে বিস্তর অভিযোগ লালমনিরহাটবাসীর। এ সম্পর্কে লালমনিরহাট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি একেএম কামরুল হাসান বকুল বলেন, লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনের অবস্থা খুবই নাজুক ছিল। আশায় ছিলাম, এ অবস্থার উন্নতি হবে। কিন্তু আমরা পেলাম জোড়াতালি দেয়া কোচ। এগুলোকে ‘উপরে ফিটফাট ভেতরে সদরঘাট’ বলে অভিহিত করেছেন এ ব্যবসায়ী নেতা।

কোচগুলোর মান সম্পর্কে জানতে চাইলে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক কুদরত-ই-খুদা বলেন, আমরা কোচগুলো মেরামত নয়, পুনর্নির্মাণ করেছি। এগুলো মানের দিক দিয়ে পুরোপুরি না হলেও ৭০-৮০ শতাংশ পর্যন্ত নতুন কোচের মতো হবে।

পরিত্যক্ত কোচ মেরামতের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘পরিত্যক্ত নয়, হয়তো দীর্ঘদিন ধরে এসব কোচ মেরামত হয়নি। তবে মেরামত করার প্রক্রিয়ার মধ্যে ছিল।’

বাংলাদেশ রেলওয়ের আরেকটি কারখানা আছে চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে। এখান থেকেও ঈদ উপলক্ষে ৯০টি কোচ বহরে যোগ করার লক্ষ্যমাত্রা দিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। পাহাড়তলী কারখানা সূত্রে জানা গেছে, গতকাল পর্যন্ত ৬৫টি মিটারগেজ কোচ বহরে সরবরাহ করা হয়েছে। বাকিগুলো ঈদের আগেই দেয়া সম্ভব হবে। পাহাড়তলী কারখানা থেকে সব মিটারগেজ কোচ সরবরাহ করা হচ্ছে।

কোচগুলোর বিষয়ে জানতে চাইলে পাহাড়তলী রেলওয়ে কারখানার বিভাগীয় তত্ত্বাবধায়ক এফএম মহিউদ্দিন বলেন, আমরা যেসব কোচ বহরে সরবরাহ করেছি, সেগুলোয় যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য সর্বোচ্চ ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তবে মেরামত হওয়া কোচগুলো দীর্ঘদিন ধরে অব্যবহূত অবস্থায় পড়ে ছিল বলে স্বীকার করেছেন তিনি।

১৮০টি যাত্রীবাহী কোচের পাশাপাশি চারটি লোকোমোটিভও (ইঞ্জিন) যুক্ত হচ্ছে রেলের বহরে। এসব ইঞ্জিন সরবরাহ করবে দেশের একমাত্র লোকোমোটিভ কারখানা পার্বতীপুর। ‘কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানা’ পার্বতীপুরের প্রধান নির্বাহী বোরহান উদ্দিন জানান, আমাদের কারখানা থেকে চারটি ইঞ্জিন সরবরাহের লক্ষ্য ছিল। দুটি আমরা এরই মধ্যে সরবরাহ করেছি। বাকি দুটি ঈদের আগে রেলের বহরে দেয়া হবে।

বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ঈদ উপলক্ষে ১ হাজার ৪০৫টি কোচ ও ২২৯টি লোকোমোটিভ ব্যবহার করা হবে। বিশেষ ট্রেন চলবে নয়টি। এগুলো হচ্ছে, ঢাকা-দেওয়ানগঞ্জ-ঢাকা, চাঁদপুর স্পেশাল-১ (চট্টগ্রাম-চাঁদপুর-চট্টগ্রাম), চাঁদপুর স্পেশাল-২ (চট্টগ্রাম-চাঁদপুর-চট্টগ্রাম), রাজশাহী স্পেশাল (রাজশাহী-ঢাকা-রাজশাহী), পার্বতীপুর স্পেশাল (পার্বতীপুর-ঢাকা-পার্বতীপুর), ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-লালমনিরহাট। এর বাইরে শোলাকিয়া স্পেশাল-১ (ভৈরববাজার-কিশোরগঞ্জ-ভৈরববাজার) ও শোলাকিয়া স্পেশাল-২ (ময়মনসিংহ-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ) নামে আরো দুটি বিশেষ ট্রেন পরিচালনা করবে রেলওয়ে। এ ট্রেন দুটি শুধু ঈদের দিন চলাচল করবে।

ঈদযাত্রায় যোগ হওয়া ১৮০টি কোচের মানের বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন বণিক বার্তাকে বলেন, বাংলাদেশ রেলওয়ের যা সামর্থ্য রয়েছে, তার পুরোটা দিয়েই আমরা ঈদ উপলক্ষে যাত্রীদের সেবা দেয়ার জন্য প্রস্তুতি নিয়েছি। ঘরমুখো মানুষের যাতায়াত নির্বিঘ্ন রাখতে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের দুই কারখানা থেকে যেসব কোচ বহরে যুক্ত হচ্ছে, সেগুলোর মান নিয়ে কোনো সংশয় নেই। যারা এসব কোচের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন, তাদের হয়তো প্রত্যাশাটা অনেক বেশি। রেলে কোচ ও ইঞ্জিন সংকট দীর্ঘদিন ধরে। তার পরও আমরা যাত্রীদের সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

* প্রতিবেদন তৈরিতে সহযোগিতা করেছেন লালমনিরহাট প্রতিনিধি মোয়াজ্জেম হোসেন
সুত্র:বণিক বার্তা, জুন ০৬, ২০১৮


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.