শিরোনাম

এডিবির ঋণের শর্তে রেলের ভাড়া বৃদ্ধি!

এডিবির ঋণের শর্তে রেলের ভাড়া বৃদ্ধি!

ইসমাইলআলীরেলপথে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে ট্রেনের ভাড়া বাড়ানো হয়েছিল সর্বশেষ ২০১৬ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি। এর পর থেকে একই ভাড়ায় সেবা দিয়ে যাচ্ছে রেলওয়ে। তবে এ সময় পরিচালন ব্যয় বৃদ্ধি পাওয়ায় বেড়েছে রেলের লোকসানের বোঝা। তাই লোকসানের ঘাটতি পোষাতে বাড়াতে হবে রেলের ভাড়াÑএমনটাই শর্ত ছিল এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি)। তবে ঋণের শর্তের কারণে ভাড়া বৃদ্ধির কোনো সুযোগ নেই বলে মনে করছে রেলপথ মন্ত্রণালয়।

সম্প্রতি বাংলাদেশ রেলওয়ে-এডিবির মধ্যে অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে এ তথ্য উঠে আসে। এডিবির অর্থায়নে পরিচালিত রেলওয়ের বিভিন্ন প্রকল্পের সর্বশেষ অবস্থা পর্যালোচনায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। মূলত রেলওয়ে সংস্কার প্রকল্পের আওতায় ট্যারিফ রিফর্ম পলিসি প্রণয়ন করা হয়েছিল। এ-সংক্রান্ত চূড়ান্ত প্রতিবেদনে ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি উঠে আসে। তবে রেলপথ মন্ত্রণালয় এখন ভাড়া বৃদ্ধির বিপক্ষে। এ ছাড়া এডিবি থেকে আগামীতে শর্তযুক্ত ঋণ নিতে রাজি নয় বাংলাদেশ।

‘রিফর্ম অব বাংলাদেশ রেলওয়ে’-এর চূড়ান্ত প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়ে ২০১৯ সালের মার্চে ও মে মাসে রেলপথমন্ত্রীর সভাপতিত্বে দুই দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এর ভিত্তিতে রেলপথ মন্ত্রণালয় ৯ সদস্যের একটি যৌথ কমিটি গঠন করে। ওই কমিটির প্রধান ছিলেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব। পরবর্তীকালে ২০১৯ সালের ২৫ আগস্ট ভাড়া বৃদ্ধির জন্য একটি সংক্ষিপ্ত প্রতিবেদন জমা দেয় ওই কমিটি।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, রুটভেদে শোভন চেয়ারে ভাড়া বাড়বে ২০-৩০ শতাংশ। এছাড়া প্রথম শ্রেণির (নন-এসি) সিট ৩০ শতাংশ ভাড়া বাড়বে। আর এসি চেয়ার (স্নিগ্ধা) ও এসি সিটে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ হারে ভাড়া বাড়বে। এছাড়া প্রথম শ্রেণি নন-এসি বার্থে ভাড়া বাড়ছে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ, এসি বার্থে ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ। তবে সাধারণ তথা নি¤œ আয়ের মানুষের কথা বিবেচনা করে দ্বিতীয় ও এর নিচের কোনো আসনে ভাড়া বাড়বে না। শুধু এসব ক্ষেত্রে ন্যূনতম ভাড়ার হার বৃদ্ধি পাবে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে রেলপথ সচিব মো. সেলিম রেজা শেয়ার বিজকে বলেন, এডিবির ঋণের শর্তের কারণে ভাড়া বাড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। বাংলাদেশ এখন নিজের সিদ্ধান্ত নিজেই নেয়। কারও শর্তে ঋণ নেয়া হবে না বা ভাড়া বাড়ানো হবে না। আর আপাতত রেলের ভাড়া বৃদ্ধির কোনো চিন্তা-ভাবনাও নেই।

যদিও রেলের ভাড়া বৃদ্ধি-সংক্রান্ত একটি বৈঠক গত বছর ২৬ আগস্ট রাজধানীর রেলভবনে অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে সব ধরনের ট্রেনের ভাড়া বৃদ্ধির বিস্তারিত প্রস্তাব তুলে ধরা হয়। এ বিষয়ে ২৭ আগস্ট শেয়ার বিজসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছিল।

ওই প্রস্তাবমতে, বর্তমানে ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের আন্তঃনগর ট্রেনে নন-এসি (শোভন চেয়ারে) ভাড়া ৩৪৫ টাকা। এ রুটে নতুন ভাড়া ৪৩২ টাকা

 নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছিল। একই রুটে এসি চেয়ারের ভাড়া ৬৫৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ৮০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়। আর ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটের এসি বার্থের ভাড়া এক হাজার ১৭৯ টাকা। এ ভাড়া বাড়িয়ে এক হাজার ৯৮০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছিল।

এদিকে ঢাকা-সিলেট রুটের আন্তঃনগর ট্রেনে নন-এসির ভাড়া ৩২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪০০ টাকা ও এসি চেয়ারের ভাড়া ৬১০ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ৭০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়। আর এসি বার্থের ভাড়া এক হাজার ৯৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ৯৭০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়।

প্রস্তাবনামতে, ঢাকা-রাজশাহী রুটের আন্তঃনগর ট্রেনে নন-এসির ভাড়া ৩৪০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪২৫ টাকা করা হবে। একই রুটে এসি চেয়ারের ভাড়া ৬৫৬ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ১০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়। আর এসি বার্থের ভাড়া এক হাজার ১৭৩ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ৮৪০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়।

ঢাকা-দিনাজপুর রুটের আন্তঃনগর ট্রেনে নন-এসি ভাড়া ৪৬৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫৮২ টাকা ও এসি চেয়ারের ভাড়া ৮৯২ টাকা থেকে বাড়িয়ে এক হাজার ৩৩০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়েছিল। আর এসি বার্থের ভাড়া এক হাজার ৫৯৯ টাকা থেকে বাড়িয়ে দুই হাজার ৪৩০ টাকা নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়। একইভাবে ঢাকা-পঞ্চগড়, ঢাকা-রংপুর, ঢাকা-লালমনিরহাট ও ঢাকা-খুলনা রুটের আন্তঃনগর ট্রেনের ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছিল।

এদিকে বিভিন্ন ট্রেনের ন্যূনতম ভাড়া বাড়ানোর প্রস্তাবও করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, বর্তমানে ট্রেনে সুলভ শ্রেণির ন্যূনতম ভাড়া ৩৫ টাকা, যা বাড়িয়ে ৪৫ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়। এছাড়া শোভন শ্রেণির ন্যূনতম ভাড়া ৪৫ থেকে বাড়িয়ে ৫৫, শোভন চেয়ারে ৫০ থেকে বাড়িয়ে ৬৫, প্রথম শ্রেণি সিট (নন-এসি) ৯০ থেকে ১১০, স্নিগ্ধা (এসি চেয়ার) ১০০ থেকে বাড়িয়ে ১১০, এসি সিট ও প্রথম শ্রেণি বার্থ (নন-এসি) ১১০ থেকে বাড়িয়ে ১৩০ এবং এসি বার্থ ১৩০ থেকে বাড়িয়ে ১৬৫ টাকা করার প্রস্তাব করা হয়।

এছাড়া দ্বিতীয় শ্রেণির ন্যূনতম ভাড়া পাঁচ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১০ টাকা, দ্বিতীয় শ্রেণির মেইলে ১৫ টাকার স্থলে ২০ টাকা ও কমিউটার ট্রেনের ন্যূনতম ভাড়া ২০ টাকার স্থলে ২৫ টাকা প্রস্তাব করা হয়।

এদিকে যাত্রীবাহী ট্রেনের পাশাপাশি ১৪টি পণ্য ও কনটেইনার পরিবহনেও ভাড়া ২০ শতাংশ বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়। আর রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার পরিবহনে বিদ্যমান ৫০ শতাংশ রেয়াতি সুবিধা কমিয়ে ২৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করা হয়।

যদিও পরবর্তীকালে রেলপথমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন সাংবাদিকদের বলেন, করোনার কারণে এখনই রেলের ভাড়া বৃদ্ধি করা হবে না। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় পরে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

উল্লেখ্য, প্রায় ২০ বছর পর ২০১২ সালের ১ অক্টোবর রেলের ভাড়া বাড়ানো হয়। ওই সময়ে রেলের যাত্রী পরিবহনের কিলোমিটারপ্রতি ভিত্তি ভাড়া ২৪ থেকে বাড়িয়ে ৩৬ পয়সায় উন্নীত করা হয়। ৫০ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হলেও বিভিন্ন রুটে থাকা ডিসকাউন্ট তুলে দেয়ায় ভাড়া বেড়েছিল প্রায় শতভাগ। এছাড়া ২০১৬ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি আরেক দফা ভাড়া বাড়ায় রেলওয়ে। ওই সময় কিলোমিটারপ্রতি ভিত্তি ভাড়া ৩৬ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৩৯ পয়সায় উন্নীত করা হয়।

সূত্র:শেয়ার বিজ, মার্চ ২৪, ২০২১


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.