শিরোনাম

ঢাকা-পঞ্চগড় ট্রেন চালুর খবরে উচ্ছ্বাস ঠাকুরগাঁওয়েও

ঢাকা-পঞ্চগড় ট্রেন চালুর খবরে উচ্ছ্বাস ঠাকুরগাঁওয়েও

ওবায়দুর মাসুম:
রেলওয়ে জানিয়েছে, দিনাজপুরের পর ঠাকুরগাঁও, রুহিয়া, পীরগঞ্জ হয়ে পঞ্চগড়ে যাবে একতা এক্সপ্রেস ও দ্রুতযান এক্সপ্রেস।
গত ২৩ অক্টোবর রেলের পশ্চিমাঞ্চলীয় মহাব্যবস্থাপক বরাবর পাঠানো রেলওয়ের ট্রাফিক ট্রান্সপোর্টেশন বিভাগের উপপরিচালক খালিদুন নেছা স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, “ঢাকা-দিনাজপুরের মধ্যে চলাচলকারী দ্রুতযান এক্সপ্রেস এবং একতা এক্সপ্রেস ট্রেন একই ধরনের কোচ, কম্পোজিশনে লাল-সবুজ রংয়ে ইন্দোনেশিয়ান কোচ দিয়ে পরিচালনা করা হবে। ট্রেনগুলো তিনটি রেক দিয়ে চালানো হবে। এতে কোনো সাপ্তাহিক বন্ধ থাকবে না।”
ঢাকা থেকে পঞ্চগড় পর্যন্ত ৫০৭ কিলোমিটার দূরত্বের বাংলাদেশ রেলওয়ের সবচেয়ে দীর্ঘ এই রুটে এ মাসেই ট্রেন চলাচল শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে।
তবে এখনও উদ্বোধনের দিন ঠিক হয়নি জানিয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মিহির কান্তি গুহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সময় দিলে উদ্বোধনের ডেট ঠিক করা হবে।”

মিহির গুহ বলেন, ঢাকা থেকে দিনাজপুর পর্যন্ত দূরত্ব ৪০৫ কিলোমিটার। আর পঞ্চগড়ের দূরত্ব ৫০৭ কিলোমিটার।

“পঞ্চগড় পর্যন্ত দূরত্ব অনেক বেশি। এজন্য একটা আলাদা রেক লাগবে। আমরা অ্যাডজাস্ট করে নতুন আরেকটা রেক ঠিক করেছি। পঞ্চগড় থেকে ট্রেন একেবারে ঢাকা পর্যন্ত চলে আসবে।”
সরাসরি ঠাকুরগাঁও-ঢাকা রেলপথে আন্তঃনগর ট্রেন চালুর দাবি ছিল দীর্ঘদিনের। ২০১০ সালে ৯৮২ কোটি টাকা নির্মাণ খরচে পঞ্চগড় থেকে ঠাকুরগাঁওয়ের ভোমরাদহ পর্যন্ত অবকাঠামো স্থাপনে দীর্ঘসূত্রতা পেরিয়ে এই কাজ শেষ হয় ছয় বছরের মাথায়।

তবে এলাকাবাসীর অভিযোগ ছিল, এরপরও ‘অজ্ঞাত কারণে’ চালু হয়নি উত্তরবঙ্গের এই রুটের আন্তঃনগর ট্রেন সেবা।
গত বছর জুলাই মাসে পঞ্চগড়ে এসে শাটল ট্রেন উদ্বোধন করেন রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক। এরপরও আন্তঃনগর ট্রেন চালু না হওয়ায় বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছেন সাধারণ মানুষ।
তবে গত ২৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঠাকুরগাঁও এসে আন্তঃনগর ট্রেন চালু করা হবে বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন।

বাংলাদেশ রেলওয়ের ঢাকা-পঞ্চগড়-ঢাকা রুটে আন্তঃনগর ট্রেন চালুর মধ্যে দিয়ে এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবিপূরণের প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, “ওই এলাকার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি এই রুটে আন্তঃনগর ট্রেন চালু করা। ওই দুটি জেলা থেকে যারা ঢাকা আসতে হলে দিনাজপুর এসে ট্রেনে চড়তে হয়। তাদের জন্য টিকেট কাটা একটু ডিফিকাল্ট এজন্য তাদের দাবি ছিল দীর্ঘদিনের।”

বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক কাজী মো. রফিকুল আলম বলেন, এক সময় দিনাজপুর থেকে পঞ্চগড় পর্যন্ত মিটারগেজ রেললাইন চালু ছিল। তবে সম্প্রতি তা ডুয়েলগেজে উন্নীত করায় তা দিয়ে ব্রডগেজ ট্রেনও চলাচল করতে পারবে।

বৃহস্পতিবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “ওই ট্রেন দুটো চালু হলে দুটি জেলার মানুষ সহজে ঢাকায় যাতায়াত করতে পারবে।

“দুটি জেলার অর্থনীতির ওপরও ইতিবাচক প্রভাব পড়বে, সবদিক থেকেই ভালো হবে। এছাড়া আমাদের রেলের আয় বাড়বে। দিনাজপুর পর্যন্ত আমাদের রেললাইন আছে। এখন দিনাজপুর থেকে পঞ্চগড় পর্যন্ত চলে যাবে।”

দুটি নতুন আন্তঃনগর ট্রেন চালুর খবরে দুটি জেলার মানুষ উচ্ছ্বসিত বলে জানান সুশাসনের জন্য নাগরিক, সুজনের ঠাকুরগাঁও শাখার সাধারণ সম্পাদক আবদুল লতিফ।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ট্রেন চালু হওয়ার খবর নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মুখর।

“দীর্ঘদিনের দাবি ছিল ঢাকা থেকে সরাসরি আন্তঃনগর ট্রেন চালু হোক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার হওয়া একটি চিঠিতে দেখলাম ১০ নভেম্বর থেকে এ ট্রেন চালু হওয়ার কথা রয়েছে। দীর্ঘ আন্দোলনের পর সরকার এই উদ্যোগ নেওয়ায় মানুষ খুবই খুশি হয়েছি। তবে দুটি ট্রেনে শুনেছি, মাত্র ১০০টি আসন রাখা হবে। যদি এটা হয় তাহলে আমাদের প্রত্যাশা সেভাবে পূরণ হবে না। আমি আসন সংখ্যা বাড়ানোর দাবি জানাচ্ছি।”

সরাসরি ট্রেন চালু হলে পঞ্চগড়ের মানুষের অনেক উপকার হবে বলে মনে করছেন পঞ্চগড় নাগরিক কমিটির সভাপতি এরশাদ হোসেন সরকার।

তিনি বলেন, দীর্ঘ আন্দোলনের ফল আসায় খুশি পঞ্চগড়ের মানুষ।

“ঢাকা থেকে পঞ্চগড় সবচেয়ে দূরের জেলা। যদি সরাসরি ট্রেন চালু হলে আমরা নিরাপদে যাতায়াত করতে পারব। বাসে চলাচলের ক্ষেত্রে প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটছে। আর যানজটের কারণে কখন গিয়ে পৌঁছাব তা বলা যায় না। ট্রেনে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পৌঁছানো সম্ভব।”
বর্তমানে একতা এক্সপ্রেস ট্রেন ঢাকা সকাল ১০টায় ছেড়ে সন্ধ্যা ৬টা ৬০ মিনিটে দিনাজপুর পৌঁছে। রাত এগারোটায় দিনাজপুর থেকে ছেড়ে পরদিন সকাল আটটা ১০ মিনিটে কমলাপুর পৌঁছে।
দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেন রাত ৮টায় ঢাকা থেকে ছেড়ে ভোর ৪টা ৪০ মিনিটে দিনাজপুর পৌঁছে। সকাল সোয়া নয়টায় ট্রেনটি দিনাজপুর ছাড়ে ঢাকায় পৌঁছে ৬টা ১০মিনিটে।

নতুন সময়সূচি অনুযায়ী, একতা এক্সপ্রেস ট্রেনটি ঢাকা থেকে সকাল ১০টায় ছেড়ে রাত আটটা ৪৫ মিনিটে পঞ্চগড় পৌঁছুবে। রাত নয়টায় পঞ্চগড় থেকে ছেড়ে সকাল আটটা দশ মিনিটে ঢাকা পৌঁছুবে।
দ্রুতযান ঢাকা থেকে ছাড়বে রাত আটটায়, সকাল ৬টা ৩৫ মিনিটে সেটি পঞ্চগড়ে পৌঁছুবে। আবার সাতটা বিশ মিনিটে পঞ্চগড় থেকে ছেড়ে সন্ধ্যা ৬টা ২০ মিনিটে ঢাকা পৌঁছুবে।
বর্তমানে একতা এক্সপ্রেস ট্রেন সোমবার আর দ্রুত যান বুধবার বন্ধ থাকে। নতুন সময়সূচীতে এই দুটি ট্রেনের সাপ্তাহিক কোনো বন্ধ থাকবে না।
দুটি ট্রেনেই ১৩টি করে কোচ রয়েছে। একতা এক্সপ্রেস ট্রেনে মোট আসনে ৮৪০টি, দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেনে ৮৬০টি।
নতুন আসন বিন্যাস অনুযায়ী, দ্রুতযানে ৯৪৪টি এবং একতায় ৮৯৪টি আসন থাকার কথা রয়েছে বলে জানিয়েছে রেলওয়ে।

সুত্র:বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম , 2018-11-01


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

3 Trackbacks & Pingbacks

  1. whatismyip
  2. ufabtb
  3. a knockout post

Comments are closed.