ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জের রেলস্টেশনে ঢাকাগামী আন্তনগর ট্রেনের টিকিট সিন্ডিকেটের কাছ থেকে দ্বিগুণেরও বেশি দামে কিনতে হচ্ছে যাত্রীদের। পীরগঞ্জ থেকে ঢাকা পর্যন্ত ট্রেনের টিকিটের দাম ৫০০ টাকা হলেও সিন্ডিকেটটি কৌশলে কাউন্টার থেকে টিকিট কিনে প্রতিটি ১২ শ হতে ১৪ শ টাকায় বিক্রি করছে। তবে স্টেশন মাস্টার বলছেন, সিন্ডিকেট বন্ধে তাদের কোনো কিছু করার নেই। যাত্রীদের অভিযোগ, লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে ট্রেনের টিকিট কেনার আগেই টিকিট বিক্রি শেষ হয়ে যায়। সিন্ডিকেটটির সদস্যরা সবার প্রথমে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কিনে পরে ৫০০ টাকার টিকিট বাইরে বিক্রি করছে ১২০০ টাকায়।
ট্রেনে ভ্রমণ নিরাপদ হওয়ায় যাত্রীরা বাধ্য হয়ে দ্বিগুণ টাকা দিয়েই চক্রটির কাছ থেকে টিকিট কিনছেন।
রাণীশংকৈল উপজেলা থেকে আসা এক যাত্রী বলেন, লাইনে দাঁড়িয়েও কাউন্টার থেকে টিকিট কিনতে পারিনি। পরে আরেকজনের মাধ্যমে ১২০০ টাকা দিয়ে টিকিট কিনেছি। ট্রেনে যাত্রায় দুর্ঘটনার টেনশন থাকে না। তাই বাধ্য হয়েই বেশি টাকা দিয়ে টিকিট কিনেছি।
গাজীপুরে একটি গার্মেন্টে চাকরিজীবী নজরুল ইসলামের অভিযোগ, তাকে চড়া দামে টিকিট কিনতে হয়েছে। তিনি বলেন, ঈদের ছুটিতে বাড়ি আসছিলাম। ছুটি শেষ এখন আবার ফিরতে হবে কর্মস্থলে। ট্রেনের টিকিট তো কাউন্টার থেকে কিনতে পারলাম না। পরে ১২ শ টাকা দিয়েই টিকিট নিয়েছি। সরকার ইচ্ছে করলেই এ সব বন্ধ করতে পারে। আমাদের মতো মানুষদের কাছে এত দামে টিকিট কেনা কষ্টসাধ্য হলেও বাধ্য হয়ে চড়া দামে কিনতে হচ্ছে।
‘
হরিপুর, রাণীশংকৈল ও পীরগঞ্জ এই তিন এলাকার মানুষের যেহেতু স্টেশন পীরগঞ্জ। তাই এখানে ঠাকুরগাঁও স্টেশনের থেকেও বেশি টিকিট দরকার। কিন্তু এখানে যাত্রীর তুলনায় টিকিট খুবই কম। আসন সংখ্যা বাড়ানো উচিত। আর সিন্ডিকেটের জন্য বর্তমানে কাউন্টারে তো টিকিট পাওয়াই যায় না।
পীরগঞ্জ প্রেস ক্লাবের যুগ্ন সম্পাদক সবুজ আহম্মেদ বলেন, সিন্ডিকেটের জন্য আমাদের টিকিট দ্বিগুণ দামে কিনতে হচ্ছে। এই চক্রটিকে আইনের আওতার আনার দাবি জানাচ্ছি। সবুজ আরো বলেন, পীরগঞ্জ রেল স্টেশনের কর্মকর্তার সাথে সিন্ডিকেটের যোগসাজশ আছে নিশ্চয়ই। তবে এ সবের সাথে রাজনৈতিক নেতাদের সম্পৃক্ততা না থাকলেও সিন্ডিকেট বন্ধে রাজনৈতিক মহলের চুপ থাকার বিষয়টি রহস্যজনক। দ্রুত সিন্ডিকেট বন্ধে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
সূত্র বলছে, রেল স্টেশন মাস্টারের সাথে সমঝোতা করেই কালোবাজারি সিন্ডিকেটটি টিকিটের এই রমরমা বাণিজ্য দীর্ঘদিন ধরে চালিয়ে আসছে। সিন্ডিকেটের কালোবাজারির ভাগবাটোয়ারার টাকার একটি অংশ রেল স্টেশন মাস্টারের পকেটে ঢোকে। তবে এই বিষয়টি অস্বীকার করেন স্টেশন মাস্টার।
রেলস্টেশন মাস্টারের তথ্য অনুযায়ী, পঞ্চগড় থেকে ঢাকাগামী একতা এক্সপ্রেসে পীরগঞ্জ রেলস্টেশনের জন্য শোভন চেয়ারের আসন সংখ্যা মাত্র ২২টি বরাদ্দ আছে। এসি বা কেবিনের কোনো আসন বরাদ্দ নেই। ট্রেনটি পীরগঞ্জ ছেড়ে যায় প্রতিদিন রাত ১০টা ৫ মিনিটে। অপরদিকে, দ্রুতযান এক্সপ্রেস ট্রেনে পীরগঞ্জ স্টেশনের যাত্রীদের জন্য মাত্র ৩০টি আসন বরাদ্দ রয়েছে। ট্রেনটি প্রতিদিন সকাল ৮টা ২৫ মিনিটে পীরগঞ্জ ছেড়ে যায়।
স্টেশন মাস্টার গোলাম রব্বানী জানান, যাত্রীদের চাহিদার তুলনায় পীরগঞ্জে ট্রেনের আসন বরাদ্দ খুবই কম। কারণ পীরগঞ্জ স্টেশনে পার্শ্ববর্তী রাণীশংকৈল ও হরিপুর উপজেলার যাত্রীও আসে। যাত্রীদের চাহিদা অনুযায়ী, প্রতিদিন একতা এক্সপ্রেসে পীরগঞ্জ রেলস্টেশনের আসন প্রয়োজন ১০০টি। তাহলে যাত্রীদের চাহিদা পূরণ হবে। সেখানে টিকিট বরাদ্দ মাত্র ২২টি। যাত্রীদের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে জানান তিনি। সিন্ডিকেটের বিষয়ে তিনি বলেন, কে সিন্ডিকেটের লোক সেটা তো আমি চিনে রাখি না। প্রতিদিন সকাল ১১টায় আন্তনগর ট্রেনের টিকিট ছাড়া হয়। এ সময় যারাই আগে এসে লাইনে দাঁড়ায় তারাই টিকিট পায়। তবে পার্শ্ববর্তী ঠাকুরগাঁও সদর রেলস্টেশনের টিকিট অনলাইনে চালুর পর বর্তমানে পীরগঞ্জ রেলস্টেশনে সিন্ডিকেটে টিকিট বিক্রি হয় না বলে তিনি দাবি করেন। গোলাম রব্বানী বলেন, পীরগঞ্জ রেলস্টেশনের টিকিট লাইনে দাঁড়িয়ে কেনার পর সেই টিকিট বাইরে কে বেশি দামে বিক্রি করছে সেটা তো আমার পক্ষে শনাক্ত করা সম্ভব নয়। সিন্ডিকেট বন্ধে তাদের পক্ষ থেকে কোনো কিছু করার নেই জানিয়ে তিনি বলেন, আমার কাছে যতক্ষণ টিকিট আছে আমি ততক্ষণ বিক্রি করি। টিকিট শেষ আমার কাউন্টারও বন্ধ।
সুত্র:কালের কন্ঠ, ১১ জুন, ২০১৯