শিরোনাম

ঢাকা থেকে রেলপথে ঈদযাত্রা: ৯ হাজার টিকিটের জন্য দাঁড়াবে লাখো মানুষ

ঢাকা থেকে রেলপথে ঈদযাত্রা: ৯ হাজার টিকিটের জন্য দাঁড়াবে লাখো মানুষ

শিপন হাবীব:

পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে আগামী ২২ মে থেকে পাঁচ দিনব্যাপী ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি করবে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। এবার সাধারণ যাত্রীদের কাছে পাঁচটি স্টেশনের ৩৫টি কাউন্টার থেকে প্রতিদিন ৯ হাজার ৩২ টিকিটি বিক্রি করা হবে।

এর সঙ্গে বিশেষ কোটায় আরও ১০ শতাংশ মিলে প্রতিদিন ১০ হাজার ৩৫টি টিকিটি বিক্রি করা হবে। এ টিকিট পেতে কাউন্টারের সামনে লাখো মানুষ দাঁড়াবেন। কার আগে কে দাঁড়াবেন এ নিয়ে প্রতি বছরের মতো এবারও ‘টিকিটযুদ্ধ’ হবে।

‘সোনার হরিণ’ নামক রেল টিকিট কাটতে দুই থেকে আড়াই দিন ধরেও লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন নিরুপায় মানুষ। অন্য দিকে, কাউন্টার ছাড়া ৫০ শতাংশ টিকিটের মধ্যে রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারী পাঁচ শতাংশ এবং ভিআইপি কোটায় পাঁচ শতাংশ টিকিট বিক্রি করা হবে।

রেলপথ মন্ত্রণালয় ও রেলওয়ে বিভাগ সূত্রে জানা যায়, স্বাধীনতার পর এবারই প্রথম ঈদ উপলক্ষে রাজধানীর পাঁচটি স্টেশন থেকে একযোগে অগ্রিম টিকিট বিক্রির ব্যবস্থা করা হয়েছে। এর আগে কমলাপুর ও বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হতো। তবে ১০ বছর ধরে শুধু কমলাপুর স্টেশন থেকে অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হচ্ছিল। ফলে এ স্টেশনের কাউন্টারের সামনে ২-৩ দিন দাঁড়িয়ে থাকতে হতো টিকিট প্রত্যাশিতদের। তাদের ভাগ্যে ১০ শতাংশের টিকিটও মিলত না।

রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজনের নির্দেশনায় শুধু কমলাপুর নয়, রাজধানীর বনানী, বিমানবন্দর, তেজগাঁও ও পুরাতন ফুলবাড়িয়া রেলওয়ে স্টেশন থেকে অগ্রিম টিকিট দেয়া হবে। মন্ত্রীর নির্দেশনায় এবারই প্রথম ৫০ শতাংশ টিকিট ‘রেলসেবা’ নামক একটি বিশেষ অ্যাপসের মাধ্যমে বিক্রি করা হচ্ছে। ‘রেলসেবা’ অ্যাপস ২৮ এপ্রিল রেলপথমন্ত্রী উদ্বোধন করেন। এতে ঘরে বসে টিকিট কাটতে পারছেন যাত্রীরা। যারা কাউন্টার থেকে টিকিট সংগ্রহ করবেন তাদের এক প্রকার যুদ্ধে জয়ী হতে হবে।

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে শুধু পশ্চিমাঞ্চলে চলাচলকারী ১৩টি আন্তঃনগর ট্রেনের টিকিট বিক্রি করা হবে। প্রায় ১০ হাজার টিকিটের মধ্যে ৫০ শতাংশ অর্থাৎ ৫ হাজার টিকিট ২০টি কাউন্টারের মাধ্যমে বিক্রি করা হবে। এর মধ্যে ৫০০ টিকিট বিশেষ কোটায় চলে যাবে। সাধারণ যাত্রীরা পাবেন সাড়ে চার হাজার টিকিট। বানানী রেলস্টেশন থেকে নেত্রকোনাগামী দুটি ট্রেনের টিকিট বিক্রি করা হবে। এ দুটি ট্রেনের ১৫০০ টিকিটের মধ্যে ৭৫০টি টিকিটি তিনটি কাউন্টার থেকে বিক্রি করা হবে। এর মধ্যে বিশেষ কোটায় প্রায় ৭৫ টিকিট বিক্রি হবে। ৬৭৫টি টিকিট সাধারণ যাত্রীরা কাটতে পারবে।

বিমানবন্দর রেলস্টেশন থেকে চট্টগ্রাম ও নোয়াখালীগামী পাঁচটি আন্তঃনগর ট্রেনের অগ্রিম টিকিট দেয়া হবে। এ পাঁচটি ট্রেনে তিন হাজার ৩০০ টিকিটের মধ্যে ৫০ শতাংশ বাদ দিয়ে এক হাজার ৬৫০টি টিকিট বিক্রি করা হবে। এর মধ্যে বিশেষ কোটায় ১৬৫টি টিকিট বিক্রি করা হবে। অর্থাৎ এক হাজার ৪৮৫টি টিকিট সাধারণ যাত্রীরা কাটতে পারবেন। তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশন থেকে দেওয়ানগঞ্জ ও ময়মনসিংহ রুটের চারটি ট্রেনের টিকিট বিক্রি করা হবে। চারটি ট্রেনের তিন হাজার টিকিটের মধ্যে ৫০ শতাংশ বাদ দিয়ে ১৫০০ টিকিট কাউন্টার থেকে বিক্রি করা হবে। এর মধ্যে ১৫০ টিকিট বিশেষ কোটায় বিক্রি হবে।

অর্থাৎ এক হাজার ৩৫০টি টিকিট সাধারণ যাত্রীরা কাটতে পারবে। এখান থেকে ১৩৫০টি টিকিট বিক্রি করা হবে। তেজগাঁও স্টেশনে টিকিট বিক্রয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, এ স্টেশন থেকে এবার প্রথম ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হবে। রাজধানীর ফুলবাড়িয়া এলাকায় ফুলবাড়িয়া স্টেশন নামে একটি রেলওয়ে স্টেশন ছিল। ১৯৮০ সালে সেটি পরিত্যক্ত করা হয়।

এ এলাকায় রেলওয়ে কল্যাণ ট্রাস্ট ভবনসংলগ্ন অস্থায়ী কাউন্টার থেকে ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হবে। এ অস্থায়ী কাউন্টার থেকে সিলেট ও কিশোরগঞ্জগামী ছয়টি ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি করা হবে। সাড়ে চার হাজার টিকিটের মধ্যে ৫০ শতাংশ বাদ দিয়ে দুই হাজার ২৫০টি টিকিট বিক্রি করা হবে। এর মধ্যে ২২৫টি টিকিট বিশেষ কোটায় বিক্রি হবে। অর্থাৎ দুই হাজার ২৫টি টিকিট সাধারণ যাত্রীরা কাটতে পারবে।

জানা গেছে, ঈদের তিন দিন আগে থেকে বিভিন্ন রুটে স্পেশাল ট্রেন চলাচল করবে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রেলওয়ের এক কর্মকর্তা জানান, স্পেশাল ট্রেন চালুর দিন থেকে টিকিটের সংখ্যা বাড়ানো হবে। ছয়টি স্পেশাল ট্রেনে প্রায় তিন হাজার টিকিট বিক্রি করা হবে। এর মধ্যে ৫০ শতাংশ অ্যাপসে দেয়া হবে। বাকি ৫০ শতাংশ অর্থাৎ ১৫০০ টিকিট কাউন্টার থেকে বিক্রি করা হবে। এর মধ্যে ১০ শতাংশ অর্থাৎ ১৫০টি টিকিট বিশেষ কোটায় চলে যাবে।

স্পেশাল ট্রেনে ১৩৫০টি টিকিট কাউন্টার থেকে বিক্রি করতে পারবে রেল। রেলওয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মিয়াজাহান যুগান্তরকে জানান, ঈদ উপলক্ষে যাত্রীসেবা নিয়ে আজ বুধবার রেলপথমন্ত্রী মো. নূরুল ইসলাম সুজন সংবাদ সম্মেলন করবেন। মিয়াজাহান বলেন, ঈদ উপলক্ষে ঈদের তিন দিন আগে থেকে স্পেশাল ট্রেনও চলাচল করবে। এবার নতুন করে ঢাকা-রংপুর, ঢাকা-ঈশ্বরদী রুটে দুটি ঈদ স্পেশাল ট্রেন চালানো হবে। স্পেশাল ট্রেন ও অতিরিক্ত বগি সংযোগের মাধ্যমে টিকিট বিক্রির সংখ্যা আরও বাড়বে বলেও তিনি জানান।

সুত্র:যুগান্তর, ১৫ মে ২০১৯


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.