আহমেদ সাঈদ বুলবুল : দক্ষিণাঞ্চলে যশোরের রেলওয়ে জংশন হয়ে সারাদেশে চলাচলকারী ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় রোধ করা যাচ্ছে না। একমাত্র এ রেলপথ দিয়ে কলকাতাগামীসহ ১৪টি ট্রেন চলাচল করছে। ফলে চলাচলের চাপ সামলাতে না পেরে এই বিপর্যয় যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে! একপাশ দিয়ে একটি ট্রেন আসলে অপর পাশের ট্রেনকে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় দীর্ঘ সময়। এতে দুর্ঘটনার ঝুঁকির পাশাপাশি যাত্রীদের কর্মঘণ্টা নষ্ট হচ্ছে প্রতিনিয়ত। এ রুটে দ্বৈত রেলপথ না থাকার কারণে ট্রেনের গতিও যাচ্ছে কমে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা যায়, খুলনা থেকে যশোর হয়ে রাজধানী ঢাকাসহ উত্তরাঞ্চলের পথে মোট ১১টি ট্রেন যাতায়াত করে। ট্রেনগুলো হলো :গোয়ালন্দ মেল, কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস, রূপসা এক্সপ্রেস, চিত্রা এক্সপ্রেস, রকেট মেল, মহানন্দা, সাগরদাঁড়ি, সুন্দরবন এক্সপ্রেস, বেনাপোল এক্সপ্রেস ও বেনাপোল কমিউটার ট্রেন (দিনে দুবার)। এছাড়া রয়েছে কলকাতার সঙ্গে সপ্তাহে একদিন বন্ধন এক্সপ্রেসসহ প্রতিদিন দুটি মালবাহী ট্রেনের চলাচল। এসব ট্রেনই চলে একমাত্র রেলপথ (লাইন) দিয়ে। খুলনা থেকে দর্শনা পর্যন্ত একটি লাইন রয়েছে রেলের। দর্শনা থেকে ঈশ্বরদী পর্যন্ত ডাবল লাইন থাকলেও ঈশ্বরদী থেকে ঢাকা আবার একটি লাইনে চলে ট্রেন। খুলনা থেকে যশোর পর্যন্ত ৫৬ কিলোমিটার, খুলনা থেকে দর্শনা ১২৬ কিলোমিটার এবং যশোর থেকে বেনাপোল ৩৭ কিলোমিটার রেলের লাইন রয়েছে।
অনুমোদিত বা অননুমোদিত গেট নিয়েও রয়েছে নানা সমস্যা। অরক্ষিতভাবে গড়ে ওঠা গেটে হরহামেশা ঘটছে দুর্ঘটনা। গত সোমবারও যশোরের ঝিকরগাছার বামনআলী রেলক্রসিংয়ে বেনাপোলমুখী বেনাপোল এক্সপ্রেসের ধাক্কায় থ্রি-হুইলারে থাকা ছয় স্কুলশিক্ষার্থী আহত হয়। সেখানে গেট কিংবা গেটম্যান ছিল না। উল্লেখ্য, খুলনা থেকে যশোর ক্যান্টনমেন্ট পর্যন্ত ৫২টি লেভেলক্রসিং গেট রয়েছে। এর মধ্যে নয়টিতে গেটম্যান নেই। এছাড়া অস্থায়ীভাবে গড়ে ওঠা আরো ৪০টি গেট রয়েছে অরক্ষিত। এই পথে ২২টি স্টেশন থাকলেও ছয়টি স্টেশনে মাস্টার না থাকার কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। এগুলো হলো: ফুলতলা, চেঙ্গুটিয়া, রুপদিয়া, ক্যান্টনমেন্ট, মেহেরুল্লাহ নগর ও আনসারবাড়িয়া।
স্থানীয় বাসিন্দা সাইফুর রহমান সাইফ প্রতিদিন ট্রেনে নওয়াপাড়া থেকে যশোর যাতায়াত করেন। তিনি জানান, খুলনা-বেনাপোল কমিউটার ট্রেনের পরিবেশ মোটেও ভালো না। চোরাচালানিরা পণ্য নিয়ে প্রতিদিন চলাচল করায় সাধারণ যাত্রীদের দুর্ভোগে পড়তে হয়। রাত হলে ভয় থাকে ছিনতাইয়ের। যশোর স্টেশন থেকে একবার তার ল্যাপটপও ছিনতাই হয়। চাহিদার চেয়ে আসন কম থাকায় ১০ দিন আগে বিক্রি শুরু হওয়া টিকিটের এমনিতেই সংকট থাকে। এসব ট্রেনের কোনোটির একটি বগি নষ্ট হলে সৃষ্টি হয় আরেক সংকট। বগিটি মেরামতের জন্য পাঠানো হয় সৈয়দপুরে। সেখান থেকে মেরামত হয়ে কবে আসবে, তা জানা নেই কারোই। খুলনা-ঢাকা রুটে চলাচলকারী সুন্দরবন এক্সপ্রেসের শীতাতপ ‘ঘ’ বগি গত ২ সেপ্টেম্বর মেরামতের জন্য পাঠানো হলেও এখনো ফেরত আসেনি সেটা। ফলে আসন সংকটের মধ্যে চরম বিড়ম্বনায় পড়েছেন এ অঞ্চলের যাত্রীরা। বিকল্প হিসেবে খুলনার ভাড়ায় এসি টিকেট কাটতে হচ্ছে অনেককে। যশোর রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার মো. সাইদুজ্জামান বলেন, ঐ কোচ সৈয়দপুর থেকে কবে ফিরে এসে যুক্ত হবে তা জানা নেই।
এদিকে খুলনা-রাজশাহীতে চলাচলকারী কপোতাক্ষ ও সাগরদাঁড়ি এক্সপ্রেসের আপ-ডাউন ট্রেনসহ কয়েকটি ট্রেনকে ২ নম্বর প্ল্যাটফরমে দাঁড়াতে হয়। এই প্ল্যাটফরমে নেই যাত্রীছাউনি। ফলে রোদ কিংবা বৃষ্টির মধ্যে অবর্ণনীয় দুর্ভোগকে সঙ্গী করেই যাত্রীদের ট্রেনে চড়তে কিংবা নামতে হয়। এই প্ল্যাটফরমে যাতায়াতের ওভারব্রিজটিও একেবারে শেষপ্রান্তে। সেটারও নেই ছাউনি। দূরের এই ওভারব্রিজ ব্যবহারের চেয়ে রেললাইন পার হয়ে যাতায়াত করতে দেখা যায় অনেককে। তাদের মধ্যে বয়স্ক, নারী ও শিশুদের সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়তে হয়। স্টেশন মাস্টার মো. সাইদুজ্জামান বলেন, প্ল্যাটফরমে শেড না থাকায় যাত্রীরা বৃষ্টি হলে ভিজে যান। রৌদ্রে কষ্ট পান যাত্রীরা।
যশোর রেলওয়ের স্টেশন মাস্টার মো. সাইদুজ্জামান জানান, যশোর রেলওয়েতে যাত্রীদের কোনো সুব্যবস্থা নেই। বসার জায়গার অভাব এবং শৌচাগারের সংকট তীব্র। প্রতিদিন এখানে চার হাজার যাত্রী যাতায়াত করলেও বসার জন্য আমাদের মাত্র দুটি রুম রয়েছে যেখানে বসতে পারেন ২০ জন। রুম দুটিতে বাথরুম থাকলেও ব্যবহার উপযোগী নয়। আর একটি রেললাইন হবার কারণে ক্রসিংয়ের সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা যাত্রীদের বসে থাকতে হয়। স্টেশনে ডিজিটাল ডিসপ্লে বোর্ড থাকলে যাত্রীরা ট্রেন আসার সময়সূচি সম্পর্কে ধারণা পাবেন।
সুত্র:ইত্তেফাক, ২৫ অক্টোবর, ২০১৯