শিরোনাম

রেলবগি নির্মাণ করা গেলে উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে

রেলবগি নির্মাণ করা গেলে উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে

হোসাইন মুবারক : দেশে তৈরি হবে রেলকোচ। আমদানিনির্ভরতা থেকে ফিরে দেশ সাশ্রয় করবে বৈদেশিক মুদ্রা। কাজ করবে নিজস্ব জনবল, নিজস্ব অবকাঠামোতে। এটি শুভ সংবাদ।

অর্থনৈতিক উন্নয়নে পরিবহন ব্যবস্থার গুরুত্ব অপরিসীম। পণ্য পরিবহনে রেলই অপেক্ষাকৃত সাশ্রয়ী। পণ্য পরিবহনই নয়, ভ্রমণযাত্রায়ও অনেকের প্রথম পছন্দ রেল। জলপথ ও আকাশপথের মধ্যে ক্ষেত্রবিশেষে আজও রেলযাত্রার আবেদন রয়ে গেছে বিশ্বব্যাপী।

উপমহাদেশে ব্রিটিশ শাসকেরা প্রথম রেলপথ স্থাপন করেছে। এটিকে ব্রিটিশদের বড় অবদান বলা যায়। হাজার হাজার মাইল বন-জঙ্গল পরিষ্কার করে, কোথাও কোথাও উঁচু করে মাটি তুলে সংযোগ পথ তৈরি করা হয়। এর ওপরেই বসানো হয় রেলপথ। শুধু তা-ই নয়, এদেশে ওই সময়ই এ রেলপথে চলাচলের জন্য বগি নির্মাণের উদ্যোগ নেয় ব্রিটিশ সরকার। ১৮৭০ সালে সৈয়দপুরে ২২২ একর জমি আওতাভুক্ত করে। এর মধ্যে ১১০ একর জমির ওপর রেলওয়ে ওয়ার্কশপ প্রতিষ্ঠা করা হয়। সেখানে সে সময় ২৬টি শপে কোচের বেশ কিছু সরঞ্জাম তৈরি করা শুরু হয়। ওয়ার্কশপের ভেতর আরও ১১২ একর জমি পতিত অবস্থায় থেকে যায়।

স্বাধীনতার আগে মেরামতের পাশাপাশি কিছু কোচ তৈরি করা হতো ওই ওয়ার্কশপে। তবে ১৯৯৩ সালে তা আবার বন্ধ করে দেওয়া হয়। ব্রিটিশদের নির্মাণ করা অবকাঠামোর ওপর বর্তমান সরকার উদ্যোগ নিয়েছে যাত্রীবাহী রেলকোচ ও মালবাহী

ওয়াগন নির্মাণের।

শুধু সৈয়দপুর নয়, ১৯৪৭ সালে চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে আরেকটি ওয়ার্কশপ নির্মাণ করা হয়। দুটি ওয়ার্কশপেই কোচ ও ওয়াগনের মেরামতের কাজ করা হয় বলেই অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে কোচ আমদানিতেই একমাত্র নির্ভরতা।

গত তিন বছর ভারত থেকে ২২০টি মিটার গেজ পণ্যবাহী ওয়াগন আমদানি করা হয়। ভারত থেকে আরও ১২০টি ব্রডগেজ এবং ইন্দোনেশিয়া থেকে ১০০টি মিটারগেজ ও ৫০টি ব্রডগেজ বগি কেনা হয়েছে এবং আরও ৪০০টি মিটারগেজ ও ৫০টি ব্রডগেজ কোচ কেনার প্রক্রিয়া চলমান।

দেশের চাহিদা মেটাতে আমরা নিজেরা বগি নির্মাণ করলে দেশ আমদানিনির্ভর থাকবে না। আমাদের অবকাঠামো, জনবল, দক্ষতা সবই রয়েছে। প্রয়োজনে অবকাঠামোর আরো উন্নয়ন, জনবলের দক্ষতা বৃদ্ধি, সেই সঙ্গে প্রশিক্ষণ দিয়ে প্রশিক্ষিত করা যেতে পারে।

সংবাদ সূত্রমতে, সৈয়দপুরে ওয়ার্কশপ চত্বরের পতিত প্রস্তাবিত ওয়ার্কশপে বছরে ৬০টি কোচ তৈরি করা সম্ভব।

সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার বছরে ৫৭০টি যাত্রীবাহী কোচ ও ৪৩০টি পণ্যবাহী ওয়াগন মেরামতের সক্ষমতা রয়েছে। তবে কারখানার মেরামত-ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সীমাবদ্ধতা আরও বেড়েছে। মেরামতের অপেক্ষায় থাকা কোচ-ওয়াগনের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। ফলে এখানে কোচ বা ওয়াগন তৈরির চিন্তা করার আর সুযোগ হয় না।

একই সঙ্গে ১৮৭০ সালে প্রতিষ্ঠিত এ কারখানার যন্ত্রপাতির কার্যক্ষমতা কমেছে। ১৫০ বছরের পুরোনো বা যন্ত্রপাতি দিয়ে শ্রমিকরা কাজ করেন এখানে। বর্তমানে কারখানায় শ্রমিক-কর্মচারী মিলে ৩১৪১ জনের স্থলে রয়েছেন ১২৪৩ জন। ৩৮ শতাংশ জনবল নিয়ে কাজ চলছে কারখানায়।

বাংলাদেশ রেলওয়ের পক্ষ থেকে একটি উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) চূড়ান্ত করা হয়েছে। সৈয়দপুর রেল কারখানার বিদ্যমান ওয়ার্কশপের সঙ্গে নতুন করে কোচ ও ওয়াগন তৈরির ওয়ার্কশপ নির্মাণ করা হবে। সরকারের এ উদ্যোগ দেশের অর্থনীতির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

বাংলাদেশ জাহাজ নির্মাণ করে রফতানি করছে। মানসম্পন্ন হওয়ায়ই এ জাহাজ আমদানি করে বিদেশিরা। এটি বহির্বিশ্বে আলাদা পরিচিতি

দিয়েছে আমাদের। অথচ উপযুক্ত অবকাঠামো

থাকার পরও ট্রেনবগির ক্ষেত্রে

আমদানিনির্ভরতা কাটিয়ে উঠতে পারিনি।

আমাদের পরীক্ষিত বন্ধু ভারত রেলবগি নির্মাণে অনেক অগ্রসর। এর আগে দেশটি থেকে রেলবগি আমদানি করা হয়েছে। এ সহযোগী দেশই নতুন বগি নির্মাণ প্রকল্পে সংযুক্ত। বগি রফতানিকারক দেশ প্রকল্প সহযোগী হওয়ায় বলা যায়, প্রকল্পের সফলতা

বেশি দূরে নয়।

সরকার দেশে নতুন করে রেলপথের আরও সম্প্রসারণ করেছে। সম্প্রসারিত রেলপথ যুক্ত করেছে আরও নতুন অঞ্চলকে। এতে রেলবগির চাহিদা উত্তরোত্তর বাড়ছে।

পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের অবস্থান খুব কাছাকাছি। পরিকল্পনা গ্রহণ করা হলে বাস্তবায়নের প্রশ্ন আসে। আর পরিকল্পনাই যদি না থাকে, তাহলে বাস্তবায়ন চিন্তাতেই আসে না। সরকার যখন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে তখন বাস্তবায়ন অতি নিকটবর্তী।

রেলবগির মতো ভারী শিল্প নির্মাণ খুব সহজ নয়। এ কাজ এগিয়ে নিতে সংশ্লিষ্টদের আন্তরিক প্রচেষ্টা থাকতে হবে। ট্রেনবগিতে আমদানিনির্ভরতা কাটিয়ে উঠলে আমাদের যে বড় ধরনের অর্থ সাশ্রয়ের পাশাপাশি দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বৈপ্লবিক উন্নতি উন্নয়নযাত্রাকে আরও এগিয়ে নেবে।

সুত্র:শেয়ার বিজ


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.