শিরোনাম

ঢাকা সার্কুলার রেল বিনিয়োগ সমীক্ষা শুরু করছে দক্ষিণ কোরিয়া


।। নিউজ ডেস্ক ।।
রাজধানীর চারপাশে বৃত্তাকার রেলপথ নির্মাণের প্রকল্পে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) অধীনে বিনিয়োগ করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সমীক্ষা শুরু করেছে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি কনসোর্টিয়াম।

প্রযুক্তিগত ও আর্থিক সম্ভাব্যতা যাচাই ছাড়াও, প্রকল্পটি নিয়ে কীভাবে এগিয়ে যাওয়া যায় এবং রেলওয়ের কোন অংশকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত—সে বিষয়েও পরিকল্পনা প্রস্তুত করবে কনসোর্টিয়ামটি।

এ তথ্য জানিয়ে কর্মকর্তারা বলেছেন, সমীক্ষাটি গত অক্টোবরে শুরু হয়েছে। শেষ হতে ৯ মাস লাগবে।

কনসোর্টিয়ামের প্রতিনিধিরা সোমবার (০১ নভেম্বর) বাংলাদেশ রেলওয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন এবং প্রকল্পের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। শহরের সড়কে যানজট নিরসনে বৃত্তাকার রেলপথ নির্মাণের জন্য রেলওয়ে একটি সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা সম্পন্ন করার পর এ বৈঠক হয়।

রেলওয়ের সমীক্ষায় বলা হয়েছে, প্রকল্পটি শেষ হতে ৬ বছর সময় লাগবে। এতে ব্যয় হবে ৮ দশমিক ৩৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে রাজধানীর বাসিন্দা এবং আশেপাশের জেলা থেকে রাজধানীতে আসা মানুষের যাতায়াতে আরও সুবিধা হবে।

তবে কয়েকজন পরিবহন বিশেষজ্ঞ প্রকল্পটিকে অত্যন্ত উচ্চাভিলাষী বলে মনে করছেন। তারা বলছেন, এর কার্যকারিতা অন্যান্য পরিবহনের সঙ্গে সঠিকভাবে একীভূতকরণ ও কার্যকর পরিচালনাসহ অনেক বিষয়ের ওপর নির্ভরশীল।

বৃত্তাকার রেলটি রাজধানীর রিং রোড এবং নারায়ণগঞ্জের একটি অংশ বরাবর চলবে। এর দৈর্ঘ্য হবে ৮০ দশমিক ৮৯ কিলোমিটার।

রেলের প্রস্তাবিত রুট বিশ্ব ইজতেমা মাঠ-উত্তরা-ঢাকা চিড়িয়াখানা-গাবতলী-মোহাম্মদপুর-সদরঘাট-পোস্তগোলা-ফতুল্লা-চাষাড়া-আদমজী-ডেমরা-ত্রিমোহনী-পূর্বাচল-টঙ্গী।

এ রেল নেটওয়ার্কে ২৪টি স্টেশন থাকবে। এরমধ্যে ১১টিতে মেট্রো রেল, ডেডিকেটেড বাস সার্ভিস এবং সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের সঙ্গে ইন্টারচেঞ্জ সুবিধা থাকবে।

প্রায় ১০ কিলোমিটার রেল ট্র্যাক হবে ভূগর্ভস্থ। বাকি অংশ উপরে হবে। স্টেশনের মধ্যে ৩টি ভূগর্ভস্থ এবং বাকি ২১টি উপরে হবে।

২০১৯ সালের জুলাইয়ে প্রথম বাংলাদেশ-দক্ষিণ কোরিয়া যৌথ পিপিপি বৈঠকে সরকার প্রকল্পটি উত্থাপন করে এবং দক্ষিণ কোরিয়ার সঙ্গে সরকার-টু-সরকার অংশীদারিত্বের অধীনে বাস্তবায়নের প্রস্তাব দেয়।

তারপর ২০২০ সালের জানুয়ারিতে এসকে ইকোপ্ল্যান্ট, জিএস ই এন্ড সি এবং কোরিয়া ন্যাশনাল রেলওয়ে— ৩টি কোরিয়ান কোম্পানির একটি কনসোর্টিয়াম সম্ভাব্য বিনিয়োগকারী হিসেবে নির্বাচিত হয়।

বিনিয়োগকারীরা যা বলছেন: 

বৈঠকের নথি অনুসারে, সম্ভাব্য বিনিয়োগকারী কনসোর্টিয়াম কারিগরি ও আর্থিক মূল্যায়নের জন্য দোহওয়া ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি লিমিটেডসহ বিখ্যাত কিছু কোরিয়ান কোম্পানিকে নিয়োগ দিয়েছে।

রেলওয়ে তেরমুখ-ডেমরা রুটকে অগ্রাধিকার দিয়ে ২ ধাপে কাজ শেষ করার পরিকল্পনা করেছে। অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত এ রুট ৫৯ কিলোমিটার হওয়ার কথা। স্টেশন থাকার কথা ২০টি।

কিন্তু নথি অনুসারে, বিনিয়োগকারী কনসোর্টিয়াম ২২ দশমিক ৩ কিলোমিটারের তেরমুখ-গাবতলী রুটকে অগ্রাধিকার দিয়ে প্রকল্পটিকে ৪টি ধাপে ভাগ করার কথা ভাবছে। অগ্রাধিকারপ্রাপ্তে এ রুটে ৮টি স্টেশন থাকবে।

এ ছাড়া, রেলওয়ের গবেষণা অনুযায়ী তেরমুখে একটি স্টেবলিং ইয়ার্ড এবং ডেমরায় একটি ডিপো তৈরি হবে। কিন্তু বিনিয়োগকারীরা তেরমুখে ডিপো নির্মাণের কথা ভাবছেন।

মঙ্গলাবর (০২ নভেম্বর) রেলওয়ের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘তারা পিপিপির অধীনে প্রকল্পে বিনিয়োগ করবে কি না, তা মূল্যায়ন করতে সমীক্ষা শুরু করেছে।’

উভয় পক্ষের মধ্যে সবকিছু সামঞ্জস্যপূর্ণ হল, নির্মাণ কাজ শুরু করার জন্য চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে।

এতে আরও কিছু সময় লাগবে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।

রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদার গতকাল বলেন, কোরিয়ান পক্ষ এ প্রকল্পে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তবে নির্মাণ কাজ শুরু করার আগে অনেক কিছু করতে হবে।

‘সুতরাং, কবে থেকে ভৌত কাজ শুরু হবে তা বলা যাচ্ছে না’, তিনি বলেন।

পরিবহন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক শামসুল হক বলেন, ‘সার্কুলার রেলওয়ে নির্মাণের জন্য যে করিডোরে বাছাই করা হয়েছে, সে একই করিডোরে বৃত্তাকার সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা করছে সরকার। এ ছাড়া, সরকার বেশ কয়েকটি মেট্রো রেল লাইন নির্মাণ করছে। কর্তৃপক্ষ কি এসব বিষয় মাথায় রেখে সার্কুলার রেলের সত্যিকারের উপযোগিতা বিবেচনা করেছে?’

সূত্রঃ দ্য ডেইলি স্টার


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.