শিরোনাম

প্রতিবন্ধীবান্ধব নয় রেলপথ

বিশেষ বগিগুলোতেও উঠতে পারছে না রেলপথ মন্ত্রীর নির্দেশনা উপেক্ষিত

সব শ্রেণীর যাত্রীদের কাছে রেলপথে ভ্রমণ আরামদায়ক হলেও প্রতিবন্ধীদের বেলায় একেবারেই উল্টো। জাতীসংঘের সর্বশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের ১০ শতাংশ মানুষ প্রতিবন্ধী। কিন্তু তাদের জন্য স্থল, নৌ ও রেলপথে চলাচলের বিশেষ ব্যবস্থা নেই। ট্রেন সাধারণ মানুষের গণপরিবহন হলেও প্রতিবন্ধী মানুষরা চরমভাবে বঞ্চিত হচ্ছেন। সাধারণ যাত্রী ও রেলওয়ের মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যুগান্তরকে বলেন, নতুন আনা আধুনিক ট্রেনগুলোতে প্রতিবন্ধীবান্ধব বগি এবং পর্যাপ্ত পরিসেবা দেয়ার ব্যবস্থা থাকলেও তা কার্যকর করা হচ্ছে না। রেলপথমন্ত্রীকেও বিষয়টি জানানো হচ্ছে না। এ বিষয়ে মানা হচ্ছে না মন্ত্রীর নির্দেশনাও।

রেলপথ বিভাগ ও মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ২০১৫ সালে ভারত ও ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে ২৭০টি যাত্রীবাহী কোচ কেনার চুক্তি হয়। ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে ভারত থেকে কেনা ১২০টি বগি রেলওয়ে বহরে যোগ হয়। কিন্তু এসব বগিতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কোনো বিশেষ সুযোগ-সুবিধা ছিল না। পরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগ এবং বিভিন্ন উন্নয়ন সংগঠনের দাবির মুখে ইন্দোনেশিয়া থেকে ১৫০টি বগির মধ্যে ২৫টি বিশেষ বগি কেনার সিদ্ধান্ত হয়। এ জন্য রেলপথমন্ত্রী মো. মুজিবুল হক ওই বছরের ১৮ অক্টোবর রেলপথ ও মন্ত্রণালয় থেকে ৫ সদস্যবিশিষ্ট একটি প্রতিনিধি দল ইন্দোনেশিয়ায় পাঠান। বিশেষ বগিগুলো দিয়ে এখন ট্রেন চলাচল করলেও খোদ রেলপথমন্ত্রীর নির্দেশনাকে উপক্ষো করে প্রতিবন্ধীদের বঞ্চিত রাখা হয়েছে।

সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঢাকা থেকে পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলে চলাচলকারী একতা, দ্রুতযান, সোনার বাংলা, তূর্ণা, মহানগর প্রভাতী, মহানগর গোধূলী, তিস্তা, সিল্কসিটি, ধুমকেতু ও পারাবত আন্তঃনগর এক্সপ্রেস ট্রেনে প্রতিবন্ধীবান্ধব বিশেষ বগিগুলো চালানো হচ্ছে। বিশেষ বগিগুলোর দরজা ট্রেনের অন্য সব বগির দরজার দ্বিগুণের চেয়েও বেশি চড়া। একই সঙ্গে এ বিশেষ বগির টয়লেটগুলোও অন্যসব বগির টয়লেটগুলো থেকে দ্বিগুণ। দরজা ও টয়লেটগুলোতে খুব সহজেই হুইল চেয়ার প্রবেশের পাশাপাশি দু’জন যাত্রী ঢুকতে পারে।

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ৩ নম্বর প্লাটর্ফমে প্রতিবন্ধী ব্যক্তি আমিনুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তিনি বলেন, সিল্কসিটি দিয়ে রাজশাহী যাবেন। নির্ধারিত বগি থাকলেও তাতে ওঠা খুবই কষ্টকর।

কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী যুগান্তরকে জানান, ইন্দোনেশিয়া থেকে আসা ২৫টি বিশেষ বগি আনা হয়েছে। বর্তমানে ১০টি ট্রেনে ২০টি বগি লাগানো হয়েছে। ব্রডগেজ এবং মিটারগেজ ট্রেন হওয়ায় কমলাপুর স্টেশনে কোনো নির্ধারিত র‌্যাম কিংবা সিঁড়ি করা হয়নি প্রতিবন্ধী মানুষের জন্য। এটা সত্যিই দুঃখজনক। তিনি বলেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা ৫০ শতাংশ কম মূল্যে টিকিট কাটতে পারছে। তাদের উপযোগী স্টেশন, প্লাটর্ফম এবং ট্রেনগুলোতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলেও তিনি জানান।

ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের প্রকল্প কর্মকর্তা আতিকুর রহমান যুগান্তরকে বলেন, রেলপথমন্ত্রী এ বিষয়টি নিশ্চয় গুরুত্বসহকারে দেখবেন। বিশেষ বগিগুলো আনার আগে নিশ্চয় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের কথা ভেবেই ক্রয় করা হয়েছিল। কিন্তু ক্রয়ের পর কেন এমন উদাসীনতা।

প্রতিবন্ধী নারী জাতীয় পরিষদের সভাপতি নাছিমা আক্তার রেলপথমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, বিশেষ বগি আনা হলেও কেন তাদের যাতায়াতের জন্য উপযোগী করা হচ্ছে না। উপযোগী করা হলে প্রতিবন্ধী নারীসহ সব বয়সীরা ভ্রমণ করতে পারত।

মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সম্প্রতি চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন প্লাটর্ফমে ‘টেকটাইল’ চিহ্ন বসানো হয়েছে। ফলে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা প্লাটর্ফমে একাই চড়তে পারেন, কিন্তু নির্ধারিত স্থানে গোলচিহ্ন বিশিষ্ট ‘স্টপ’ চিহ্ন না থাকায় তারা একা ট্রেনে উঠতে পারছেন না।

পর্যাক্রমে গুরুত্বপূর্ণ স্টেশনগুলোসহ সবক’টি স্টেশন প্রতিবন্ধীবান্ধব করা হবে জানিয়ে রেলওয়ে মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেন যুগান্তরকে জানান, দু’ধরনের ট্রেন হওয়ায় প্লাটফর্ম থেকে উচুঁ-নিচু থাকে ট্রেনের বগিগুলো। তবে বিশেষ সিঁড়ি দেয়াসহ তাদের উপযোগী স্টেশন করতে রেলপথমন্ত্রীর বিশেষ নির্দেশনা রয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে এ সমস্যার সমাধান করা হবে। প্রতিবন্ধী যাত্রীদের সেবায় নতুন নতুন কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে বলেও তিনি জানান।

গত বছরের জুন মাসে অর্থমন্ত্রী রেলপথ মন্ত্রণালয়সহ পাঁচ মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছেন প্রতিবন্ধীদের চলাফেরা সহজ ও নিশ্চত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে। চিঠিতে তিনি লেখেন ‘রেলওয়ে, রাস্তা, নৌযান এগুলোতে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের ওঠার কোনো ব্যবস্থা নেই’।

সুত্র: যুগান্তর,২৯মে ২০১৭


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.