শিরোনাম

চট্টগ্রাম-চাঁদপুর ট্রেন সার্ভিস

চট্টগ্রাম-চাঁদপুর ট্রেন সার্ভিস

এম এ শাহেনশাহ

চট্টগ্রাম থেকে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যাতায়াত করা যায় দুভাবে। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা-মাওয়া অথবা ঢাকা পাটুরিয়া পথে, অপরটি চট্টগ্রাম থেকে চাঁদপুর হয়ে। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে যাতায়াতের দূরত্ব, সময় ও পরিবহন ব্যয় চাঁদপুর হয়ে যাতায়াতের দূরত্ব, সময় ও পরিবহন ব্যয়ের দ্বিগুণ। এ কারণে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যাত্রীদের চট্টগ্রাম থেকে চাঁদপুর হয়ে যাতায়াত অপরিহার্য। গত দুই দশকে দেশের সকল অঞ্চলে অবকাঠামো ও পর্যটনশিল্পের অভাবনীয় উন্নয়ন হয়েছে। দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত বন্দরনগরী চট্টগ্রাম, পর্যটননগরী কক্সবাজার, রাঙামাটি ও বান্দরবান। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে রয়েছে দুটি সামুদ্রিক বন্দর—মংলা ও পায়রা, সুন্দরবন, কুয়াকাটা পর্যটনসৈকত, টুঙ্গিপাড়ায় জাতির জনকের সমাধি। তাছাড়া চাকরি, ব্যবসা, শিক্ষা, আমদানি-রপ্তানির স্বার্থে বন্দরের ব্যবহার প্রভৃতি কাজে দেশের উভয় অঞ্চলে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করে। সাম্প্রতিক প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে গত শীত মৌসুমের তিন মাসে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মোট ১৫ লাখ পর্যটক কক্সবাজার সমুদ্রসৈকত ভ্রমণ করেন। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে আগত পর্যটক ২০% হলে এই সংখ্যা হবে ৩ লাখ। এত বিপুল সংখ্যক পর্যটককে ঢাকা ঘুরে কক্সবাজার যেতে দীর্ঘপথ পরিক্রমের দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এঁরা চাঁদপুর হয়ে যেতে পারলে অর্থ, সময় ও জ্বালানির অপচয় বহুলাংশে হ্রাস পেত।

গত চার দশকে দেশের বিভিন্ন লাইনে ট্রেনের সংখ্যা বেড়েছে—বিরতিহীন ও আন্তঃনগর ট্রেন চালু হয়েছে। কিন্তু গত ৪০ বছরে চট্টগ্রাম-চাঁদপুর লাইনে কোনো নতুন ট্রেন চালু হয়নি। ট্রেন সার্ভিসের উন্নয়ন হয়নি। সাগরিকা এক্সপ্রেস যা এক্সট্রিম লোকাল এবং আন্তঃনগর ট্রেন মেঘনা একপ্রেস। ট্রেন দুটি চালুর সময় চট্টগ্রাম নগরীর জনসংখ্যা ছিল ৪ লাখ, বর্তমানে ৬০ লাখ। ইদানীং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল ও চাঁদপুরের যাত্রী বেড়েছে বহুগুণ। দুটি ট্রেনের সময়সূচি, গতি, বিরতি কোনোটিই দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বিশাল জনগোষ্ঠীর চলাচলের অনুকূলে নয়। সাগরিকা এক্সপ্রেস চট্টগ্রাম থেকে ছাড়ে সকাল ৭টা ৩০-এ এবং চাঁদপুর পৌঁছে বেলা ১ টায়। ঢাকা থেকে আগত দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীবাহী লঞ্চগুলো বেলা ১১টা থেকে ১২টার মধ্যে চাঁদপুর ছেড়ে যায়। এ কারণে সাগরিকা এক্সপ্রেস ট্রেনে গিয়ে ২১ জেলার যাত্রীরা চাঁদপুরের প্রশস্ত, গভীর ও উত্তাল মেঘনা পারাপারের লঞ্চগুলো ধরতে পারে না। ট্রেনটি সব সময় ধারণক্ষমতার কমপক্ষে ৫গুণ যাত্রী বহন করে। ফলে সাগরিকা ট্রেনে চাঁদপুরের সরাসরি যাত্রীদের চলাচলের সুযোগ খুবই সীমিত। সাগরিকা এক্সপ্রেস কার্বন-ডাই-অক্সাইডের জেনারেটর হিসাবে খ্যাত। একজন যাত্রীর নিশ্বাস অপর যাত্রী শ্বাস হিসাবে গ্রহণ করে। মেঘনা এক্সপ্রেস বিকেল ৫টায় চট্টগ্রামে থেকে ছাড়ে এবং চাঁদপুর পৌঁছে রাত ১০টা-১১টায়। এ সময়সূচির কারণে বৃহত্তর ফরিদপুরের ৫ জেলা ও খুলনা বিভাগের ১০ জেলার একজন যাত্রীও মেঘনা এক্সপ্রেসে চলাচল করতে পারে না। মেঘনার পশ্চিমপাড়ে অবস্থিত চট্টগ্রাম-খুলনা মহাসড়কে রাতে কোনো যাত্রীবাহী বাস চলাচল করে না। এ সময়সূচি চাঁদপুর জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের যাত্রীদের গন্তব্যে পৌছার জন্যও ঝুঁকিপূর্ণ।

উল্লিখিত কারণে এ লাইনে ২টি নতুন ট্রেন চালু করা একান্ত প্রয়োজন। চট্টগ্রাম-চাঁদপুর রেলপথের দৈর্ঘ্য ১৮০ কিলোমিটার, সড়কপথের দৈর্ঘ্য ২৩০ কিলোমিটার। সড়কপথের দুটি স্থানে স্থায়ী যানজট লেগে থাকে। দিনের বেলা বাসযোগে চট্টগ্রাম থেকে চাঁদপুর যেতে ৭/৮ ঘণ্টা লেগে যায়। চট্টগ্রাম থেকে বাসযোগে চাঁদপুর গিয়ে কোনোক্রমেই ঢাকা থেকে আগত দক্ষিণাঞ্চলের লঞ্চগুলো ধরা যায় না। বাসভাড়া ট্রেন ভাড়ার ৫গুণ। অন্যদিকে বিরতিহীন বিশেষ ট্রেন চালু হলে চট্টগ্রাম থেকে ৩ ঘণ্টায় চাঁদপুর পৌঁছা যাবে।

সুত্র:ইত্তেফাক, ৩০ মার্চ, ২০১৯


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.