তোফাজ্জল হোসেন লুতু:
নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরে প্রায় দুই কিলোমিটার এলাকায় রেললাইনের উভয় পাশে শত শত অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এতে যেমন ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে ট্রেন, তেমনি বেড়েছে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও। যদিও বাংলাদেশ রেলওয়ের (বিআর) আইন অনুযায়ী, লাইনের উভয় পাশের ২০ ফুট এলাকা বিপজ্জনক ও সংরক্ষিত এলাকা।
নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের মাঝ দিয়ে চলে গেছে পার্বতীপুর-সৈয়দপুর-চিলাহাটি রেললাইন। সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশন সূত্র জানায়, সৈয়দপুর থেকে ঢাকা, খুলনা, রাজশাহী পর্যন্ত আন্ত নগর ও লোকাল মিলে সাতটি ট্রেন ১৪ বার চলাচল করে। সেই সঙ্গে দেশের বৃহত্তম সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানায় মেরামতের জন্য বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় প্রতিদিনই ওয়াগন ও বগি ওই রেললাইন দিয়েই আনা-নেওয়া হচ্ছে। আর সৈয়দপুর শহরের ১২৬ নম্বর রেলগেট থেকে ১২৫ নম্বর গেট হয়ে দক্ষিণের হাতিখানা বানিয়াপাড়া পর্যন্ত প্রায় দুই কিলোমিটার রেললাইন ঘেঁষে গড়ে উঠেছে অসংখ্য অবৈধ স্থাপনা। এসবের মধ্যে হোটেল-রেস্তোরাঁ, দোকান, ট্রাংক-বালতির কারখানা, কাগজের বাক্স তৈরির কারখানা, টেইলার্স, আসবাব তৈরির কারখানা রয়েছে। এসব ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও রেললাইন ঘেঁষে গড়ে উঠেছে অবৈধ পিকআপ স্ট্যান্ড ও ফলের পাইকারি আড়ত।
রেললাইনের দুই পাশের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে কেনাকাটার জন্য ক্রেতারা সাধারণত রেললাইন ব্যবহার করে থাকেন। আর এসব দোকানপাটের ময়লা-আবর্জনা প্রতিদিন লাইনের ওপর এনে ফেলছেন ব্যবসায়ীরা। এতে রেললাইনের ক্লিপ ও পাথর মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এ ছাড়া লাইনের ওপরে প্রতিদিন ভ্রাম্যমাণ ফেরিওয়ালারা বসেন। তাঁরা মূলত লাইনের ওপর বসে দৈনন্দিন বেচাবিক্রির কাজ করেন। ফলে রেললাইনের ওপর মানুষের সরব উপস্থিতি থাকছেই। এতে করে ট্রেন চলাচলে ঝুঁকি বাড়ছে।
গত ৩০ জুন বাংলাদেশ রেলওয়ের সৈয়দপুর বিভাগের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (পথ) সুলতার মৃধা এ বিষয়টি পাকশী ডিইএনকে লিখিতভাবে অবহিত করেন। কিন্তু প্রায় পাঁচ মাস অতিবাহিত হলেও এ ব্যাপারে আজ পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ রেলওয়ের সৈয়দপুরের ঊর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী (পথ) সুলতার মৃধা বলেন, ‘সুষ্ঠুভাবে ট্রেন চলাচলের লক্ষ্যে সৈয়দপুর-চিলাহাটি রেললাইনের দুই পাশের অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দীর্ঘদিন পেরিয়ে গেলেও এ ব্যাপারে কঠোর পদক্ষেপ নেয়নি তারা। তবে চলতি মাসে সৈয়দপুর শহরের ২ নম্বর রেলওয়ে গেট এলাকায় রেললাইনের আশপাশে বসা পুরনো কাপড়ের দোকানগুলো উচ্ছেদ করা হয়। কিন্তু উচ্ছেদের কয়েক ঘণ্টা পর আবারও দোকানপাট নিয়ে বসে পড়েন ব্যবসায়ীরা।’
বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির স্থানীয় শাখার নেতা কমরেড রুহুল আলম মাস্টার বলেন, ‘এলাকার ব্যবসায়ীরা রেললাইনের পাশে দোকান বসিয়ে দীর্ঘদিন ধরে তাঁদের ব্যবসা পরিচালনা করে আসছেন। বিশেষ করে পুরনো কাপড় ব্যবসায়ীরা। রেলওয়ের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে মাসোহারা দিয়ে তাঁরা নিশ্চিন্তে ব্যবসা করে যাচ্ছেন।’
সৈয়দপুর রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার শওকত আলী বলেন, ‘রেললাইনের দুই পাশে অবৈধ স্থাপনা গড়ে ওঠায় স্বাভাবিক ট্রেন চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। ওই সব স্থাপনার কারণে ট্রেনচালকরা সামনে ঠিকভাবে দেখতে পান না। এর ফলে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। তবে এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।’
সুত্র:কালের কন্ঠ, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৯