শিরোনাম

বাস্তবায়িত হয়নি ঈশ্বরদী স্টেশন রিমডেলিংয়ের প্রতিশ্রুতি

ঈশ্বরদী স্টেশন

উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার খ্যাত পাবনার ঈশ্বরদী জংশনটি আধুনিকায়নের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের কোনো উদ্যোগ নেই। গত আট বছরেও বাস্তবায়িত হয়নি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিশ্রুতি।

ব্রিটিশ শাসনামলে নির্মিত ১০০ বছরের পুরনো দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রেলওয়ে জংশন স্টেশন নবম ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার ছিল ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনটিকে আধুনিকায়ন করা হবে। কিন্তু ওই ঘোষণার কোনো বাস্তবায়ন নেই। জাতীয় সংসদে পাবনা ৪ আসনে পর পর চারবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য, ভূমিমন্ত্রী আলহাজ শামসুর রহমান শরিফ বিষয়টি নিয়ে জাতীয় সংসদের অধিবেশনে উপস্থাপনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনটিকে রিমডেলিংয়ের প্রতিশ্রুতি দেন কিন্তু এরপর তা বাস্তবায়নের কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঈশ্বরদী জংশন স্টেশনটি অনুপযোগী হয়ে পড়ছে যাত্রীদের কাছে।

জানা গেছে, ১৮৬২ সালে বাংলাদেশের এ অঞ্চলের রেল যোগাযোগ শুরু হয়। ওই সময় পাকশী পদ্মা নদী সাড়াঘাটে ছিল রেল স্টেশন। পরে কালের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে নতুন রেল স্টেশন স্থাপনের প্রয়োজন দেখা দেয়। ১৯১০ সালে পাকশীতে পদ্মা নদীর ওপর হার্ডিঞ্জ ব্রিজের নির্মাণকাজ শুরু হয়। ১৯১৫ সালে হার্ডিঞ্জ ব্রিজ নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ঈশ্বরদী রেলওয়ে জংশন স্থাপিত হয়।

ঈশ্বরদীর রেল স্টেশনে দুই কিলোমিটার দীর্ঘ ইয়ার্ড ও ১৭টি রেল লাইন রয়েছে। মূলত ব্রিটিশ আমল থেকে দেশের উত্তর-দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়। ‌ওই সময় ঈশ্বরদীর ওপর দিয়ে যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেন চলাচল করত। বর্তমানে এই স্টেশন দিয়ে ২৮টি যাত্রীবাহী ও ১২ মালবাহী ট্রেন চলাচল করে। স্টেশন ঘিরে রয়েছে বিশাল আয়তনের ইয়ার্ড।

ঈশ্বরদী স্টেশন বর্তমানে নানা সমস্যাই জর্জরিত এই স্টেশন ২৪ ঘণ্টায় তিন হাজার যাত্রী আসা যাওয়া করে। স্টেশনের সেই ১০০ বছর আগে তৈরি যাত্রীদের বিশ্রামাগার যার শৌচাগার নষ্ট, পানির সরবরাহ ঠিকমতো নেই। প্লাটফরমে ফ্যান ঝোলানো রয়েছে কিন্তু অধিকাংশ সময় সেগুলো ঘোরে না। আশপাশে দুর্গন্ধ। এখানে বিশ্রামাগার, শৌচাগার ও ফুটপাত দখল করে থাকে হকার, চোরাচালানি ও বখাটেরা। বিদ্যুৎ ও পানির সমস্যা সব সময় রয়েছে। আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতি ভালো না।

ঈশ্বরদী জংসন ইয়ার্ডে কোটি কোটি টাকার রেলওয়ে মালামাল অরক্ষিত থাকে। মাদক ও চোরাচালানির দখলে। স্লিপার, রেললাইন, মালামাল ভর্তি গাড়ি, তেলের ট্যাংকিসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র প্রায়ই চুরি হয়।

ঈশ্বরদী জংশনটিকে ঘিরে প্রায় ৯০০ রেলওয়ে বাসা রয়েছে। সম্প্রতি বাসাগুলোর বেশির ভাগ পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়েছে। কিন্তু একশ্রেণির অসৎ কর্মচারী গোপনে অনেক বাসা থেকে মাসিক ভাড়া আদায় করেন বলে ভাড়াটেদের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। বসবাসকারীদের অনেকে মাদক ব্যবসা ও চোরাচালানির সঙ্গে জড়িত।

স্টেশনে আসা-যাওয়ার জন্য যে ওভার ব্রিজটি রয়েছে তার অবস্থা ভালো না। সিমেন্টের তৈরি পাটাতনগুলোর কিছু ভেঙে গেছে, অনেকগুলোর রড বের হয়ে গেছে। ওঠানামা করতে অনেকের ভয় লাগে। অথচ সেই তুলনায় স্টেশনটি হয়ে পড়েছে সেকেলে। চলতি বছরের ২ জানুয়ারি বাংলাদেশ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ ও রেলওয়ে শ্রমিক লীগের মধ্যে অনুষ্ঠিত দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় ঈশ্বরদী স্টেশন রিমডেলিংকরণের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। কিন্তু সেটিও বাস্তবায়নের কোনো লক্ষণ নেই। ফলে যাত্রীরা হতাশ।

এই ব্যাপারে ঈশ্বরদী স্টেশন সুপারেন্টেন্ডেটেন আব্দুল করিম বলেন, “আমার কাজ ট্রেনের যাত্রীদের ট্রেন ভ্রমণে কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা ও ট্রেন সঠিক সময় চলছে কিনা- আর কোনো দায়িত্ব আমার নয়। ”

পাকশী বিভাগীয় প্রকৌশলী ২ আসাদুল হক বলেন, “রেলবান্ধব সরকারের পরিকল্পনা রয়েছে তবে এখনো নির্দেশনা পাইনি। ” পাকশী বিভাগীয় রেলওয়ে ম্যানেজার অসীম কুমার তালুকদার জানান, কিছু সংস্কার করা হয়েছে, তবে জংশন স্টেশন রিমডেলিংয়ের ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান।

সুত্র:কালের কন্ঠ,২৮ অক্টোবর, ২০১৭


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.