শিরোনাম

ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলরুট যেন মৃত্যুফাঁদ

ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলরুট যেন মৃত্যুফাঁদ

নিউজ ডেস্ক:

ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলরুটে ট্রেনযাত্রীরা চরম আতঙ্ক নিয়ে যাতায়াত করেন। ছিনতাই, ডাকাতি, সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে যাত্রীকে আহত করা বা চলন্ত ট্রেন থেকে ফেলে দেয়া, রেললাইনে কাটা মরদেহ, জানালায় ঢিল ছুড়ে মাথা ফাটানো— এমন ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। গত এক মাসেই এ রুটে তিনটি খুনের ঘটনা ঘটেছে। ছিনতাইয়ের ঘটনা রয়েছে কমপক্ষে পাঁচটি। বিভিন্ন সময় পুলিশ ছিনতাইকারীদের আটক করলেও খুনের বিষয়গুলো এখনো থানায় ‘অপমৃত্যু মামলা’ পর্যন্তই আটকে আছে।

ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলরুটে ময়মনসিংহ জিআরপি থানার অধীন প্রায় ৮০ কিলোমিটার রুটের নিরাপত্তার বিষয়টি একটি পুলিশ ফাঁড়ি ও থানার মাধ্যমে দেখভাল করা হয়। জিআরপি থানা, ময়মনসিংহ সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, গত বছর এ রুটে ময়মনসিংহ জিআরপি থানার অধীন ৩৯টি মৃত্যুর ঘটনায় মামলা হয়েছে। অধিকাংশই অপমৃত্যু মামলা। একটি অপমৃত্যু মামলা পরে হত্যা মামলা হিসেবে নেয়া হয়েছে এবং দুজন গ্রেফতারও আছে। বিভিন্ন সময় ছিনতাইকারীদের আটক করে আদালতে সোপর্দ করা হয়। কিন্তু তারা জামিনে বের হয়ে আগের অপরাধে ফিরে যায়।

ছিনতাইয়ের ঘটনাগুলোর ব্যাপারে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন দেখে বোঝা যায়, ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলরুটে সবচেয়ে বেশি ছিনতাই ও হত্যার ঘটনা ঘটে রাতে। আর ছিনতাইয়ের হটস্পট হচ্ছে গফরগাঁও, ত্রিশাল ও ময়মনসিংহ সীমানা। আর ট্রেন থেকে পড়ে সর্বশেষ মৃত্যুর ঘটনাটি ঘটে ২৩ এপ্রিল। রাত ৯টার দিকে ময়মনসিংহে ট্রেন থেকে পড়ে এক কিশোরের মৃত্যু হয়। রেল কর্তৃপক্ষ বলছে এটি দুর্ঘটনা। নিহতের পরিচয় এখনো মেলেনি। এর আগে ১ এপ্রিল তিস্তা এক্সপ্রেসে এক যাত্রীকে ট্রেন থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করে ছিনতাইকারীরা। ঘটনাটি ঘটে গফরগাঁও সীমান্ত এলাকায়। এ ঘটনায় গ্রেফতার আটজন ছিনতাই ও হত্যার কথা স্বীকার করেছে। গত ২৩ মার্চ একইভাবে ছিনতাই শেষে এক ব্যবসায়ীকে হত্যা করা হয়। তবে এ ঘটনায় মামলা হলেও কেউ গ্রেফতার হয়নি আজো। এছাড়া ৬ এপ্রিল গফরগাঁও এলাকায়, ২৭ মার্চ ত্রিশালের আউলিয়ানগর এলাকায় দুটি গণছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। দুটি ঘটনার কোনো কুলকিনারা হয়নি।

জামালপুর জেলার বকসীগঞ্জের যাত্রী ইব্রাহীম খলিল জানান, এ রুটের নিয়মিত যাত্রী তিনি। তার চোখের সামনেই একাধিক ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। গত ২৩ মার্চ থেকে ২৩ এপ্রিলের মধ্যে এ রকম পাঁচটি ঘটনার কথা তিনি জানেন।

এ ব্যাপারে রেলওয়ে জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মান্নান বলেন, গত বছর এই রুটে অন্তত ৩৯ জন নিহত হয়েছে। তাদের অধিকাংশই পরিচয়হীন। এর মধ্যে আজাদ নামে এক যুবককে ছিনতাইকারীরা ট্রেন থেকে ফেলে হত্যা করে। প্রথমে অপমৃত্যু মামলা হলেও পরে পরিচয় নিশ্চিত হলে হত্যা মামলা হয়। মামলায় শান্ত ও জাহিদ বাবু নামে দুজন গ্রেফতার আছে। মামলাটি বিচারাধীন।

তবে অধিকাংশ মৃত্যুর ব্যাপারেই নিশ্চিত কোনো তথ্য না থাকার কারণে অপমৃত্যু মামলা হয় বলে জানান ওসি। তাছাড়া রেলওয়ের আওতাধীন এলাকায় কারো যেকোনোভাবে মৃত্যু হলে সেটি অপমৃত্যু মামলা হিসেবেই রেকর্ড করা হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, সম্প্রতি রেলস্টেশনে  স্ট্রোক করলে রেল পুলিশ হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে দুজনেরই মৃত্যু হয়। ভিক্ষুক মারা গেলে, রেললাইনে আত্মহত্যা করলে বা মোবাইলে কথা বলতে বলতে ট্রেনের নিচে পড়ে মৃত্যু হলেও অপমৃত্যু হিসেবে নথিভুক্ত হয় বলে জানান তিনি।

ছিনতাইয়ের ঘটনার বিষয়ে ওসি আব্দুল মান্নান বলেন, ছিনতাইকারীদের গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়। তারা জামিনে বেরিয়েও আসে। মামলা নিষ্পত্তিতে সমস্যাগুলো তুলে ধরে তিনি বলেন, ছিনতাইয়ের ঘটনায় যাত্রীরা বাদী হয়ে মামলা করতে চান না ফলে সাক্ষী পাওয়া যায় না, পুলিশ অপমৃত্যু মামলা করলেও কেউ খোঁজ নেয় না, দীর্ঘদিন মৃত ব্যক্তির পোশাক সংরক্ষণ করা হয়, কিন্তু কেউ মরদেহ শনাক্ত করতে আসেন না। এসব কারণেই প্রায় সব মৃত্যুর ঘটনায় অপমৃত্যু মামলা হয়।

তবে যাত্রীদের অভিযোগ, ছিনতাইকারীরা সাধারণত দলবেঁধে ট্রেনের ছাদে ওঠে। সামান্য জিনিসের জন্যও তারা মানুষ হত্যা করে। কখনো ট্রেনের জানালা বন্ধ করে ছিনতাই করে। এরপর স্টেশনে ট্রেন থামলে নির্বিঘ্নে নেমে যায়। পুলিশ এদের চেনে, কিন্তু ব্যবস্থা নেয় না।

ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশনের সুপারিনটেনডেন্ট জহিরুল ইসলাম বলেন, হত্যা ও ছিনতাইয়ের ঘটনার বিষয়ে আমরা অভিযোগ পাই। কিন্তু এটি দেখার দায়িত্ব রেলওয়ে পুলিশের। তবে ময়মনসিংহ রেলওয়ে পুলিশের (প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা) প্রধান পরিদর্শক (সিআই) মো. ফিরোজ খাঁন বলেন, আমরা রেলওয়ের সম্পদের নিরাপত্তার বিষয়টি দেখি। ছিনতাই ও খুনের বিষয় দেখার দায়িত্ব জিআরপি পুলিশের।

সুত্র:বণিক বার্তা,  এপ্রিল ২৯, ২০১৮


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.