শিরোনাম

রেলপথ ঘিরে স্থাপনা তৎপর অপরাধীরা

রেলপথ ঘিরে স্থাপনা তৎপর অপরাধীরা

শিপন হাবীব :

রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে টঙ্গী রেলওয়ে স্টেশন এবং নারায়ণগঞ্জ রেল স্টেশন পর্যন্ত রেলপথ ঘিরে বস্তিসহ নানা অবৈধ স্থাপনা গড়ে উঠেছে।

এসব অবৈধ স্থাপনা বিশেষ করে বস্তি ও ঝুপড়ি ঘরে রাতদিন চলে মাদক বিক্রিসহ নানা ধরনের অসামাজিক কর্মকাণ্ড। এসব স্থানে ভবঘুরে থেকে শুরু করে ছিনতাইকারী, অজ্ঞান পার্টির সদস্য এবং ভাসমান যৌনকর্মীদের আনাগোনা থাকে সর্বদা।

তাদের শিকার হন ট্রেনযাত্রী থেকে শুরু করে পথচারীরা। কখনও ছিনতাই, কখনও যৌন হয়রানিসহ ধর্ষণের শিকারও হচ্ছেন যাত্রী-পথচারী। রোববার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী ঢাকা-বিমানবন্দর রেলপথের কুর্মিটোলা এলাকায় ধর্ষণের শিকার হন। এর মধ্যে ঢাকা থেকে টঙ্গী পর্যন্ত রেললাইনঘেঁষা ভাসমান মাদক ও ছিনতাইকারীদের আখড়া হিসেবে পরিচিত ঝুপড়ি ঘর উপড়ে ফেলার ঘোষণা দিয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) ও রেলওয়ে পুলিশ।

কমলাপুরসহ বিভিন্ন রেলস্টেশনে ট্রেনের পরিত্যক্ত কোচ-বগিতেও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড হচ্ছে। এখানে অপরাধীরা আখড়া বানিয়ে দিনরাত থাকছে। এসব স্থানে অনেক সময় রেলওয়ে পুলিশসহ বিভিন্ন আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা অভিযান চালায়। তবে অব্যাহত না থাকায় অভিযান শেষ হতে না হতেই অপরাধীরা আবার সেখানে আখড়া বানিয়ে বসে।

কমলাপুর, তেজগাঁও, বিমানবন্দর, টঙ্গীসহ ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথের রেলওয়ে স্টেশনগুলোয় অপরাধীরা ওতপেতে থাকে। সুযোগ পেলেই তারা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালায়। এতে সাধারণ ট্রেনযাত্রীসহ পথচারীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

রেলওয়ে পুলিশ জানায়, লোকবলের অভাবে স্টেশন ও রেললাইনের পাশের অবৈধ স্থাপনায় সব সময় নজর রাখা সম্ভব হয় না। রেলপথের আশপাশের অবৈধ স্থাপনা, বস্তি ও ঝুপড়ি ঘর বহুবার উচ্ছেদ করা হয়েছে। কিন্তু তাদের রোধ করা সম্ভব হয়নি। নাম প্রকাশে রেলপুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, রাজধানী ও বিভিন্ন শহর ঘিরে থাকা রেলপথে পর্র্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা জরুরি। স্টেশন এলাকায় থাকা ট্রেনের পরিত্যক্ত কোচ-বগি দ্রুত সময়ের মধ্যে সরানো না গেলে এমন অপরাধ ঘটতেই থাকবে। কারণ এসব কোচ-বগি ঘিরে ২৪ ঘণ্টা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চলে।

সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় বহু পরিত্যক্ত কোচ-বগিতে মানুষের অবস্থান স্পষ্ট চোখে পড়ে। একই অবস্থা লাইন ঘেঁষে গড়ে ওঠা ঝুপড়ি ঘরগুলোতেও।

২০১৯ সালের ১৯ আগস্ট কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় পরিত্যক্ত বগিতে তরুণী আসমাকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়। ১১ জুলাই কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ছেড়ে যাওয়া যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেনে টয়লেটে নিয়ে এক শিশুকে ধর্ষণ করা হয়।

তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশন থেকে বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত রেলপথের বিভিন্ন স্থানে (নিচু এলাকায়) ঝুপড়ি ঘর দেখা যায়। বিশেষ ছাউনি (কাপড়-ছালা) দিয়ে ছোট ছোট ঘর অস্থায়ীভাবে গড়ে তোলা হয়েছে।

রেলওয়ে ট্রাফিক বিভাগের এক কর্মকর্তা যুগান্তরকে জানান, লাইন ঘেঁষে গড়ে ওঠা বস্তি, ঝুপড়ি ঘরসহ অবৈধ স্থাপনা থেকে চলন্ত ট্রেনে ঢিলও ছোড়া হচ্ছে হরহামেশা। ঝুপড়ি ঘর ও ছাউনির মধ্যে ওতপেতে থাকে অপরাধীরা। আর পরিত্যক্ত বগির মধ্যে চলে অসামাজিক কর্মকাণ্ড। পরিত্যক্ত বগিগুলো রীতিমতো ক্রাইম বক্সে পরিণত হয়েছে।

বুধবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম জানান, রাজধানীর সড়ক ও রেলপথ ঘিরে গড়ে ওঠা এমন স্থাপনা গুঁড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। রেল স্টেশনের আশপাশের এলাকাগুলোয় উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়েছে। রেললাইন সংলগ্ন অপরাধের আখড়াগুলো উচ্ছেদ করা হবে।

এ বিষয়ে বুধবার সন্ধ্যায় ঢাকা রেলওয়ে থানার ওসি রকিব-উল-হোসেন যুগান্তরকে জানান, রেলওয়ে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা কঠোর অভিযানে নামবেন। এরই মধ্যে তারা নির্দেশনাও পেয়েছেন। দ্রুত সময়ের মধ্যে তারা স্টেশন ও লাইন ঘেঁষে গড়ে ওঠা ঝুপড়ি ঘরসহ অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে নামবেন।

তিনি বলেন, অপরাধীরা ট্রেনের যাত্রী সেজে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালায়। একই সঙ্গে অন্ধকারাচ্ছন্ন রেললাইন ঘেঁষে ঝুপড়ি ঘর তৈরি করে অপরাধীরা অসামাজিক কর্মকাণ্ড ও অপরাধ করছে। রেল পুলিশ এসব স্থাপনা উচ্ছেদ করলেও পর্যাপ্ত পুলিশ সদস্য না থাকায় এগুলো ফলোআপ করা হয় না।

রেলওয়ে পুলিশের ডেপুটি চিফ মোর্শেদ আলম যুগান্তরকে জানান, রেলওয়ে স্টেশন ও লাইন ঘেঁষে গড়ে ওঠা বিভিন্ন অবৈধ স্থাপনা থেকে প্রায় সময় মাদকাসক্ত, ভবঘুরেদের আটক করা হয়। তাদের শাস্তিও হয়। আমরা সর্বদা তৎপর থাকি; কিন্তু লোকবলের অভাবে সব খানে নজর রাখা সম্ভব হয় না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী ধর্ষণের পর আমরা আরও সতর্কাবস্থায় কাজ করছি। স্টেশন ও লাইন ঘেঁষে থাকা অবৈধ স্থাপনা গুঁড়িয়ে দিতে এরই মধ্যে মাঠে নেমেছে পুলিশ।

রেলওয়ের মহাপরিচালক শামছুজ্জামান জানান, রেলওয়ে স্টেশন এবং রেললাইনের ২০ গজের মধ্যে কোনো অবৈধ স্থাপনা থাকবে না। ঝুপড়ি ঘর ও বস্তি উচ্ছেদ অভিযান চলছে। কঠোর উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। স্টেশন ছাড়াও বিশেষ বিশেষ স্থানে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

পাঁচ বছরে ১৯ জন খুন : নারায়ণগঞ্জ থেকে বঙ্গবন্ধু সেতু পর্যন্ত সীমানা নিয়ে গঠিত ঢাকা রেলওয়ে থানা এলাকায় পাঁচ বছরে ১৯ জন খুন হয়েছেন। ২০১৯ সালে পাঁচজন, ২০১৮ সালে পাঁচজন, ২০১৭ সালে চারজন, ২০১৬ সালে তিনজন এবং ২০১৫ সালে দুজন খুন হন। এর মধ্যে বিমানবন্দর রেলস্টেশন এলাকায় দুজন খুন হন।

আবার অনেক সময় খুনের ঘটনাকেও রেল দুর্ঘটনা হিসেবে চালিয়ে দেয়ার জন্য লাশ রেললাইনে ফেলে রাখে সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্র। সংঘবদ্ধ মাদক ব্যবসায়ী চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে ট্রেনে করে ইয়াবা, গাঁজা, ফেনসিডিলসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য বহনের অভিযোগে মামলা করছে পুলিশ।

সুত্র:যুগান্তর, ১১ জানুয়ারি ২০২০


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.