শিরোনাম

‘ফিরিয়ে দাও আমার রেলপথ’

‘ফিরিয়ে দাও আমার রেলপথ’

নিউজ ডেস্ক:

‘ফিরিয়ে দাও আমার রেল পথ’ এমন দাবী জয়মনির হাটের ৮৫ বছরের বৃদ্ধ কৃষক হযরত আলীর। তিনি বলেন, ভূরুঙ্গামারী রেল স্টেশনের পাশেই জয়মনিরহাটে তার বেড়ে ওঠা। ঐসময় স্টেশন এলাকা ছিলো জাঁকজমক ও কোলাহলপূর্ণ। কত মানুষ আসতো যেত। আমাদের ইচ্ছে হলেই ট্রেনে চড়ে লালমনিরহাট চলে যেতাম। আবার কখনো আসামের গোলকগঞ্জ দিয়ে ধুবড়ি জেলায় আত্মীয়ের বাড়িতে বেড়াতে যেতাম। ঐ সময় এতো বাস, গাড়ি-ঘোড়া ছিলোনা। তারপরও যাতায়াতের কত সুবিধা ছিলো। আবার যদি ফিরে পাওয়া যেত সেই সুবিধা, সেই রেল পথ। তিনি প্রশ্ন রাখেন, সেই সুবিধা আর কি আসবে?

 জানা যায়, ১৮৮৭ সালে তৎকালীন নর্দান বেঙ্গল রেলওয়ে-বেঙ্গল ও আসামের সাথে যোগাযোগ সুবিধা সম্প্রসারনের লক্ষ্যে এই রেলপথ চালু করেন। আসামের ধুবড়ি জেলার গোলকগঞ্জ দিয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অবস্থিত সোনাহাট রেল স্টেশন, পাটেশ্বরী রেল স্টেশন, ভূরুঙ্গামারী রেল স্টেশন অতিক্রম করে ভারতের বামনহাট, নিউগীদালদহ ও গীদালদহ রেল স্টেশন হয়ে একটি পথ ভারতের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। অন্য পথটি বাংলাদেশের মোগলহাট দিয়ে লালমনিরহাটসহ দেশের অভ্যন্তরে চলে যায়।

১৯৪৭ সালে ভারত পাকিস্থান বিভক্তির পরও কিছুদিন ট্রানজিটের মাধ্যমে এই রেল পথ চালু ছিলো। কিন্তু ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধের পর মোগলহাট ও ভূরুঙ্গামারী রেল স্টেশনের মাঝে বামনহাট, নিউ গীদালদহ ও গীদালদহ রেল স্টেশন ভারতের অংশে পড়ায় রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়ে। তখন থেকেই ভূরুঙ্গামারী, পাটেশ্বরী ও সোনাহাট রেল স্টেশনটি কার্যত দেশের অন্যান্য অঞ্চলের সাথে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। আর তখন থেকেই জেলার নাগেশ্বরী, ভূরুঙ্গামারী ও ফুলবাড়ি উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ রেল সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়ে। 


অনুসন্ধানে জানা গেছে, ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত ভূরুঙ্গামারী উপজেলার মধ্যে ভূরুঙ্গামারী, পাটেশ্বরী ও সোনাহাট রেল স্টেশনে রেলের লাইন, বগি ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ পড়ে ছিলো। জিয়াউর রহমানের শাসনামলে উলিপুরের মাঈদুল ইসলাম যখন যোগাযোগ মন্ত্রী ছিলেন ঐসময় রেল লাইন গুলো সরিয়ে নিয়ে উলিপুরের সাথে রেল সংযোগ করা হয়। আর রেলের বগিসহ অন্যান্য যন্ত্রাংশও ঐসময় হাওয়া হয়ে যায়। সর্বশেষ প্রায় ১৫ কিলোমিটার রেলপথের পাথর গুলো খালেদা জিয়ার শাসনামলে নাম মাত্র মূল্যে ক্রয় করে প্রভাবশালী নেতারা তা মাটি খুড়ে তুলে নেয়। এসময় সোনাহাট রেলওয়ে সেতু রক্ষা বাঁধের পাথর গুলোও অপসারণ করা হয়। এর ফলে এখন পর্যন্ত সেতুটি হুমকির মুখে রয়েছে। 


ভূমি অফিসের তথ্যমতে, সোনাহাটের বানুর কুটি মৌজায় ২৯.৮৪ একর, গণাইরকুটি মৌজায় ৪৪.৬৯ একর, ভরতের ছড়া মৌজায় ৫০.৬৩ একর, পাইকেরছড়া ইউনিয়নের ছিটপাইকেরছড়া মৌজায় ৬২.৩৪ একর, পাইকেরছড়া মৌজায় ৫৯.৩৪ একর বেলদহ মৌজায় ৩৪.০৩ একর এবং জয়মনিরহাট ইউনিয়নের শিংঝাড় মৌজায় ১৯.৫৩ একর, বড়খাটামারী মৌজায় ১৬.২০ একর ও ছোটখাটামারী মৌজায় ৩১.৮৫ একর সর্বমোট ৩৪৮.৫৫ একর রেলের সম্পতি রয়েছে। এর মধ্যে কিছু জমিতে ভাসমান ভূমিহীন মানুষ এবং অনেক অংশে প্রভাবশালীরা দখল করে পাকা ঘরবাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও মাটি বিক্রি করে পুকুর তৈরী করে রেখেছে। অবশ্য তাদের দাবী তারা রেল বিভাগ থেকে লিজ নিয়ে এসকল নির্মাণ কাজ করেছে।


ধরলা নদী দারা বিচ্ছিন্ন নাগেশ্বরী, ভূরুঙ্গামারী ও ফুলবাড়ি উপজেলার মানুষের দীর্ঘদিনের দাবী এ এলাকায় পুনরায় রেল পথ চালু করা হোক। এ ব্যাপারে রেল ও নৌপথ বাস্তবায়ন কমিটিও দাবীর স্বপক্ষে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসুচি পালন করে আসছে। গত ১৬ অক্টোবর কুড়িগ্রাম থেকে ঢাকা সরাসরি ট্রেন সার্ভিস চালু হওয়ায় উত্তর ধরলাবাসীর এ দাবী ক্রমশ আরো জোড়ালো হচ্ছে। 


এলাকাবাসীর দাবী সোনাহাট স্থলবন্দর থেকে কুড়িগ্রাম পুরাতন রেল স্টেশন পর্যন্ত মাত্র ৩৮ কিলোমিটার রেল পথ স্থাপিত হলেই তিন উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ রেল সুবিধা পাবে। 
উল্লেখ্য, সোনাহাট রেল স্টেশন থেকে জয়মনির হাট (ভূরুঙ্গামারী স্টেশন) পর্যন্ত রেল পথ রয়েছে। এখান থেকে ৩৮ কিলোর মিটার রেলপথ তৈরীর মাধ্যমে রেল চালু করা সম্ভব। অন্যদিকে ভূরুঙ্গামারীর শিংঝাড় থেকে ফুলবাড়ির হয়ে শেখ হাসিনা ২য় ধরলা সেতুর উপর দিয়ে লালমনিরহাট পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার সংযোগ করলে সোনাহাট স্থলবন্দর থেকে পুরাতন রেল পথটি চালু করা সম্ভব। এছাড়া ভারতের সাথে ট্রানজিটের মাধ্যমে পুরাতন রেল পথটি চালু করা সম্ভব। এ ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী মহোদয়ের ঘোষণা রয়েছে। কারন সম্প্রতি তিনি বন্ধ রেলপথ গুলো পুনরায় চালু করার ঘোষণা দিয়েছেন।

এব্যাপারে কুড়িগ্রাম-১ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য আছলাম হোসেন সওদাগর জানান, ভূরুঙ্গামারীর সোনাহাট স্থলবন্দর থেকে কুড়িগ্রাম পর্যন্ত রেল সংযোগ অথবা ট্রানজিটের মাধ্যমে বন্ধ হওয়া রেল পথটি চালু করার জন্য জাতীয় সংসদে প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এদাবী আমার নির্বাচনী এলাকার সব মানুষের প্রাণের দাবী। এটি বাস্তবায়নের জন্য আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাবো। উপজেলা চেয়ারম্যান নুরুন্নবী চৌধুরী জানান, ভূরুঙ্গামারী উপজেলা থেকে প্রতিদিন প্রায় ৫০/৬০ টি নাইট ও ডে-কোচ দেশের বিভিন্ন জেলায় যায়। এছাড়াও এ উপজেলায় রয়েছে একটি স্থলবন্দর। একটি বর্ডার হাট চালুর প্রক্রিয়া চলমান। সবদিক বিবেচনায় স্থলবন্দর থেকে ট্রেন লাইনটি চালু হলে যাতায়াত এবং ব্যবসায়ীদের পণ্য পরিবহনে সুবিধা হতো। 


রেল-নৌ, যোগাযোগ ও পরিবেশ গণ উন্নয়ন কমিটি কুড়িগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ কুমার রায় জানান, ২০১৩ সাল থেকে আমরা কুড়িগ্রাম থেকে আন্তঃনগর ট্রেন চালু এবং এ রেলপথটি সোনাহাট স্থলবন্দর পর্যন্ত সম্প্রসারনের দাবী করে আসছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আন্তুঃনগর ট্রেন চালু করলেও সোনাহাট স্থলবন্দর পর্যন্ত রেল পথের ব্যাপারে কোন সিন্ধান্ত না নেওয়ায় আমরা দ্রুত তা বাস্তবায়নের দাবী জানাচ্ছি।

সুত্র:ডেইলিঅবজারভার,  ২৭ অক্টোবর, ২০১৯


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

Comments are closed.