শিরোনাম

ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ :সতর্কতার বিকল্প নাই

ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ :সতর্কতার বিকল্প নাই

আমাদের দেশে ঈদ বা বিশেষ দিবস উপলক্ষে ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ একটি সাধারণ দৃশ্য। এইসময় যাত্রীর চাপ অত্যধিক থাকায় তাহা অনেকেই মানিয়া নেন। যদিও নিরাপত্তার খাতিরে তাহাও মানা উচিত নহে। কিন্তু সারাবত্সরই যদি ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ চলিতে থাকে এবং এইজন্য অপ্রত্যাশিত মৃত্যুর ঘটনা ঘটিতে থাকে, তাহা হইলে তাহা মানিয়া নেওয়া সত্যিই কঠিন। গত শনিবার রাত্রে নারায়ণগঞ্জ-ঢাকা রেলপথে ট্রেনের ইঞ্জিনে চড়িয়া যাইবার সময় ইঞ্জিনের পাখায় কাটা পড়িয়া এক ব্যক্তি মারা যান। এই পথে প্রতিদিনই ট্রেনের ছাদ ও ইঞ্জিনে শত শত যাত্রীর যাতায়াত অব্যাহত আছে। এই ঝুঁকিপূর্ণ যাতায়াত বন্ধ না করিয়া উপরন্তু মানুষকে কম টাকার বিনিময়ে যাতায়াতের সুযোগ করিয়া দেওয়া হইতেছে বলিয়াও অভিযোগ পাওয়া যাইতেছে।

ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রেলপথে প্রতিদিন ১৬ জোড়া ট্রেন চলাচল করে। ইহার মধ্যে নারায়ণগঞ্জ রেলস্টেশন, চাষাঢ়া, ফতুল্লা ও পাগলা স্টেশন হইতে যাত্রীরা অবাধে ট্রেনের ছাদে ও  ইঞ্জিনে উঠিলেও তাহাদের বাধা দেওয়া হয় না। এই পথে সাধারণ ট্রেনের ভাড়া ১৫ এবং ডেমু ট্রেনের ভাড়া ২০ টাকা। কিন্তু এক শ্রেণির ট্রেনের চালক ও কর্মচারী মাথাপিছু দুই হইতে ১০ টাকা লইয়া গরিব মানুষদের ট্রেনের ছাদে ও ইঞ্জিনে যাতায়াত করিবার সুযোগ করিয়া দিতেছেন, যাহা বিপজ্জনক। গত ২১ ফেব্রুয়ারি ট্রেনের ছাদে চড়িয়া ভ্রমণের সময় নওগাঁর রাণীনগর রেলস্টেশনের নিচু ওভারব্রিজের সঙ্গে ধাক্কা লাগিয়া পড়িয়া গিয়া নিহত হন চারজন। এখানকার ওভারব্রিজের উচ্চতা রেললাইন হইতে ১৫ ফুট ৩ ইঞ্চি, আর ঐ লাইনে যাতায়াতকারী ট্রেনের উচ্চতা রেললাইন হইতে ১৩ ফুট ৬ ইঞ্চি। ফলে গত দুই বত্সরে এখানে ওভারব্রিজের সঙ্গে ধাক্কা লাগিয়া মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হইয়া কমপক্ষে ২০ জন নিহত হইয়াছে। আহত হইয়াছে অর্ধশতাধিক। অনেক সময় রেললাইন উঁচুকরণের কাজ করা হইলেও  রেল ওভারব্রিজগুলি সেই অনুযায়ী উঁচু করা হয় না। ফলে দিন দিন এমন দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পাইতেছে।

বিস্ময়কর ব্যাপার হইল, ট্রেনের ছাদ হইতে যাহারা পড়িয়া গিয়া মারা যান, সেই মৃত্যুগুলি ট্রেন দুর্ঘটনার তালিকায় থাকে না। এইসব ঘটনা অপমৃত্যু হিসাবে রেকর্ড করা হয়। ফলে সারাদেশে ট্রেনের ছাদে ভ্রমণের সময় প্রতি বত্সর কত সংখ্যক যাত্রী প্রাণ হারান, তাহার সঠিক তথ্য জানা কঠিন। শুধু ভ্রমণ নহে, ট্রেনের ছাদে চড়িয়া অনেকে দৌড়াদৌড়ির কসরত করে। এই মৃত্যুখেলাও অনেক সময় দুর্ঘটনার কারণ ঘটায়। রেলওয়ে আইনের ১১৩ ধারা অনুযায়ী ট্রেনের ইঞ্জিন ও ছাদে ভ্রমণ দণ্ডনীয় অপরাধ। প্রকৃতপক্ষে এই ব্যাপারে আমাদের সকলেরই সচেতন হওয়া প্রয়োজন। এইক্ষেত্রে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী ও পুলিশের নজরদারি আরো কঠোর করিতে হইবে। গ্রহণ করিতে হইবে স্টেশনে স্টেশনে জনসচেতনতামূলক কর্মসূচি।

সুত্র:ইত্তেফাক, ২৯ জুন, ২০১৮


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

1 Trackbacks & Pingbacks

  1. url

Comments are closed.