যাত্রী পরিবহন ছাড়াও পণ্য আনা-নেওয়া সহজ হওয়ায় বিশ্বজুড়ে রেলপথের জনপ্রিয়তা বাড়ছে। এদিকে লক্ষ রেখে আমাদের দেশেও রেলওয়ে নেটওয়ার্ক বিস্তৃত হয়েছে। তবে নানা সীমাবদ্ধতায় এ ব্যবস্থা থেকে কাক্সিক্ষত মানের সেবা মিলছে না। জনবল সংকট, অনিয়ম-দুর্নীতিসহ বিবিধ সমস্যায় জর্জরিত হওয়ায় ধুঁকছে রেলওয়ের সেবা। আঞ্চলিক রেলওয়ে সেবাও নানাভাবে বিঘিœত হচ্ছে অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে। অথচ গত কয়েক বছরে এ খাতে হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হয়েছে। সেবার মান বৃদ্ধি ও রেলকে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে বিদ্যমান সমস্যার আশু সমাধানের বিকল্প নেই বলে আমরা মনে করি।
গতকালের দৈনিক শেয়ার বিজে ‘রেলের আয় বাড়াতে বাধা যান্ত্রিক বিভাগ’ শিরোনামে একটি বিশেষ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে প্রথম শ্রেণির আন্তঃনগর ট্রেনে সর্বোচ্চ ২২টি কোচ সংযোজনের সুযোগ থাকলেও যান্ত্রিক বিভাগের অনীহার কারণে স্ট্যান্ডার্ড কম্পোজিশন অনুযায়ী ট্রেন চলছে না। ফলে যাত্রীচাহিদা থাকলেও ১৬ থেকে ১৮ কোচ দিয়ে চলছে আন্তঃনগর ট্রেন। যাত্রী কম হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই রেলের আয়ও কমছে, যা অপ্রত্যাশিত। ঢাকা-চট্টগ্রাম রুট যেকোনো ধরনের পরিবহন ব্যবস্থার জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। সেক্ষেত্রে এভাবে দায়িত্বজ্ঞানহীনতার কারণে যাত্রীসেবার মান ও আয় কমে যাওয়া গ্রহণযোগ্য নয়।
সড়ক দুর্ঘটনা বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং যানজটের কারণে নিরাপদ বাহন হিসেবে দেশে ট্রেনের ব্যবহার ক্রমেই বাড়ছে। সে আলোকে এখন রেলসেবা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খবরেই উল্লেখ করা হয়েছে, একটি ট্রেনের চট্টগ্রাম থেকে ১৪টি কোচ নিয়ে ঢাকা গেলে যে খরচ হয়, ২২ কোচ নিলেও একই খরচ। এক্ষেত্রে বেশি কোচ নিলে যাত্রী বেশি হওয়ায় আয়ও বাড়বে। এক্ষেত্রে যান্ত্রিক বিভাগের অনীহা দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা, যা কাম্য নয়। অথচ একটি রেলে অতিরিক্ত ছয় বগি সংযোজন করায় রেলের এক দিনে প্রায় তিন লাখ টাকা বেশি আয় হয়েছে। এক্ষেত্রে অবশ্য বেশি কোচ যোগ করা হলে যান্ত্রিক গোলযোগসহ বিভিন্ন কারণ সামনে নিয়ে আসছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে তা গ্রহণযোগ্য নয় বলে অভিমত অনেকের।
ইঞ্জিন, কোচ ও জনবল সংকটের মতো সমস্যাগুলো দীর্ঘদিন ধরেই চলছে রেলওয়েতে। পাশাপাশি এর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার নজিরও রয়েছে। সব মিলিয়ে রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় হলেও কাক্সিক্ষত সেবা মিলছে না, লোকসান থেকেও বেরিয়ে আসতে পারছে না রেলওয়ে। এ অবস্থা নিরসনে বিদ্যমান সমস্যাগুলো সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলে আমরা মনে করি। এছাড়া রেলওয়ের সঙ্গে জড়িত কেউ অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়ালে তাদের বিরুদ্ধেও কঠোর শাস্তিমূলক
ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
সুত্র:শেয়ার বিজ,এপ্রিল ১৮, ২০১৯