শিরোনাম

সাড়ে পাঁচগুণ ব্যয়ে কাজ পাচ্ছে চায়না রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন

আখাউড়া-সিলেট রেলপথ ডুয়েলগেজে রূপান্তর

ইসমাইল আলী: সিলেটের মৌলভীবাজারের অধীন কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথটি পরিত্যক্ত হয় ২০০২ সালে। এটিকে ডুয়েলগেজে রূপান্তরের মাধ্যমে পুনরায় চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় হচ্ছে ১০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। একই ধরনের প্রকল্প নেওয়া হয়েছে আখাউড়া-সিলেট বিদ্যমান রেলপথ ডুয়েলগেজে রূপান্তরে। অথচ এ প্রকল্পে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় ধরা হয়েছে ৫৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকা। অর্থাৎ সাড়ে পাঁচগুণের বেশি ব্যয় হচ্ছে আখাউড়া-সিলেট রেলপথ ডুয়েলগেজে রূপান্তর প্রকল্পে।

যদিও আখাউড়া-লাকসাম ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন নির্মাণে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় হচ্ছে ১৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে অর্ধেক নতুন রেলপথ নির্মাণ করা হবে। বাকি অর্ধেক মিটারগেজ থেকে ডুয়েলগেজে রূপান্তর করা হবে। আবার পার্বতীপুর-কাউনিয়া নতুন ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে কিলোমিটারপ্রতি ১৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা।

রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, সাড়ে পাঁচগুণের বেশি ব্যয় ধরা হলেও আখাউড়া-সিলেট ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটিতে দরপত্র আহ্বান করা হয়নি। দর কষাকষির মাধ্যমে চায়না রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন কোম্পানিকে কাজটি দেওয়ার জন্য এরই মধ্যে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে রেলওয়ে। আর জিটুজি ভিত্তিতে এ প্রকল্পে ঋণ দিতে আগ্রহী চীন।

চায়না রেলওয়ে কনস্ট্রাকশন কোম্পানির সঙ্গে দর কষাকষির ভিত্তিতে প্রকল্পটির উন্নয়ন প্রস্তাব (ডিপিপি) চূড়ান্ত করেছে রেলওয়ে। অনুমোদনের জন্য শিগগিরই তা রেলপথ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এরপর প্রকল্প প্রস্তাবটি যাবে পরিকল্পনা কমিশনে।

ডিপিপির তথ্যমতে, সারা দেশের সব রেলপথ পর্যায়ক্রমে মিটারগেজ থেকে ডুয়েলগেজে রূপান্তরের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এরই অংশ হিসেবে সিলেটের সঙ্গে ঢাকা ও চট্টগ্রাম সংযোগ রেলপথ ডুয়েলগেজ করা হবে। এরই মধ্যে কুলাউড়া-শাহবাজপুর রেলপথ ডুয়েলগেজে রূপান্তরে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। এ অংশটি ট্রান্স-এশিয়ান রেল রুটের অন্তর্ভুক্ত। এতে আগামীতে আখাউড়া-সিলেট রেলপথের গুরুত্ব বাড়বে। এজন্য নতুন প্রকল্প গ্রহণ করা জরুরি।

প্রকল্পটির আওতায় ২৩৯ দশমিক ১৪ কিলোমিটার মিটারগেজ রেলপথ ডুয়েলগেজে রূপান্তর করতে হবে। এর মধ্যে ১৭৬ দশমিক ২৪ কিলোমিটার মূল রেলপথ ও ৬২ দশমিক ৯০ কিলোমিটার লুপ লাইন রয়েছে। এজন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১৫ হাজার ৭৭১ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে চীন ঋণ দিতে আগ্রহী ১০ হাজার ২৬৭ কোটি ৩৯ লাখ টাকা বা ১৭৫ কোটি ৬১ কোটি ডলার। বাকি অর্থ সরকারি তহবিল থেকে সরবরাহ করতে হবে।

প্রকল্পটির ব্যয় বিশ্লেষণে দেখা যায়, রেলপথ নির্মাণে মূল ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ হাজার ২৮৯ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এর সঙ্গে দর সমন্বয় যুক্ত হবে ২৭ শতাংশ। আর অনিশ্চিত ব্যয় রয়েছে আরও দুই শতাংশ। রয়েছে অন্যান্য খাতের ব্যয়ও। সব মিলিয়ে নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১৩ হাজার ৯৬৪ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। অর্থাৎ কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় পড়বে ৫৮ কোটি ৩৯ লাখ টাকা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণত যে কোনো প্রকল্পের ডিপিপিতে সমমানের বা একই ধরনের চলমান প্রকল্পের ব্যয়ের তুলনামূলক তথ্য তুলে ধরা হয়। তবে আখাউড়া-সিলেট ডুয়েলগেজ প্রকল্পের ডিপিপিতে এ ধরনের তথ্য উল্লেখ করা হয়নি। এ জন্য প্রকল্পটির মূল্যায়ন কমিটিতে আপত্তি ওঠে। পরে সমমানের প্রকল্পগুলোর ব্যয় নিয়ে অনুসন্ধান করে শেয়ার বিজ।

এতে দেখা যায়, ভারতের ঋণে কুলাউড়া থেকে শাহবাজপুর পর্যন্ত ৫২ দশমিক ৫৪ কিলোমিটার রেলপথ ডুয়েলগেজে রূপান্তর করা হচ্ছে। এ জন্য ব্যয়ে হবে ৫৪৪ কোটি ৮৬ লাখ ৭৭ হাজার ৬৪০ টাকা। গত ১৫ নভেম্বর এ-সংক্রান্ত চুক্তি সই হয়। এতে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় পড়ছে ১০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।

এদিকে পার্বতীপুর থেকে কাউনিয়া পর্যন্ত ৬৬ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার নতুন ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে ব্যয় হচ্ছে এক হাজার ১২ কোটি ৬২ লাখ টাকা। ফলে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় পড়ছে ১৫ কোটি ১৪ লাখ টাকা। আবার আখাউড়া থেকে লাকসাম পর্যন্ত বিদ্যমান ৯২ কিলোমিটার রেলপথ ডুয়েলগেজে রূপান্তর করা হচ্ছে। পাশাপাশি নতুন আরও ৯২ কিলোমিটার ডুয়েলগেজ রেলপথ নির্মাণ করা হবে। এ কাজের চুক্তিমূল্য তিন হাজার ৪৯৭ কোটি ৩১ লাখ টাকা। এতে নতুন রেলপথ নির্মাণসহ কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় পড়ছে ১৯ কোটি টাকা।

নতুন রেলপথের চেয়ে প্রস্তাবিত প্রকল্পটিতে ব্যয় বেশি হওয়ার কারণ জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেন শেয়ার বিজকে বলেন, আখাউড়া-সিলেট রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পটি এখনী চূড়ান্তই হয়নি। এছাড়া বিদ্যমান রেলপথটি পাহাড়ি ও ঢালু। এতে মাটির কাজও বেশ জটিল। আবার বিদ্যমান রেলপথের পাশে অস্থায়ী লাইন করে ট্রেন চলাচল চালু রাখতে হবে। পরে নতুন রেলপথ নির্মাণ করতে হবে। এরপর পুরোনোটা ভেঙে ফেলতে হবে। এসব কারণে ব্যয় অনেক বেশি হবে। এছাড়া দরকষাকষির দায়িত্বে ছিল মন্ত্রণালয়। এখানে রেলওয়ের কিছুই করার নেই।

যদিও রেলওয়ের মহাপরিচালকের এ বক্তব্য গ্রহণযোগ্য নয় বলে মনে করেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, আখাউড়া-সিলেট রেলপথ নির্মাণে মাটির বেজমেন্ট করা আছে। ডুয়েলগেজ নির্মাণে সেটা শুধু প্রশস্ত করতে হবে। আবার সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ হওয়ায় জমিও অনেক কম লাগবে। ফলে এ প্রকল্পের ব্যয় কোনোভাবেই নতুন রেলপথ নির্মাণের চেয়ে বেশি হওয়ার নয়।

তারা আরও বলছেন, অস্থায়ী ভিত্তিতে আরেকটি লাইন নির্মাণ না করে প্রকল্পটির আওতায় সরাসরি ডুয়েলগেজ ডাবল লাইন করা যেত। এক্ষেত্রেও ব্যয় প্রায় একই পড়ত। এছাড়া দোহাজারী-কক্সবাজার-গুনধুম রেলপথও পাহাড়ি এলাকায় নির্মাণ করতে হবে। এছাড়া ওই প্রকল্প এলাকাটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল। তবে উš§ুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ করায় সেক্ষেত্রেও ব্যয় আখাউড়া-সিলেটের চেয়ে কম হচ্ছে। তাই বিনা দরপত্রে দরকষাকষির মাধ্যমে চীনের ঠিকাদার নিয়োগের বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত।

উল্লেখ্য, খোঁজ নিয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের তথ্যের সত্যতা পেয়েছে শেয়ার বিজ। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে উম্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে দোহাজারী-কক্সবাজার-গুনধুম রেলপথ প্রকল্পের ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এতে ১৪০ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ছয় হাজার ২০০ কোটি টাকা। এতে কিলোমিটারপ্রতি ব্যয় পড়ছে ৪৪ কোটি ২৯ লাখ টাকা। আখাউড়া-সিলেট প্রকল্পের চেয়ে গড়ে এ ব্যয় প্রায় ১৪ কোটি টাকা কম।


About the Author

RailNewsBD
রেল নিউজ বিডি (Rail News BD) বাংলাদেশের রেলের উপর একটি তথ্য ও সংবাদ ভিত্তিক ওয়েব পোর্টাল।

1 Trackbacks & Pingbacks

  1. Visit Website

Comments are closed.